পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sలిసి বিভূতি-রচনাবলী মেজ-বৌরানী বলিলেন—মেয়ে তো ভাল, কিন্তুবাবা, ওর কি আর বিয়ে দিতে পারব ? ওর নার কথা যখন সকলে শনবে—আর তা না জানে কে—ওই মেয়ের কি আর বিয়ে হবে বাবা ? অপর দন্দ'মনীয় ইচ্ছা হইল একটি কথা বলিবার জন্য—সেটা কিন্তু সে চাপিয়া রাখিল । মুখে বলিল—দেখন, বিয়ের জন্য ভাবচেন কেন ? লেখাপড়া শিথকে, বিয়ে নাই বা হ’ল, তাতে কি ? মনে ভাবিল—এখন সে কথা বলব না, খোকা যদি বাঁচে, মানুষ হয়ে ওঠে—তবে সে কথা তুলব। যাইবার সময় অপর লীলার মেয়েকে আবার কাছে ডাকিল। এবার খকেী তাহার কাছে ঘে"ষিয়া দাঁড়াইয়া ডাগর ডাগর উৎসক চোখে তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল । সেদিনের বাকী সময়টুকু অপ বন্ধর সঙ্গে সারনাথ দেখিয়া কাটাইল । সন্ধ্যার দিকে একবার কালীতলার গলিতে লীলাদির বাসায় বিদায় লইতে গেল—কালসকালেই এখান হইতে রওনা হইবে । নিশ্চিন্দিপুরের মেয়ে, শৈশব-দিনের এক সন্দের আনন্দ-মহমত্তে'র সঙ্গে লীলাদির নাম জড়ানো--বার বার কথা কহিয়াও যেন তাহার তৃপ্তি হইতেছিল না। আসিবার সময় অপর মুগ্ধ হইল লীলাদির আন্তরিকতা দেখিয়া । তাহাকে আগাইয়া দিতে আসিয়া সে নিচে নামিয়া আসিল, আবার চিবকে ছুইয়া আদর করিল, চোখের জল ফেলিল, যেন মা, কি মায়ের পটের বড় বোন । কতকগুলো কাঠের খেলনা হাতে দিয়া বলিল —খোকাকে দিস-তার জন্যে কাল কিনে এনেছি । অপু ভাবিল—কি চমৎকার মানুষলীলাদি !-“আহা পরের সংসারে কি কন্টটাই নাপাচ্ছে। মখে কিছু বললাম না—তোমায় আমি বাপের ভিটে দেখাব লীলাদি, এই বছরের মধ্যেই। ট্রেনে উঠিয়া সারাপথ কত কি কথা তাহার মনে যাওয়া-আসা করিতে লাগিল। রাজঘাটের স্টেশনে ট্রেনে উঠিল আজ কতকাল পরে ! বাল্যকালে এই স্টেশনেই সে প্রথম জলের কল দেখে, কাশী নামিয়াই ছটিয়া গিয়াছিল আগে জলের কলটার কাছে । চে'চাইয়া বলিয়াছিল, দেখো দেখো মা, জলের কল ॥—সে সব কি আজ ? আজ কতদিন হইতে সে আর একটি অদ্ভুত জিনিস নিজের মনের মধ্যে অনুভব করিতেছে, কি তীব্রভাবেই অনুভব করিতেছে ! আগে তো সে এরকম ছিল না ? অন্ততঃ এ ভাবে তো কই কখনও এর আগে—সেটা হইতেছে ছেলের জন্য মন-কেমন করা। কত কথাই মনে হইতেছে এই কয়দিনে—পাশের বাড়ির বড়িয্যে-গহিণী কাজলকে বড় ভালবাসে—সেখানেই তাহাকে রাখিয়া আসিয়াছে । কখনও মনে হইতেছে, কাজল যে দুটু ছেলে, হয়ত গলির মোড়ে দাঁড়াইয়া ছিল, কোনও বদমাইস লোকে ভুলাইয়া কোথায় লইয়া গিয়াছে কিংবা হয়ত চুপি চুপি বাড়ি হইতে বাহির হইয়া রাস্তা পার হইতে যাইতেছিল, মোটর চাপা পড়িয়াছে। কিন্তু তাহা হইলে কি বড়িয্যেরা একটা তার করিত না ? হয়ত তার করিয়াছিল, ভুল ঠিকানায় গিয়া পে'ছিয়াছে। উহাদের আলিসাবিহীন নেড়া ছাদে ঘড়ি উড়াইতে উঠিয়া পড়িয়া যায় নাই তৈা ? কিন্তু কাজল তো কখনও ঘড়ি ওড়ায় না ? একটু আনাড়ি, ঘড়ি ওড়ানো কাজ একেবারে পারে না । না—সে উড়াইতে যায় নাই, তবে হয়ত বড়িয্যেবাড়ির ছেলেদের দলে মিশিয়া উঠিয়াছিল, আশ্চৰ্য্য কি ! আর্টিস্ট বন্ধর কথার উত্তরে সে খানিকটা আগে বলিয়াছিল—সে জাভা, বালি, সমাত্রা দেখিবে, প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপপুঞ্জ দেখিবে, আফ্রিকা দেখিবে—ওদের বিষয় লইয়া উপন্যাস লিখিবে । সাহেবরা দেখিয়াছে তাদের চোখে—সে নিজের চোখে দেখিতে চায়, তার মনের রঙে কোন রঙ ধরায়—ইউগাণ্ডার দিকদিশাহীন তৃণভূমি, কেনিয়ার অরণ্য। বড়ো বেবন রাত্রে ককশ চীৎকার করবে, হায়েনা পচা জীবজন্তুর গন্ধে উন্মাদের মত আনন্দে হি-হুি করিয়া হাসিবে, দপরে অগ্নিবৰ্ষী খররৌদ্রে কপমান উত্তাপতরঙ্গমাঠে প্রাস্তরে,