পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ১২১ বন্ধ কেদারবাবরে সঙ্গে দেখা। অরণ ব্যস্তসমস্ত ভাবে জিজ্ঞাসা করিল—কি অবস্থা এখন ? কেদারবাব বলিলেন--অবস্থা তেমনি। আর একটা ইনজেকশ্যন করেছি। হিলাকক সাহেব এলে যে বাবতে পারি। অপর প্রশ্নের উত্তরে বলিলেন—বন্ড স্যাড ব্যাপার - বন্ড স্যাড । জিনিসটা ? : মরফিয়া । রাত্রে কখন খেয়েছে, তা তো বোঝা যায় নি, আজ সকালে তাও বেলা হলে তবে টের পাওয়া গেল । কণে’ল হিলকককে আনতে লোক গিয়েছে —তিনি না আসা পয*্যন্ত— অরণের সঙ্গে সঙ্গে উপরের সেই ঘরটাতে গেল-মাত্র দিন তিনেক আগে যেটাতে বসিয়া সে লীলাকে গান শনাইয়া গিয়াছে। প্রথমটা কিন্তু সে ঘরে ঢুকিতে পারিল না, তাহার হাত কাঁপিতেছিল, পা কপিতেছিল । ঘরটা অন্ধকার, জানালার পদাগলো বন্ধ, ঘরে বেশী লোক নাই, কিন্তু বারান্দাতে আট-দশজন লোক । সবাই পদ্মপুকুরের বাড়ির – সবাই চুপি চুপি কথা কহিতেছে, পা টিপিয়া টিপিয়া হটিতেছে। কিছু বিশেষ অস্বাভাবিক ব্যাপার ঘটিয়াছে এখানে এমন বলিয়া কিন্তু অপর মনে হইল না। অথচ একজন—যে পথিবীর সুখকে এত ভালবাসিত, আকাঙ্ক্ষা করিত, আশা করিত—উপেক্ষায় মুখ বাঁকাইয়া পৃথিবী হইতে ধীরে ধীরে বিদায় লইতেছে। 颯 সেদিনকার সেই জানালার পাশের খাটেই লীলা শ্যইয়া । সংজ্ঞা নাই, পাডুর, কেমন যেন বিবণ—ঠোঁট ঈষৎ নীল। একখানা হাত খাটের বাহিরে ঝুলিতেছিল সে তুলিয়া দিল । গায়ে রেশমের বরফি-কাটা বিলাতী লেপ । কি অপবে যে দেখাইতেছে লীলাকে ! মরণাহত মৃত্যুপণ্ডির মখের সৌন্দয্য যেন এ পথিবীর নয় কিংবা হরিদ্রাভ হাতীর দাঁতের খোদাই মুখ যেন । দেবীর মত সৌন্দযf্য আরও“অপাথিবি হইয়া উঠিয়াছে। তাহার মনে হইল লীলা ঘামিতেছে । তবে বোধ হয় আর ভয় নাই, বিপদ কাটিয়া গিয়াছে। চুপি চুপি বলিল—ঘামছে কেন ? ডাক্তারবাবু বলিলেন-ওটা মরফিয়ার সিমটম । মিনিট-দশ কাটিল । অপর বাহিরের বারান্দাতে আসিয়া দাঁড়াইল । পাশের ঘরে লোকেরা একবার ঢুকিতেছে, আবার বাহির হইতেছে, অনেকেই আসিয়াছে, কেবলমিঃ লাহিড়ী ও লীলার মা নাই । মিঃ লাহিড়ী দাeিজলিং-এ, লীলার মা মাত্র কাল এখান হইতে বন্ধমানে কি কাজে গিয়াছেন। লীলা সতাই অভাগিনী ! এমন সময় নীচে একটা গোলমাল । একখানা গাড়ির শব্দ উঠিল । ডাক্তার সাহেব আসিয়াছেন—তিনি উপরে উঠিয়া আসিলেন, পিছনে কেদারবাব, ও বিমলেন্দ । অনেকেই ঘরে ঢুকিতে যাইতেছিল, কেদারবাব নিষেধ করিলেন। মিনিট সাতেক পরে ডাক্তার সাহেব চলিয়া গেলেন। বলিয়া গেলেন--Too late, কোনও আশা নাই । আরও আধঘণ্টা। এত লোক –আপ ভাবিল, ইহারা এতকাল কোথায় ছিল ? আজ too late 1 Too late 1 লীলা মারা গেল বেলা দশটায় । অপু তখন খাটের পাশেই দাঁড়ায়া । এতক্ষণ লীলা চোখ বজিয়াই ছিল, সে সময়টা হঠাৎ চোখ মেলিয়া চাহিল—তারাগলা বড় বড়, তাহার দিকেও চাহিল, অপর দেহে যেন বিদ্যুৎ খেলিয়া গেল—লীলা তাহাকে চিনিয়াছে বোধ হয়। - কিন্তু পরক্ষণেই দেখিল—দটি অথহীন, আভাহীন, উদাসীন, অস্বাভাবিক । তারপরই লীলা যেন চোখ তুলিয়া কাঁড়কাঠে, সেখান হইতে আরও অস্বাভাবিকভাবে মাথার শিয়রে কানিসের বিটের দিকে ইচ্ছা করিয়াই কি দেখিবার জন্য চোখ ঘরাইল-স্বাভাবিক অবস্থায় মানুষ ওরকম চোখ ঘরাইতে পারে না । তারপরেই সবাই ঘরের বাহির হইয়া আসিল । কেবল বিমলেন্দ ছেলেমানষের মত