পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

`ని8 বিভূতি-রচনাবলী ষাক তাহার অফুরন্ত ঐশ্বয্যের শেষ হইবে না। একটা গোল বিস্কুটের ঠোঙায় কড়ির রাশি রাখিয়া দিয়াছিল । সে ঠোঙাটা আবার তোলা থাকিত তাদের বনের ধারের দিকের ঘরটায় উচু কুলঙ্গিটাতে । তারপর নানা গোলমালে খেলাধুলায় অপর উৎসাহ গেল কমিয়া, তারপরই গ্রাম ছাড়িয়া উঠিয়া আসিবার কথা হইতে লাগিল। অপু আর একদিনও ঠোঙার কড়িগুলি লইয়া খেলা করিল না, এমন কি দেশ ছাড়িয়া চলিয়া আসিবার সময়েও গোলমালে, ব্যস্ততায়, প্রথম দর বিদেশে রওনা হইবার উত্তেজনার মহেন্ত্তে সেটার কথাও মনেও উঠে নাই । অত সাধের কড়িভড়া-ঠোঙাটা সেই কড়িকাঠের নিচেকার বড় কুলুঙ্গিটাতেই রহিয়া গিয়াছিল। তারপর অনেককাল পরে সে কথা অপর মনে হয় আবার । তখন অপণা মারা গিয়াছে। একদিন অন্যমনসকভাবে ইডেন গাডেনের কেয়াঝোপে বসিয়া ছিল, গঙ্গার ও-পারের দিকে সয্যাস্ত দেখিতে দেখিতে কথাটা হঠাৎ মনে পড়ে । আজও মনে হইল । কড়ির কোঁটা "একবার সে মনে মনে হাসিল-“বহনকাল আগে নিশ্চিন্ত হইয়া লুপ্ত হইয়া যাওয়া ছেলেবেলার বাড়ির উত্তর দিকের ঘরের কুলুঙ্গিতে বসানো সেই টিনের ঠোঙাটা ! —দরে সেটা যেন শুন্যে কোথায় এখনও বুলিতেছে, তাহার শৈশবজীবনের প্রতীকস্বরুপ--- অপস্ট, অবাস্তব, স্বপ্নময় ঠোঙাটা সে পল্ট দেখিতে পাইতেছে, পয়সায় চার গন্ডা করিয়া মাকড়সার ডিমের মত সেই যে ছোট ছোট বিস্কুট, তারই ঠোঙাটি–উপরে একটা বিবণ-প্রায় হা-করা রাক্ষসের মুখের ছবি•••দরের কোন কুলুঙ্গিতে বসানো আছে-“তার পিছনে বাঁশবন, শিমলবন, তার পিছনে সোনাডাঙার মাঠ, ঘুঘরে ডাক- তাদেরও পিছনে তেইশ বছর .আগেকার অপব্ব মায়ামাখানো নিঝুম চৈত্র-দপুরের রৌদ্রভরা নীলাকাশ ত্রয়োবিংশ পরিচ্ছেদ চৈত্র মাসের প্রথমে একটা বড় পাটিতে সে নিমন্ত্রিত হইয়া গেল। খুব বড় গাড়িবারাঙ্গদা, সামনের লনে ছোট ছোট টেবিল ও চেয়ার পাতা, খানিকটা জায়গা সামিয়ানা টাঙানো। নিমন্ত্রিত পরষ মহিলাগণ যাহার যেখানে ইচ্ছা বেড়াইতেছেন ! একটা মাবেলের বড় চৌবাচ্চায় গোটাকতক কুমদ ফুল, ঠিক মাঝখানে একটা মাবেলের ফোয়ারা—গহকত্রী তাহাকে লইয়া গিয়া জায়গাটা দেখাইলেন, সেটা নাকি তাঁদের লিলি পল্ড’। জয়পরে হইতে ফোয়ারাটা তৈয়ারী করাইয়া আনিতে কত খরচ পড়িয়াছে, তাহাও জানাইলেন। পাটি’র সকল আমোদ-প্রমোদের মধ্যে একটি মেয়ের কন্ঠ-সঙ্গীত সধবাপেক্ষা আনন্দদায়ক মনে হইল। ব্রিজের টেবিলে সে যোগ দিতে পারিল না, কারণ ব্রিজখেলা সে জানে না, গান শেষ হইলে খানিকটা বসিয়া বসিয়া খেলাটা দেখিল । চা, কেক, স্যান্ডউইচ, সন্দেশ, রসগোল্লা, গল্প-গজেব, আবার গান ! ফিরিবার সময় মনটা খুব খুশী ছিল। ভাবিল—এদের পাটিতে নেমস্তন্ন পেয়ে আসা একটা ভাগ্যের কথা । আমি লিখে নাম করেছি, তাই আমার হ’ল। যার তার হোক দিকি ? কেমন কাটল সন্ধ্যেটা । আহা, খোকাকে আনলে হ’ত, ঘুমিয়ে পড়বে এই ভয়ে আনতে সাহস হ’ল না যে —খান-দই কেক খোকার জন্য চুপিচুপি কাগজে জড়াইয়া পকেটে পরিয়া রাখিয়াছিল, খলিয়া দেখিল সেগুলি ঠিক আছে কি না। খোকা ঘামাইয়া পড়িয়াছিল, ডাকিয়া উঠাইতে গিয়া বলিল, ও খোকা, খোকা, ওঠ, খব ঘমেচ্ছিস যে—হি হি—ওঠ রে । কাজলের ঘমে ভাঙিয়া গেল। যখনই সে বোঝে বাবা আদর করিতেছে, মুখে কেমন ধরণের মধর দৃষ্টামির হাসি হাসিয়া ঘাড় কাৎ করিয়া কেমন