পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ఏ&రి কুকিয়া পড়িয়াছে । কোনও ঘরের চিহ্ন নাই, বন জঙ্গল, রাঙা রোদ বাঁশের মগডালে । পশ্চিমের পাচিলের গায়ে সেই কলঙ্গিটা আজও আছে, ছেলেবেলায় যে কলঙ্গিটাতে সে ভাঁটা, বাতাবীলেবর বল, কড়ি রাথিত । এত নিচু কলঙ্গিটা তখন কত উচু বলিয়া মনে হইত, তাহার মাথা ছাড়াইয়া উ"চু ছিল, ডিঙ্গাইয়া দাঁড়াইলে তবে নাগাল পাওয়া যাইত ঠেসদেওয়ালের গায়ে ছুরি দিয়া ছেলেবেলায় একটা ভুত অকিয়াছিল, সেটা এখনও আছে । পাশেই নীলমণি জ্যাঠামশায়ের পোড়োভিটা—সেও ঘন বনে ভরা, চারিধার নিঃশব্দ, নিউজ’ন—এ পাড়াটাই জনহীন হইয়া গিয়াছে, এধার দিয়া লোকজনের যাতায়াত বড় কম । এই সে স্হানটি, কতকাল আগে যেখানে দিদি ও সে একদিন চড়ুইভাতি করিয়াছিল ৷ কণ্টকাকীর্ণ শেয়াকল বনে দগম দাভেদ্য হইয়া পড়িয়াছে সারা জায়গাটা ! পোড়ো ভিটার সে বেলগাছটাএকদিন যার তলায় ভীমদেব শরশয্যা পাতিতেন তাহার নয় বৎসরের শৈশবে—সেটা এখনও আছে, পপিত শাখা-প্রশাখার অপব্ব সবাসে অপরাহ্লের বাতাস স্নিগ্ধ করিয়া তুলিয়াছে। পাচিলের ঘলঘলিটা কত নিচু বলিয়া মনে হইতেছে, এইটাতেই অপু আশ্চয্য হইল— বার বার কথাটা তার মনে হইতেছিল। কত ছোট ছিল সে তখন ! খোকার মত অতটুক বোধ হয় । 䲁 彰 কাঁচাকলায়ের ডালের মত সেই কি লতার গন্ধ বাহির হইতেছে ! কতদিন গন্ধটা মনেছিল না, বিদেশে আর সব কথা হয়ত মনে পড়িতে পারে, কিন্ত পরাতন দিনের গন্ধগলি তো মনে পড়ে না ! এ অভিজ্ঞতাটা অপর এতদিন ছিল না। সেদিন বাঁওড়ের ধারে বেড়াইতে গিয়া পাকা বটকলের গন্ধে অনেকদিনের একটা সমতি মনে উদয় হইয়াছিল—ছোট্ট কাচের পরকলা বসানো মোমবাতির সেকেলে লন্ঠন হাতে তাহার বাবা শশী যোগীর দোকানে আলকাতরা কিনিতে আসিয়াছে—সেও আসিয়াছে বাবার কাঁধে চড়িয়া বাবার সঙ্গে—কাচের লন্ঠনের ক্ষীণ আলো, আধ-অম্লধকার বাঁশবন, বাঁওড় হইতে নাল ফুল তুলিয়া বাবা তাহার হাতে দিয়াছে—কোন শৈশবের অস্পষ্ট ছবিটা, অবাস্তব, ধোঁয়া-ধোঁয়া ! পাকা বটফলের গন্ধে কতকাল পরে তাহার সেই অত্যন্ত শৈশবের একটা সন্ধ্যা আবার ফিরিয়ে আসিয়াছিল সেদিন । পোড়োভিটার সীমানায় প্রকাণ্ড একটা খেজর গাছে কাদি কীিদ ডাশা খেজর ঝুলিতেছে —এটা সেই চারা খেজুর গাছটা, দিদি যার ডাল কাটারি দিয়া কাটিয়া গোড়ার দিকে দড়ি বধিয়া খেলাঘরের গর করিত—কত বড় ও উচু হইয়া গিয়াছে গাছটা ! এইখানে খিড়কীদোরটা ছিল; চিহ্নও নাই কোনও । এইখানে দাঁড়াইয়া দিদির চুরি-করা সেই সোনার কোঁটাটা ছড়িয়া ফেলিয়া দিয়াছিল একদিন । কত সপরিচিত জিনিস এই দীঘপ"চিশ বছর পরে আজও আছে । রাঙী গাইয়ের বিচালি খাওয়ার মাটির নাদাটা কাঁঠালতলায় বাঁশপাতা ও মাটি বোঝাই হইয়া এখনও পড়িয়া আছে । ছেলেবেলায় ঠেসদেওয়াল গাঁথার জন্য বাবা মজর দিয়া এক জায়গায় ইট জড় করিয়া রাখিয়াছিলেন “অথৰ্ণভাবে গাঁথা হয় .নাই । ইটগলো এখনও বাঁশবনের ছায়ায় তেমনি পড়িয়া আছে। কতকাল আগে মা তাকের উপর জলদানে-পাওয়া মেটে কলসী তুলিয়া রাখিয়াছিল, সংসারের প্রয়োজনের জন্য—পড়িয়া মাটিতে অঙ্খ"প্রোথিত হইয়া আছে । সকালের অপেক্ষা সে যেন অবাক হইয়া গেল পাঁচিলের সেই ঘলঘলিটা আজও নতুন, অবিকৃত অবস্থায় দেখিয়া—বলিচুন একটুও খসে নাই, যেন কালকের তৈরী—এই জঙ্গল ও ধবংসস্তাপের মধ্যে কি হইবে ও কুলুঙ্গিতে ? খিড়কাঁদোরের পাশে উচু জমিটাতে মায়ের হাতে পোতা সজনে গাছ এখনও আছে। যাইবার বছরখানেক আগে মার মা ডালটা পতিয়াছিল—এই দীঘ সময়ের মধ্যে গাছটা