পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ჯსყტ; ঠিক দরপর বেলা । *. রাণী কাজলকে আটকাইয়া রাখিতে পারে না-“বেজায় চঞ্চল। এই আছে, কোথা দিয়া . সে কখন বাহির হইয়া গিয়াছে—কেহ বলিতে পারে না । সে রোজ জিজ্ঞাসা করে—পিসিমা, বাবা কবে আসবে ? কতদিন দেরি হবে ? অপ যাইবার সময় বলিয়া গিয়াছিল—রাণীদি, খোকাকে তোমার হাতে দিয়ে যাচ্ছি, ওকে এখানে রাখবে, ওকে ব'লো ন৷ আমি কোথা যাচ্ছি। যদি আমার জন্য কাঁদে, ভুলিয়ে রেখো—তুমি ছাড়া ওকাজ আর কেউ পারবে না । রাণ চোখ মছিয়া বলিয়াছিল—ওকে এ-রকম ফাঁকি দিতে তোর মন সরছে ? বোকা ছেলে তাই বুঝিয়ে গোল—যদি চালাক হ’ত ? অপু বলিয়াছিল, দেখ আর একটা কথা বলি । ওই বশিবনের জায়গাটা—তোমায় চল দেখিয়ে রাখি–একটা সোনার কোঁটো মাটিতে পোঁতা আছে আজ অনেকদিন—মাটি খড়লেই পাবে। আর যদি না ফিরি আর থেকে। যদি বাঁচে–বোমাকে কোঁটোটা দিও সি’দর রাখতে । খোকাও কষ্ট পেয়ে মানষ হোক—এত তাড়াতাড়ি কুলে ভক্তি করার দরকার নেই। যেখানে যায় যেতে দিও—}েপল যখন ঘাটে যাবে, তুমি নিজে নাইতে নিয়ে যেও— —সাঁতার জানে না, ছেলেমানষে ডুবে যাণে । ও একটু ভীতু আছে, কিন্তু সে ভয় এ-নেই তা-নেই বলে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা ক'রো না—কি আছে কি নেই তা বলতে কেউ পারেনা রাণাদি । কোনোদিকেই গোঁড়ামি ভাল নয়—তা ওর ওপর চাপাতে যাওয়ারও দরকার নেই । যা বোঝে বাবুক, সেই ভাল । অপর জানিত, কাজল শধে তার কল্পনা-প্রবণতাঁর জন্য ভীতু । এই কাল্পনিক ভয় সকল আনন্দ রোমান্স ও অজানা কলপনার উৎস-মুখ ৷ মুক্ত প্রকৃতির তলায় খোকার মনের সব বৈকাল ও রাত্রিগুলি অপ, বা রহস্যে রঙীন হইয়া উঠুক—মনে প্রাণে এই তাহার আশীৰবাদ । ভবঘুরে অপর আবার কোথায় চলিয়া গিয়াছে। হয়ত লীলার মাখের শেষ অনুরোধ রাখিতে কোন পোতো প্লাতার ডুবো জাহাজের সোনার সন্ধানেই বা বাহির হইয়াছে। গিয়াছেও প্রায় ছ’সাত মাস হইল । সতুও অপর ছেলেকে ভালবাসে । সে ছেলেবয়সের সেই দৃষ্ট সতু আর নাই, এখন সংসারের কাছে ঠেকিয়া সম্পণে বদলাইয়া গিয়াছে । এখন সে আবার খবে হরিভক্ত। গলায় মালা, মাথায় লম্বা চুল। দোকান হইতে ফিরিয়া হাত মুখ ধুইয়া রোয়াকে বসিয়া খোল লইয়া কীৰ্ত্তন গায়। নীলমণি রায়ের দরন জমার বাগান বিক্রয় করিয়া অপর কাছে সত্তর টাকা পাইয়াছিল—তাহা ছাড়া কাটিহার তামাকের চালান আনিবার জন্য অপর নিকট আরও পঞ্চাশটি টাকা ধার স্বরুপ লইয়াছিল। এটা রাণীকে লুকাইয়া—কারণ রাণী জানিতে পারিলে মহা অনথা বাধাইত—কখনই টাকা লইতে দিত না । কাজলের ঝোঁক পাখির উপর। এত পাখি সে কখনও দেখে নাই—তাহার মামার বাড়ির দেশে ঘিঞ্জি বসতি, এত বড় বন, মাঠ নাই—এখানে আসিয়া সে অবাক হইয়া গিয়াছে । রাত্রে শইয়া শ্যইয়া মনে হয় পিছনের সমস্ত মাঠ, বন রাত্রির অন্ধকারের মধ্যে দৈত্যদ্বানো, ভূত ও শিয়ালের ভিড়ে ভরিয়া গিয়াছে—পিসিমার কাছে আরও ঘেষিয়া শোয় । কিন্ত দিনমানে আর ভয় থাকে না, তখন পাখির ডিম ও বাসা খুজিয়া বেড়াইবার খুব সংযোগ । রাণ বারণ করিয়াছে—গাঙের ধারের পাখির গৰ্ত্তে হাত দিও না কাজল, সাপ থাকে। শোনে না, সেদিনও গিয়াছিল পিসিমাকে লুকাইয়া, কিন্ত অন্ধকার হইয়া গেলেই তার যত ভয় । দপরে সেদিন পিসিমাদের বাড়ির পিছনে বাঁশবনে পাখির বাসা খ:জিতে বাহির হইয়াছিল । সবে শীতকাল শেষ হইয়া রৌদ্র বেজায় চড়িয়াছে, আকাশে বাতাসে বনে কেমন