পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা ఫిషిషి শরৎ বললে, ক' পেয়ালা ? —চার-পাঁচ পেয়ালার মত হোক না হয় । —তা হবে না, দুধ নেই। কাল রাত্রে একটু দুধ রেখেছিলাম, তাই দিয়ে তোমাদের করে দিলাম। এক পেয়ালার মত একটুখানি পড়ে আছে । —তবে প্রভাসের জন্যে শধ্যে এক পেয়ালা করে দে । ও গাঁয়ে কখনো আসে না, ওকে দেওয়া উচিত আগে । আর সব তো ঘরের লোক । 蜡 ওরা কিন্তু কেউই বাড়ির কাছে এল না। অতিথিশালার কাছে এসে সাতকড়ি চৌধুরী ডাক দিয়ে বললেন,—ও কেদার দাদা, এসো এদিকে প্রভাস এসেছেন—আর কে বসে ওখানে —জগন্নাথ খড়ো ? কেদার বললেন, তুমি বসে পায়েস খাও দাদা, আমি যাই দেখি । সাতকড়ি বললেন, কোথা থেকে ইট দেবে হে ? চলো নিয়ে । —চলো, কালো পায়রার দীঘির পাড়ে জঙ্গলে অনেক ইট আছে । দুটো মন্দিরের ভাঙা ইটের রাশি। তাই নিও—কি বলো ? প্রভাস চারিদিকে চেয়ে চেয়ে দেখছিল বিস্ময়ের দটিতে। সে এ-গ্রামে ইতিপবে: কয়েকবার এলেও কেদারের বাড়ি কখনো আসে নি বা গড়ের মধ্যেও কখনো ঢোকে নি। এত বড় বড় ভাঙা ঘরদোর ও মন্দির যে এখানে আছে সে তা জানতো না। আগে জানলে সে ক্যামেরাটা নিয়ে আসতো কলকাতা থেকে । কেদার তাকে বললেন, চলো প্রভাস, ওখানে জগন্নাথদা বসে আছেন, তুমিও একটু চা খাবে এসো। এসো সাতু ভায়া, তুমিও এসো। . উপস্হিত ব্যক্তিগণের মধ্যে চা পান করতে অভ্যস্ত নয় কেউই, সাতকড়িও না । সুতরাং প্রভাস ছাড়া আর কেউ চা খেতে গেল না । সাতকড়ি বললেন, ঘরে এসো প্রভাস, দেরি না হয়—আমরা এখানেই আছি। প্রভাসকে ঘরের দাওয়ায় পিড়ি পেতে বসিয়ে কেদার মেয়েকে চা দিতে বললেন। শরৎ এসে চা দিয়ে যাবে, কিন্ত অপরিচিত প্রভাসের সামনে হঠাৎ আসতে সঙ্কোচ বোধ করে পেয়ালা হাতে দোরের কাছে দড়িয়ে আছে দেখে কেদার বললেন, ওকে দেখে লঞ্জা করতে হবে না, বুঝলি মা। ও আমাদের গায়ের ছেলে—এখনই না হয় থাকে কলকাতায়। ও পর নয়। দিয়ে যাও চা ৷ শরৎ এসে প্রভাসের সামনে চা রাখলে । প্রভাস শরৎকে কখনো দেখে নি বলা বাহুল্য —চা দেবার সময় সে মদ কৌতুহলের সঙ্গে প্রথমটা একবার শরতের দিকে চাইলে--কিন্ত শরৎকে দেখবার পরক্ষণেই প্রভাসের চোখমাখ যেন অপ্রত্যাশিত বিস্ময়ে উজ্জল হয়ে উঠল। মখের চেহারা যে বদলে গেল অতি অপেক্ষণের জন্যে, এ যে-কেউ দেখলেই বলতে পারতো। প্রভাস আশা করে নি এত সন্দেরী মেয়েকে আজু সকালে এই ভাঙা-ইটের-স্তাপে-ঘেরা জঙ্গলাবত ক্ষুদ্র বাড়িতে এ ভাবে দেখতে পাবে। এত রুপ আছে, এই সব পাড়াগাঁয়ে । প্রভাস থতমত খেয়ে চায়ের পেয়ালাটা হাতে তুলে নিলে । কেদার বললেন, তোমাদের কলকাতায় কোথায় থাকা হয় বাবাজি ? প্রভাস অন্যমনস্ক হয়ে কি যেন ভাবছিল, কেদারের প্রশ্নে যেন চমকে উঠে বললে, আমায় বলছেন ? আপার সারকুলার রোড । —তোমার বাবার শরীর কেমন ? —আছে ভাল, তবে উঠতে হাঁটতে পারেন না। বয়েস তো হ’ল কম নয়। সাহেব ডাক্তার দেখছে—তবে এ বয়েসের রোগ