পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৮ বিভূতি-রচনাবলী অপণা কি-একটা হঠাৎ মনে পড়িবার ভঙ্গিতে তাহার দিকে চাহিয়া আগ্রহের সরে বলিল —তুমি নাকি যন্ধে যাচ্ছিলে, পালদো বলছিল, সত্যি ?— . —যাই নি, এবার ভাবছি যাবো—এখান থেকে গিয়েই যাবো— অপণা ফিক করিয়া হাসিয়া বলিল—আচ্ছা থাক গো, আর রাগ করতে হবে না, আচ্ছা তোমার কথার কি উত্তর দেব বলো তো ?—ওসব আমি মুখে বলতে পারব না— * —আচ্ছা, যুদ্ধ কাদের মধ্যে বেধেছে, জানো ?-- —ইংরেজদের সঙ্গে আর জামানির সঙ্গে—আমাদের বাড়িতে বাংলা কাগজ আসে । আমি পড়ি যে । অপণা রপোর ডিবাতে পান আনিয়াছিল, খলিয়া বলিল—পান খাবে না ?--- বাহিরে এক পশলা ব্যটি হইয়া গেল। এতটুকু গরম নাই, ঠান্ডা রাতটির ভিজা মাটির সগন্ধে ঝিরঝিরে দক্ষিণ হাওয়া ভরপর, একটু পরে সম্বর জ্যোৎসনা উঠিল । অপ বলিল—আচ্ছা অপণা, চাঁপাফুল পাওয়া যায় তো কাউকে কাল বলো না, বিছানায় রেখে দেবে ? আছে চাপাগাছ কোথাও ? —আমাদের বাগানেই আছে । আমি একথা কাউকে বলতে পারব না কিন্তু— বলো কাল সকালে ওই নপেনকে, কি অনাদিকে-কি আমার ছোট বোনকে বলো— —আচ্ছা কেন বল তো চাঁপাফুলের কথা তুললাম ? অপণা সলজ হাসিল । অপর বুঝিতে দেরি হইল না যে, অপর্ণা তাহার মনের কথা ঠিক ধরিয়াছে। তাহার হাসিবার ভঙ্গিতে অপ, একথা বঝিল । বেশ বৃদ্ধিমতী তো অপণা 1••• q সে বলিল—হ’্যা একটা কথা অপণা, তোমাকে একবার কিন্তু নিয়ে যাব দেশে, যাবে তো ? 锣 অপণা বলিল—মাকে বলো, আমার কথায় তো হবে না--- —তুমি রাজী কি না বলো আগে—সেখানে কিন্তু কণ্ট হবে । অপর একবার ভাবিল— সত্য কথাটা খুলিয়া বলে। কিন্তু সেই পুরাতন গাব ও বাহাদারির ঝোঁক —বলিল— অবিশ্যি একদিন আমাদেরও সবই ছিল । যেখানে থাকতুম—আমার পৈতৃক দেশ—এখন তো দোতলা মস্ত বাড়ি–মানে সবই—তবে শরিকানী মামলা আর মানে ম্যালেরিয়ায়— বুঝলে না ? এখন যেখানে থাকি, সেখানে দু’খানা চালাঘর, তাও মা মারা যাওয়ার পর আর সেখানে যাই নি, তোমাদের মত ঝি-চাকর নেই, নিজের হাতে সব করতে হবে—তা আগে থেকেই বলে রাখি । তুমি হলে জমিদারের মেয়ে— অপণা কৌতুকের সরে বলিল—আছিই তো জমিদারের মেয়ে । হিংসে হচ্ছে বুঝি ? একটু থামিয়া শান্ত সরে বলিল—কেন একশ’বার ওকথা বলো ?“তুমি কাল মাকে বাবাকে ব’লে রাজী করাও, আমি তোমার সঙ্গে যেখানে নিয়ে যাবে যাবো, গাছতলাতেও যাবো, আমি তোমার সব কথা জানি, পলেদা মায়ের কাছে বলছিল, আমি সব শুনেছি। যেখানে নিয়ে যাবে, নিয়ে চল, তোমার ইচ্ছে আমার তাতে মতামত কি ? রাত্রে দুজনের কেহ ঘনমাইল না। g বধকে লইয়া সে রওনা হইল। বশর প্রথমটা আপত্তি তুলিয়াছিলেন–নিয়ে তো যেতে চাইছ বাবাজী, কিন্তু এখন নিয়ে গিয়ে তুলবে কোথায় ? চাকরি-বাকরি ভাল কর, ঘর-দ্বোর ওঠাও, নিয়ে যাবার এত তাড়াতাড়িটা কি ? সিড়ির ঘরে অপণার মা স্বামীকে বলিলেন—হ’্যাগা, তোমার বন্ধি-সন্ধি লোপ পেয়ে