পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬২ বিভূতি-রচনাবলী ভিটাতেও বাজিল ? পজোর সময় বাবার খরচপত্র আসিত না, মা কত কস্ট পাইত—দিদির চিকিৎসা হয় নাই –সে সব কথা মনে আসিল কেন এখন ? অন্য সবাই উঠিয়া যায়। কাজল পড়িবার বই বাহির করে । রাণ রান্নাঘরে রাঁধে, কুটনো কোটে। অপরকে বলে—এইখানে আয় বসবি, পিড়ি পেতে দি— 竇 অপবলে, তোমার কাছে বেশ থাকি রাণ দি ! গায়ের ছেলেদের কথাবাত্তা ভাল লাগে না । রাণ বলে—দুটি মুড়ি মেখে দি—খা বসে বসে । দধটা জৰাল দিয়েই চা ক'রে দিচ্ছি । —রাণ দি সেই ছেলেবেলাকার ঘটিটা তোমাদের—না ? রাণ বলে—আমার ঠাকুরমা জগন্নাথ থেকে এনেছিলেন তাঁর ছেলেবয়সে । আচ্ছা অপম, দগগার মুখ তোর মনে পড়ে ? অপ হাসিয়া বলে—না রাণাদি । একটু যেন আবছায়া—তাও সত্যি কিনা বুঝিনে । রাণ দীঘ"বাস ফেলিয়া বলিল—আহা ! সব স্বপ্ন হয়ে গেল ! অপর ভাবে, আজ যদি সে মারা যায়, থোকাও বোধ হয় তাহার মুখ এমনি ভুলিয়া যাইবে । রাণীর মেয়ে বলিল—ও মামা, আমাদের বাড়ির ওপর দিয়ে আজ এইলোপেলেন গিইল । কাজল বলিল—হ’্যা বাবা, আজ দুপারে। এই তেতুল গাছের ওপর দিয়ে গেল । অপ বলিল—সত্যি রাগদি ? –হ’্যা তাই । কি ইংরেজি বুঝিনে—উড়ো জাহাজ যাকে বলে—কি আওয়াজটা — নিশ্চিন্দিপুরের সাত বছরের মেয়ে আজকাল এরোপ্লেন দেখিতে পায় তাহা হইলে ? পরদিন সন্ধ্যার পর জ্যোৎস্না-রাত্রে অভ্যাস মত নদীর ধারে মাঠে বেড়াইতে গেল । কতকাল আগে নদীর ধারের ওইখানটিতে একটা সাইবাবলাতলায় বসিয়া এইরকম বৈকালে সে মাছ ধরিত—আজকাল সেখানে সাইবাবলার বন, ছেলেবেলার সে গাছটা আর চিনিয়া লওয়া যায় না। ইছামতী এই চঞ্চল জীবনধারার প্রতীক । ওর দু’পাড় ভরিয়া প্রতি চৈত্র বৈশাথে কত বনকুসুম, গাছপালা, পাখি-পাখালী, গাঁয়ে গাঁয়ে গ্রামের হাট—শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরিয়া কত ফুল ঝরিয়া পড়ে, কত পাখির দল আসে যায়, ধারে ধারে কত জেলেরা জাল ফেলে, তীরবত্তীর্ণ গহ হবাড়িতে হাসি-কান্নার লীলাখেলা হয়, কত গহসহ আসে, কত গহস্হ যায়— কত হাসিমুখ শিশু মায়ের সঙ্গে নাহিতে নামে, আবার বন্ধাবস্হায় তাহদের নশ্বর দেহের রেণ কলম্বনা ইছামতীর স্রোতোজলে ভাসিয়া যায়—এমন কত মা, কত ছেলেমেয়ে, তরণতরণী মহাকালের বীথিপথে আসে যায়—অথচ নদী দেখায় শান্ত,সিন্ধ, ঘরোয়া, নিরীহ ।” আজকাল নিজনে বসিলেই তাহার মনে হয়, এই পৃথিবীর একটা আধ্যাত্মিক রূপ আছে, এর ফুলফল, আলোছায়ার মধ্যে জন্মগ্রহণ করার দরন এবং শৈশব হইতে এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের বন্ধনে আবদ্ধ থাকার দরুন, এর প্রকৃত রপটি আমাদের চোখে পড়ে না। এ আমাদের দশন ও শ্রবণগ্রাহ্য জিনিসে গড়া হইলেও আমাদের সম্পণে অজ্ঞাত ও ঘোর রহস্যময়, এর প্রতি রেণ যে অসীম জটিলতায় আচ্ছন্ন—যা কিনা মানুষের বন্ধি ও কল্পনার অতীত, এ সত্যটা হঠাৎ চোখে পড়ে না। যেমন সাহেব বন্ধটি বলিত, “ভারতবর্ষের একটা রূপ আছে, সে তোমরা জান না। তোমরা এখানে জন্মেছ কিনা, অতি পরিচয়ের দোষে সে চোখ ফোটে নি তোমাদের ” আকাশের রং আর এক রকম—দরের সে গহন হিরাকসের সমুদ্র ঈষৎ কৃষ্ণাভ হইয়া উঠিয়াছে—তার তলায় সারা সবুজ মাঠটা, মাধবপুরের বাঁশবনটা কি অপবে, অদ্ভুত, অপাথি'ব ধরণের ছবি ফুটাইয়া তুলিতেছে -“ও যেন পরিচিত পথিবীটা নয়, অন্য কোন