পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫৬ বিভূতি-রচনাবলী হইয়াছিল বলিয়াই আজ সে যাহা পাইয়াছে—এখানে পৈতৃক জমিজমার মালিক হইয়া নিভাবনায় বসিয়া থাকিলে তাহা পাইত না। আজ যদি সে বিদেশে যায়, সমুদ্রপারে যায়— যে চোখ লইয়া সে যাইবে, মিশ্চিন্দিপুরে গত প'চিশ বৎসর নিক্ৰিয় জীবন যাপন করুিলে সে চোখ খলিত না । একদিন নিশ্চিন্দিপুরকে যেমন সে সুখ-দঃখ দ্বারা অর্জন করিয়াছিল —আজ তেমনি সুখ-দুঃখ দিয়া বাহিরকে অজ’ন করিয়াছে । নদীতে গা ধইতে গিয়া নিস্তবধ সন্ধ্যায় এই সব কথাই সে ভাবিতেছিল । সারাদিনটা আজ গমট গরম, প্রতিপদ তিথি—কাল গিয়াছে পণিমা। আজ এখনি জ্যোৎসনা উঠিবে। এই নদীতে ছেলেবেলায় যে-সব বধরো জল লইতে আসিত, তারা এখন প্রৌঢ়া, কত নাইও—মরিয়া হাজিয়া গিয়াছে, যে-সব কোকিল সেই ছেলেবেলাকার রামনবমী দিনের পলক-মহত্তেগুলি ভরাইয়া দপতরে কু কু ডাক দিত, কচিপাতা-ওঠা বাঁশবনে তাদের ছেলেমেয়েরা আবার তেমনি গায় । শধ তাহার দিদি শইয়া আছে। রায়পাড়ার ঘাটের ওধারে ওই প্রাচীন ছাতিম গাছটার তলায় তাহাদের গ্রামের মশান, সেখানে । সে-দিদির বয়স আর বাড়ে নাই, মুখের তারণ্যে বিলুপ্ত হয় নাই—তার কাচের চুড়ি, নাটাফলের পটুলি অক্ষয় হইয়া আছে এখনও । প্রাণের গোপন অন্তরে যেখানে অপর শৈশবকালের কাঁচা শিশুমনটি প্রবন্ধ জীবনের শত জ্ঞান অভিজ্ঞতা, উচ্চাশা ও কম"তুপের নিচে চাপা পড়িয়া মরিয়া আছে—সেখানে সেচিরবালিকা, শৈশব-জীবনের সে সমাধিতে জনহীন অন্ধকার রাত্রে সে-ই আসিয়া নীরবে চোখের জল ফেলে –শিশর প্রাণের সাথীকে আবার খাজিয়া ফেরে। আজ চব্বিশ বৎসর ধরিয়া’সঝি-সকালে তার আশ্রয়স্হানটিতে সোনার সমযf্যাকরণ পড়ে । বষাকালের নিশীথে মেঘ ঝর-ঝর জল ঢালে, ফালগন দিনে ঘে'টফুল, হেমন্ত দিনে ছাতিমফুল ফোটে । জ্যোৎসনা উঠে । কত পাখি গান গায় । সে এ সবই ভালবাসিত । এ সব ছাড়িয়া যাইতে পারে নাই কোথাও । পঞ্চবিংশ পরিচ্ছেদ জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে সে একবার কলিকাতায় আসিল—ফিরিতে কুড়ি-পাঁচশ দিন দেরি হইয়া গেল-আষাঢ় মাসের শেষ, বর্ষর্ণ ইতিমধ্যে খুব পড়িয়াছিল, সম্প্রতি দু-একদিন একটু ধরণ, কখনও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, দিন ঠান্ডা, কোনদিন বা সারাদিন খর রৌদ্র – - এই ক'দিনে দেশের চেহারা বদলাইয়াছে, গাছপালা আরও ঘন সবুজ, উঁচু গাছের মাথা হইতে কাঁচ মাকাললতা লম্বা হইয়া ঝুলিয়া পড়িয়াছে—বাল্যের অতীব পরিচিত দশ্য, এখনও বউ-কথা-কও ডাকে, কিন্ত কোকিল ও পাপিয়া আর নাই—এখনও বনে সোঁদালি ফুলের ঝাড় অজস্ৰ, কচি পটপটি ফলের থোলো বধিয়াছে গাছে গাছে—কটুগন্ধ ঘে'টকোল রোজ বেলাশেষে কোন ঝোপঝাপের অন্ধকারে ফোটে, ঘাটের পথে ফিরিবার সময় মেয়েরা নাকে কাপড় চাপা দেয়—কি পরিচিত, কি অপবে ধরণের পরিচিত সবই, অথচ বেমালম ভুলিয়া গিয়াছিল সবটা এতদিন । বাহিরের মাঠ সবজে হইয়াছে নবীন আউশ ধানে—এই সময় একদিন সে সম্পণ অপ্রত্যাশিতভাবে আর একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা লাভ করিল। খব রৌদ্র, দপরে ঘরিয়া গিয়াছে, বেলা তিনটার কম নয়, অপ, কি কাজে গ্রামের পিছনদিকের বনের পথ ধরিয়া যাইতেছিল । দধারে বর্ষার বনঝোপ ঘন সবুজ, বশিবনে একটা