পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২o বিভূতি-রচনাবলী অপর গলায় যেন একটা ডেলা আটকাইয়া গেল । সে যতদর সম্ভব সহজ সরে বলিল --এ ধরণের কথা সে এ পয্যন্ত কোনো দিন লীলার কাছে বলে নাই, কোনো দিন না— দাখো লীলা, অন্য লোকের কথা জানি নে, তবে আমার কথা শুনবে ? আমি তোমাকে আমার চেয়ে অনেক বড় তো ভাবিই - অনেকের চেয়ে বড় ভাবি—তোমাকে কেউ চেনে নি, চিনলে না, এই কথা ভাবি । - আজ নয় লীলা, এতটুকু বেলা থেকে তোমায় আমি জানি, অন্য লোক ভুল করতে পারে, কিন্তু আমি— লীলা যেন অবাক হইয়া গেল, কখনও সে এ রকম দেখে নাই অপকে । সে জিজ্ঞাসা করিতে যাইতেছিল—সত্যি বলছ ?—কিন্তু অপর মুখ দেখিয়া হয়ত বুঝিল প্রশ্নটা অনাবশ্যক। পরক্ষণেই খেয়ালী অপ আর একটা কাজ করিয়া বসিল-এটাও সে ইহার আগে কখনো করে নাই । লীলার খুব কাছে সরিয়া গিয়া তার ডান হাতখানা নিজের দ্যহাতের মধ্যে লইয়া লীলাকে নিজের দিকে টানিয়া তার মুখ ফিরাইল। পরে গভীর স্নেহে তার উত্তপ্ত ললাটে, কানের পাশের চন্ণ কুম্ভলে হাত বলাইতে বলাইতে দঢ়সবরে বলিল— তুমি আমি ছেলেবেলার সাথী, লীলা—আমরা কেউ কাউকে ভুলব না-কোনো অবস্থাতেই না। এতদিন ভুলি নি-ও কখনো লীলা । লীলার সারাদেহ শিহরিয়া উঠিল-“যাহা আজ অপর মুখে, কথার সরে ডাগর চোখের অকপট দটিতে পাইল-জীবনে কোনোনি কাহারও কাছ হইতে তাহা সে কখনও পায় নাই—আজ সে দেখিল আপকে চিরকাল ভালবাসিয়া আসিয়াছে--বিশেষ করিয়া অপর মাতৃবিয়োগের পর লালদীঘির সামনের ফুটপাতে তাকে ধেদিন শ, কমখে নিরাশ্রয় ভাবে বেড়াইতে দেখিয়াছিল—সেদিনটি হইতে । " ' .অপর চমক ভাণ্ডিল -লীলা কখন তাহার বক্ষে মুখ ল;কাইয়াছিল তাহার অশ্রপ্লাবিত পান্ডুর মুখখানি।“ অপ বাহিরে চলিয়া আসিল সে অনুভব করিতেছিল, লীলার মত সে কাহাকেও ভালবাসে না—সেই গভীর অনকৈ-পামিশ্রিত ভালবাসা, যা মানুষকে সব ভুলাইয়া দেয়, আত্মবিসর্জনে প্রণোদিত করে । লীলাকে যে করিয়া হউক সে সখী করবে। লীলাকে এতটুকু কণ্টে পড়িতে দিবে না, নিজেকে ছোট ভাবিতে দিবে না। যাহার ইচ্ছা লীলাকে ছাড়ক, সে লীলাকে ছাড়িতে পারবে না। সে লীলাকে কোথাও লইয়া যাইবেই—এ অবস্থায় কলিকাতায় থাকিলে লীলা বাঁচবে না। বিশ্ব একদিকে-লীলার মাখের অনুরোধ আর একদিকে । সারাপথ ভাবিতে ভাবিতে ফিরিল। দিন তিনেক পরে । বেলা আটটা। অপর সকালে স্থানান সারিয়া কাজলকে সঙ্গে করিয়া বেড়াইতে বাহির হইবে -এমন সময়ে মিঃ লাহিড়ীর ছোট নাতি অরণ ঘরে ঢুকিল ৷ এককোণে ডাকিয়া লইয়া চুপি চুপি উত্তেজিত সরে বলিল—শিগগির আসন, দিদি কাল রাত্রে বিষ খেয়েছে। বিষ । সৎবনাশ !-লীলা বিষ খাইয়াছে ! " কাজলকে কি করা যায় ?--খোকা তুই—বরং-ঘরে থাক একা। আমি একটা কাজে যাচ্ছি। দেরি হবে ফিরতে । কিন্তু কাজলের চোখে ধলা দেওয়া অত সহজ নয় । কেন বাবা ? কি কাজ ? কোথায় ? কত দেরি হইতে পারে ?--কোনোমতে ভুলাইয়া তাহাকে রাখিয়া দুজনে ট্যাক্সি ধরিয়া লীলার বাসায় আসিল । আরও দখানা মোটর দাঁড়াইয়া আছে ! ঢুকিতেই লীলাদের বাড়ির ডাক্তার