পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ჯტo বিভূতি-রচনাবলী মানুষ নয়, লেখাপড়া শেখে নাই, গ্রামে মদির দোকান করে, পৈতৃক সম্পত্তি একে একে বেচিয়া খাইতেছে—তাহার উপর দুইটি বিবাহ করিয়াছে, একরাশ ছেলেপিলে । তাহার নিজেরই চলে না, লীলা সেখানে আর কি করিয়া থাকে । অপর বলিল—দটো বিয়ে কেন ? —পেটে বিদ্যে না থাকলে যা হয়। প্রথম পক্ষের বৌয়ের বাপের সঙ্গে কি ঝগড়া হ’ল, তাকে জব্দ করার জন্যে আবার বিয়ে করলে। এখন নিজেই জাদ হচ্ছেন, দই বেী ঘাড়ে— তার ওপর দুই বোয়ের ছেলেপিলে । তার ওপর রাণীও ওখানেই কিনা ! —রাণ দি ? ওখানে কেন ? —তারও কপাল ভাল নয় । আজ বছর সাত-আট বিধবা হয়েছে, তার আর কোনও উপায় নেই, সতুর সংসারেই আছে। বশরবাড়িতে এক দেওর আছে, মাঝে মাঝে নিয়ে যায়, বেশির ভাগ নিশ্চিন্দিপরেই থাকে। অপর অনেকক্ষণ ধরিয়া রাণাদির কথা জিজ্ঞাসা করিবে ভাবিতেছিল, কিন্তু কেন প্রশ্নটা করিতে পারে নাই সে-ই জানে। লীলার কথায় পরে অপ অন্যমনস্ক হইয়া গেল। হঠাৎ লীলা বলিল—দ্যাখ ভাই অপ, নিশ্চিশিদপুরের সেই বাঁশবাগানের ভিটে এত মিটি লাগে, কি মধ্য যে মাখানো ছিল তাতে ! ভেবে দ্যাখ, মা নেই,বাবা নেই, কিছ তো নেই—তবুও তার কথা ভাবি । সেই বাপের ভিটে আজ দেখি নি এগারো বছর। সেবার সতুকে চিঠি লিখলাম, উত্তর দিলে এখানে কোথায় থাকবে, থাকবার ঘরদের নেই, পাবের দালান ভেঙে পড়ে গিয়েছে, পশ্চিমের কুঠুরী দটোও নেই, ছেলেপিলে কোথায় থাকবে,—এই সব একরাশ ওজর ৷ বলি থাক তবে, ভগবান যদি মুখ তুলে চান কোনদিন, দেখব—নয় তো বাবা বিশ্বনাথ তো চরণে রেখেইছেন— আবার লীলা ঝরঝর করিয়া কাঁদিয়া ফেলিল । অপ বলিল, ঠিক বলেছ লীলাদি, আমারও গায়ের কথা এত মনে পড়ে। সত্যিই, কি মধমাখানো ছিল, তাই এখন ভাবি ৷ লীলা বলিল, পদমপাতায় খাবার খাস নি কতদিন বল দিকি ? এ সব দেশে শালপাতায় খাবার খেতে খেতে পদমপাতার কথা ভুলেই গিয়েছি, না ? আবার এক একদিন এক একটা দোকানে কাগজে খাবার দেয় ! সেদিন আমার মেজ ছেলে এনেছে, আমি বলি দর দর, ফেলে দিয়ে আয়, কাগজে আবার মিটি খাবার কেউ দেয় আমাদের দেশে ? অপর সারা দেহ মতির পলিকে যেন অবশ হইয়া গেল। লীলাদি মেয়েমানুষ কিনা, এত খুটিনাটি জিনিসও মনে রাখে । ঠিকই বটে, সেঞ্চ পদের পাতায় কতকাল খাবার খায় নাই, ভুলিয়াই গিয়াছিল কথাটা । তাহাদের দেশে বড় বড় বিল, পদমপাতা সস্তা, শালপাতার রেওয়াজ ছিল না । নিমন্ত্রণ বাড়িতেও পদপাতাতে ব্রাহ্মণভোজন হইত, লীলাদির কথায় আজ আবার সব মনে পড়িয়া গেল। লীলা চোখ মছিয়া জিজ্ঞাসা করিল,—তুই কতদিন যাস নি সেখানে অপ ? তেইশ বছর ? কেন, কেন ? আমি না হয় মেয়েমানুষ—তুই তো ইচ্ছে করলেই যেতে— —তা নয় লীলাদি, প্রথমে ভাবতুম বড় ইয়ে যখন রোজগার করব, মাকে নিয়ে আবার নিশ্চিন্দিপুরের ভিটেতে গিয়ে বাস করব, মার বড় সাধ ছিল । মা মারা যাওয়ার পরেও ভেবেছিলাম, কিন্তু তার পরে—ইয়ে— গ্রীবিয়োগের কথাটা অপ বয়োজ্যেষ্ঠা লীলাদ্রির নিকট প্রথমটা তুলিতে পারিল না। পরে বলিল । লীলা বলিল, বোঁ কতদিন বেচে ছিলেন ? অপ লাজক সরে বলিল—বছর চারেক—