পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০ সে আশাহত, ভগ্নোদ্যম, নিবাপিত অপ। কিন্তু এখানেই অপরাজিতে’র শেষ নয়। ‘অপরাজিত" যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে আর একটি ‘তরণে গরুড়’ দ,দমনীয় কৌতুহলে বড় বড় চোখ মেলে নিশ্চিদিপরের অপদের পরিত্যক্ত ভিটের উপর দড়িয়ে ঝিকড়ে গাছের ঘন ডালপালার দিকে তাকিয়ে আছে। এক ঝলক হাওয়া পাশের পোড়ো ঢিবিটার দিক থেকে নবাগত শিশর জন্য অভিনন্দন নিয়ে এল । সঙ্গে সঙ্গে ভিটের মালিক ব্রজ চকুবতী, ঠ্যাঙাড়েবীর রায়, ঠাকুরদাদা হরিহর রায়, ঠাকুরমা সবজিয়া, পিসিমা দাগা—জানা অজানা সমস্ত পবপরষ প্রসন্ন হাসিতে শিশকে অভ্যর্থনা করে বলল—এই তুমি আমাদের হয়ে ফিরে এসেছ, আমাদের সকলের প্রতিনিধি যে আজ তুমি । অপর আশাহত জীবন দিয়ে 'অপরাজিত শেষ হয় নি, শেষ হয়েছে নবাগত শিশর অভ্যর্থনায় । অপ ফুরিয়ে গেছে কিন্ত তার জীবন থেকে জলে উঠেছে আর একটি জীবন। এতেই অপর জয় । সে পেরেছে নিজের মধে, কপেনাবিলাসী, ভাববিহল মনকে আর একটি জীবনের মধ্যে সঞ্চারিত করে দিতে । কাজল-ই পরাজিত-পরাভূত-নিবাপিত অপর জয়পতাকা । অপর পথের শেষ এইখানে । কিন্তু পথ এগিয়ে চলেছে নবাগত পথিককে নিয়ে। এই নতুন পথচারীকে দেখিয়ে পথের দেবতার উদ্দেশে অপ বলতে পারে— কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি । সকল খেলায় করবে খেলা এই আমি— নতুন নামে ডাকবে মোরে, বধিবে নতুন বাহ ডোরে, আসব যাব চিরদিনের সেই আমি । [ ህ ! বৃহৎ সন্টির উদ্বৃত্ত রং-তুলি দিয়ে অমনোযোগে ও অবহেলায় যেন কেদার রাজা’-র সটি । লেখকের মনোযোগ যেন অন্যত্র ; ঘটনার জটিলতায় জড়িয়ে না পড়ে, চরিত্রের গভীরে প্রবেশ না করে কোনোক্ৰমে গল্পটি দাঁড় করিয়ে দিতে পারলেই যেন তিনি দায়মুক্ত হন। কেদার রাজা" যে-অবস্হায় ছাপা হয়েছে সেটা একমেটে। দোমেটে হলেও যে জৌলস বাড়ত এমন নয়, তবে ভিতরের খড়-কুটো হয়ত ঢাকা পড়ত। বইখানির আদিতে গ্রাম্য জীবনের প্রসন্নতা, মধ্যে নাগর জীবনের বীভৎসতা, অস্ত্যে অতিপ্রাকৃত। দটি জীবন, একটি ভালো আর একটি মন্দ, সাদা-কালো দটি রেখার মত সমান্তরাল বয়ে গেছে । শেষে অতিপ্রাকৃতের আশ্রয়ে কাহিনী সমাপ্ত হয়েছে। উপন্যাসখানি ঘটনাপ্রধান, কিন্ত ঘটনাসটিতেও মৌলিকত্ব নেই, ঘটনাবিন্যাসেও চমৎকারিত্ব নেই । চরিত্রগুলিও রক্ত-মাংসের মানুষ নয়, লাল নীল কাগজের তৈরী। বইখানির যেটুকু প্রশংসনীয় তা লেখকের পরবরচনার পুনরাবৃত্তি । পরাক্লমশালী রাজবংশের দরিদ্র অধস্তন কেদার বিষয়বধিহীন, আত্মভোলা বাউল । কেদারের সন্দরী বিধবা যাবতী কন্যা শরৎ তরণী ধরিত্রীর মতই পবিত্রতা এবং সরলতার জ্যোতিতে বিভাসিত। শহরের দটি দবত্তের কৌশলে এই পিতা-পত্রেীর জীবনে যে দযোগ এসেছিল কেদার রাজা’-য় সে কাহিনী বিবত হয়েছে। লেখক ধরে নিয়েছেন বাংলাদেশের পল্পীজীবন তপোবনের জীবন। প্রকৃতির আশ্রয়ে প্রতিপালিত কেদার-শরতের জীবনও তপোবনবাসীর মত,সরল। কিন্ত লেখক একথা মনে করে ভুল করেছেন যে, সরলতা নিবন্ধিতার নামান্তর। তপোবনবাসীরাও নিবোধ ছিলেন না, বাংলার পল্লীবাসীরাও নিবোধ নয়। কেদার-শরতের নিবন্ধিতাকে মুলধন করে