পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ১৬৩ অজানা জগতের, কোনও অজ্ঞাত দেবলোকের-•• প্রকৃতির একটা যেন নিজস্ব ভাষা আছে । অপ দেখিয়াছে, কতদিন বকুতোয়ার উপলছাওয়া-তটে শাল-ঝাড়ের নিচে ঠিক দাপরে বসিয়া—দরে নীল আকাশের পটভূমিতে একটা পত্রশন্যে প্রকাণড কি গাছ—সেদিকে চাহিলেই এমন সব কথা মনে আসিত যা অন্য সময় আসার কল্পনাও করিতে পারিত না—পাহাড়ের নিচে বনফলের জঙ্গলেরও একটা কি বলিবার ছিল যেন । এই ভাষাটা ছবির ভাষা—প্রকৃতি এই ছবির ভাষায় কথা বলেন—এখানেও সে দেখিল গাছপালায়, উইঢিবির পাশে শুকনো খড়ের ঝোপে, দরের বাঁশবনের সারিতে—সেই সব কথাই বলে--সেই সব ভাবই মনে আনে। প্রকৃতির এই ছবির ভাষাটা সে বোঝে । তাই নিজজন মাঠে, প্রাস্তরে বনের ধারে একা বেড়াইয়া সে যত প্রেরণা পায়—যে পলক অনুভব করে তা অপৰবf-—সত্যিকারের Joy of life—পায়ের তলায় শুকনো লতা-কাটি, দেয়াড়ের চরে রাঙা-রোদ মাখানো কষাড় ঝোপ, আকদের বন, ঘেটুবন—তার আত্মাকে এরা ধ্যানের খোরাক যোগায়, এ যেন অদশ্য সবাতী নক্ষত্রের বারি, তারই প্রাণে মুক্তার দানা বাঁধে । সন্ধ্যার পরবী কি গৌরীরাগিণীর মত বিষাদ-ভরা আনন্দ, নিলিপ্ত ও নিশ্বিকার— বহমদরের ওই নীল কৃষ্ণাভ মেঘরাশি, ঘন নীল, নিথর, গহন আকাশটা মনে যে ছবি অকে, যে চিন্তা যোগায়, তার গতি গোমুখী-গঙ্গার মত অনন্তের দিকে, সে সন্টি-স্হিতি-লয়ের কথা বলে, মৃত্যুপারের দেশের কথা কয়,-ভালবাসা-বেদনা-ভালবাসিয়া হারানো—বহৃদরের এক প্রীতিভরা পনেজমের বাণী--- এই সব শান্ত সন্ধ্যায় ইছামতীর তীরের মাঠে বসিলেই রক্তমেঘস্তুপ ও নীলাকাশের দিকে চাহিয়া চারিপাশের সেই অনন্ত বিশ্বের কথাই মনে গড়ে । মনে পড়ে বাল্যে এই কাঁটাভরা সাইবাবলার ছায়ায় বসিয়া বসিয়া মাছ ধরিতে ধরিতে সে দরে দেশের স্বপ্ন দেখিত—আজকাল চেতনা তাহার বাল্যের সে ক্ষুদ্র গণ্ডি পার হইয়া ক্ৰমেই দরে হইতে দরে আলোকের পাখায় চলিয়াছে । এই ভাবিয়া এক এক সময় সে আনন্দ পায়—কোথাও না যাক-—যে বিশ্বের সে একজন নাগরিক, তা ক্ষুদ্র, দীন বিশ্ব নয়। লক্ষ কোটি আলোক-বষ যার গণনার মাপকাঠি, দিকে দিকে অন্ধকারে ডুবিয়া ডুবিয়া নক্ষত্রপুঞ্জ, নীহারিকাদের দেশ, অদশ্য ঈথারের বিশ্ব যেখানে মানুষের চিন্তাতীত, কল্পনাতীত দুরত্বের ক্রমবর্ধমান পরিধিপানে বিস্তৃত—সেই বিশ্বে সে জমিয়াছে’- . ঐ অসীম শান্য কত জীবলোকে ভরা–কি তাদের অদ্ভুত ইতিহাস । অজানা নদীতটে প্রণয়ীদের কত অশ্লভরা আনন্দতাঁথ-সারা শুন্য ভরিয়া আনন্দপন্দনের মেলা—ঈথারের নীল সমুদ্র বাহিয়া বহন দরের বৃহত্তর বিশ্বের সে-সব জীবনধারার ঢেউ প্রাতে, দপরে, রাতে, নিজনে একা বসিলেই তাহার মনের বেলায় আসিয়া লাগে—অসীম আনন্দ ও গভীর অনভূতিতেই মন ভরিয়া উঠে—পরে সে বঝিতে পারে শধ্যে প্রসারতার দিকে নয়—যদিও তা বিপল ও অপরিমেয়—কিস্ত সঙ্গে সঙ্গে চেতনা-স্তবুের আর একটা Dimension যেন তার মন খুজিয়া পায়—এই নিস্তবধ শরত-দপরে যখন অতীতকালের এমনি এক মধর মধে শৈশব-দপরের ছায়াপাতে নিখ ও করণ হইয়া উঠে তখনই সে বঝিতে পারে চেতনার এ স্তর বাহিয়া সে বহন্দরে যাইতে পারে—হয়ত কোন অজ্ঞাত সৌন্দৰ্য্যময় রাজ্যে, দৈনন্দিন ঘটনার গতানুগতিক অনুভুতিরাজি ও একঘেয়ে মনোভাব যে রাজ্যের সন্ধান দিতে পারিতই না কোনদিন ।••• নদীর ধারে আজিকার এই আসন্ন সন্ধ্যায় মৃত্যুর নব রপে সে দেখিতে পাইল । মনে হইল যাগে যুগে এ জন্মমৃতু্যচক্ৰ কোন বিশাল-আত্মা দেব-শিল্পীর হাতে আবত্তিত হইতেছে— তিনি জানেন কোন জীবনের পর কোন অবস্থার জীবনে আসিতে হয়, কখনও বা সঙ্গতি,