পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SՀ8 বিভূতি-রচনাবলী --মুশকিল। তুমি ছেলেমানষে কি করবে ? হাসপাতালে দিতে হবে তা হলে, দেখি আজ রাতটা— কাজলের প্রাণ উড়িয়া গেল। হাসপাতাল । সে শনিয়াছে সেখানে গেলে মালযে আর ফেরে না ! বাবার অসুখ কি এত বেশী যে, হাসপাতালে পাঠাইতে হইবে ? ডাক্তার চলিয়া গেল। বাবা শইয়া আছে—শিয়রের কাছে আধভাঙা ডালিম, গোটাকতক লেবর কোয় । পালংশাকের গোড়া বাবা খাইতে ভালবাসে, বাজার হইতে সেদিন পালংশাকের গোড়া আনিয়াছিল, ঘরের কোণে চুপড়িতে শকাইতেছে—বাবা যদি আর না ওঠে ? না রাধে ? কাজলের গলায় কিসের একটা ডেলা ঠেলিয়া উঠিল। চোখ ফাটিয়া জল আসিল--ছোট বারান্দাটার এক কোণে গিয়া সে আকুল হইয়া নিঃশব্দে কাঁদিতে লাগিল । ভগবান বাবাকে সারাইয়া তোল, পালংশাকের গোড়া বাবাকে খাইতে না দেখিলে সে বক ফাটিয়া মরিয়া যাইবে—ভগবান বাবাকে ভাল করিয়া দাও । মেঝেতে তাহার পড়িবার মাদ রটা পাতিয়া সে শ,ইয়া পড়িল । ঘরে লন্ঠনটা জালিয়া রাখিল—একবার নড়িয়া দেখিল কতটা তেল আছে, সারারাত জলিবে কি না । অন্ধকারে তাহার বড় ভয়—বিশেষ বাবা আঙ্গু নড়ে না, চড়েনা, কথাও বলে না। দেয়ালে কিসের সব যেন চ্ছায়া ! কাজল চক্ষ বাজিল । মাস দেড় হইল অপসারিয়া উঠিয়াছে । হাসপাতালে যাইতে হয় নাই, এই গলিরই মধ্যে বড়িয্যেরা বেশ সঙ্গতিপন্ন গহস্থ, তাঁহাদের এক ছেলে ভাল ডাক্তার। তিনি অপর বাড়ি.ওয়ালার মুখে সব শনিয়া নিজে দেখিতে মাসেন—ইনজেকশনের ব্যবস্থা করেন, শাশ্রষার লোক দেন, কাজলকে নিজের বাড়ি হইতে খাওয়াইয়া আনেন। উহাদের বাড়ির সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ আলাপ হইয়া গিয়াছে । চৈত্রের প্রথম । চাকুরি অনেক খুজিয়াও মিলিল না । তবে আজকাল লিখিয়া কিছ আয় হয় । সকালে একদিন আপ মেঝেতে মাদর পাতিয়া বসিয়া বসিয়া কাজলকে পড়াইতেছে, একজন কুড়ি-বাইশ বছরের চোখে-চশমা ছেলে দোয়ের কাছে আসিয়া দাঁড়াইয়া বলিল -আজে আসতে পারি ? —আপনারই নাম অপর্বে বাবা ? নমস্কার— —আসন, বসন বসন । কোথেকে আসছেন ? —আজ্ঞে, আমি ইউনিভাসিটিতে পড়ি । আপনার বই পড়ে আপনার সঙ্গে দেখা করতে এলম। আমার অনেক বন্ধ:বান্ধব সবাই এত মুগ্ধ হয়েছে, তাই আপনার ঠিকানা নিয়ে— আপন খাব খুশী হইল—বই পড়িয়া এত ভাল লাগিয়াছে যে, বাড়ি খ:জিয়া দেখা করিতে আসিয়াছে একজন শিক্ষিত তরণে যুবক ! এ তার জীবনে এই প্রথম । ছেলেটি চারিদিকে চাহিয়া বলিল-আজ্ঞে, ইয়ে, এই ঘরটাতে আপনি থাকেন বঝি ? অপর একটু সংকুচিত হইয়া পড়িল, ঘরের আসবাবপত্র অতি হীন, ছোঁড়া মাদরে পিতাপত্রে বসিয়া পড়িতেছে। খানিকটা আগে কাজল ও সে দজনে মাড়ি খাইয়াছে, মেঝের খানিকটাতে তার চিহ্ন। সে ছেলের ঘাড়ে সব দোষটা চাপাইয়া দিয়া সলজ সরে বলিল— তুই এমন দুষ্ট হয়ে উঠেছিস খোকা, রোজ রোজ তোকে বলি খেয়ে অমন করে ছড়াবি নে— তা তোর-—আর বাটিটা অমন দোরের গোড়ায়— কাজল এ অকারণ তিরস্কারের হেতু না বুঝিয়া কাঁদ-কাঁদ মুখে বলিল-আমি কই বাবা, তুমিই তো বাটিটাতে মাড়ি— —আচ্ছা, আচ্ছা, থাম, লেখ, বানানগুলো লিখে ফেল ।