পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এক দপরে বেলায় নীলমণি চাটুজে বাড়ি ফেরবার পথে গ্রামের মদির দোকানে জিজ্ঞেস করলেন, হ’্যা গো ছিবাস, কেদার রাজাকে দেখেছিলে আজ সারাদিন ? * > ছিবাস আলকাতরার পিপে থেকে আলকাতরা বার করতে করতে জিজ্ঞেস করলে, কেন চাটুজ্জে মশায়, তেনার খবরে কি দরকার ? নীলমণি বললেন, আরে, খাজনার অংশ নিয়ে গোলমাল বেধেছে বন্ড। বাঁটুল নাপিতের দরন আমার অংশে আমি চার আনা করে বছরশাল খাজনা পাই, তা গাঁয়ের শব্দের ভন্দর কে না জানে ? এ বছরের খাজনা কেদার রাজা দিব্য আদায় করে নিয়ে বসে আছে। দ্যাখো তো কি উৎপাত ! ছিবাস মদীর মন তখন ছিল আলকাতরার পিপের মুখের ফাঁদলের দিকে । সে আপন মনে কি বললে, ভাল বোঝা গেল না। নীলমণি ছিবাসের সহানুভুতি না পেয়ে বোকার মত মুখখানা করে বড়জে পাড়ার দিকে অগ্রসর হলেন—উদেখা, বন্ধ বিশ্বেবর বাড়জের বাড়ির সান্ধ্য পাশার আড্ডায় গিয়ে একবার খোঁজ নেওয়া । - পথেই একজন মধ্যবয়স্ক লোকের সঙ্গে দেখা । নীলমণি চাটুতেজ বললেন, আরে এই যে কেদার খড়ো, তোমাকেই খুজছি। লোকটি বললে, কেন বলো তো হে ? o নীলমণি যতটা জোরের সঙ্গে ছিবাসের দোকানে কথা বলেছিলেন, এখানে কিন্তু তাঁর গলা দিয়ে অত জোরের সরে বের হ’ল না । —সেই বাঁটুল নাপিতের ভিটের খাজনা বাবদ কয়েক আনা পয়সা— —সে পয়সা তুমি কোথেকে পাবে খড়ো ? নীলমণি ভ্ৰ কুচকে বললে, কেন পাবো না ? —ও তোমার নীলাম-খরিদা জমি নয় । নীলমণি রাগের সরে রললেন, নেই বললে সাপের বিষ থাকে না তো জমি কোন ছার। তবে সেটেলমেণ্টের কাগজপত্রে তাই বলে বটে । —ভুল বলে নীলমণি খড়ো । —সেটেলমেণ্টের পড়চা ভুল বলে ? নীলমণির বড় ছেলে হাজকে এই সময় সাইকেলে চড়ে সতেজে যেতে দেখা গেল । নীলমণি হে”কে বললেন, ও অজিত—ও অজিত— ছেলেটি সাইকেল থেকে নেমে বললে, বাবা, তুমি এখানে ? —দরকার আছে, তুই একবার তোর দাদর সঙ্গে যা দিকি ওর বাড়ি । খড়ো, আমাদের অংশের খাজনা ক" আনা পয়সা অজিতের সঙ্গে দিয়ে দাও গিয়ে— —কোথা থেকে দেবো এখন ? আজ পাঠিও না, যদি কাগজ-পত্র দেখে মনে হয় তোমার জমি ওর মধ্যে আছে— নীলমণি বাধা দিয়ে বললেন, আলবাৎ আছে, হাজার বার আছে, ওর বাবা আছে— লোকটা বললে, চটো কেন নীলা খড়ো, থাকে পাবে । তবে এখন হাতে টানাটানি— —টানাটানি তা আমার কি ? আমার তো না হলে চলে না। ওসব শনলে আমার • কাছারীর খাজনা মাপ করবে কি জমিদারে ?