পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা ՀoՋ দেখতে হবে। বাবাকে ফেলে তার মরেও সখ নেই । এ অভাবের সংসারে সে যে কত জায়গা থেকে জিনিসপত্র জটিয়ে আনে, বাবা কি তার কোনো খবর রাখেন ? তিনি দুবেলা ঠিক খাবার সময় এসে বললেন—শরৎ ভাত হয়েছে ? ভাত দে মা। চাল যে কতদিন বাড়ন্ত থাকে, তেল নয়নের অভাবে রান্না হয় না-বাবা কখুনো রেখেছেন সে সম্প্রধান ? রাজকন্যার গম্ব তখন খসে পড়ে, রাজকন্যা তখন এক গরীব গহমেহর ছে’ড়াশাড়ী-পরা মেয়ে হয়ে কাঠা হাতে তেলের বাটি হাতে ছোটে ধর্ম"দাস কাকাদের বাড়ি, রাজলক্ষ্মীদের বাড়ি- ‘সাজিয়ে বানিয়ে কত মিটি মিটি মিথ্যে কথা সেখানে বলে, মানকে জলে ভাসিয়ে দেয়, চক্ষলৎজাকে আমল দিতে চায় না। যখন আরও বয়স কম ছিল, মাঝে মাঝে কিন্ত সত্যিকার রাজকন্যা হতে তার ইচ্ছে জাগতো মনে । গড়বাড়ির পুকুরপাড়, বন, জংলী লতায় ঢাকা ইটের স্তপ চাঁদের আলোয় ফুটফুট করছে, তার মধাসহা-ভরা দেহের প্রতি পদক্ষেপে গন্ধব ও আনন্দ, প্রাণে অফুরন্ত গানের বাৎকার, মুকুলিত প্রথম যৌবনের অপরিসীম স্বপ্ন তার চোখের চাউনিতে—-তখন একদিন এক দেশের রাজপত্র এলেন ঘোড়ায় চেপে, তার রাপের খ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে যে— না এসে কে থাকতে পারবে ? —বিয়ে তোমায় আমি করবো না রাজপত্তের— —ওমা, সে কি সম্বনাশ ! তুমি বলো কি রাজকন্যে, আমার ঘোড়ার দিকে চেয়ে দেখ, ঘেমে উঠেছে। কদর থেকে ছুটে আসছি যে তোমার জন্যে—আর তুমি বলো কি না— —বাজে কথা বলে লাভ কি রাজপত্তরে । ফিরে যাও— —কেন বলো না ? কি হয়েছে ? —আমরা মস্ত বড় বংশ, তার ওপরে ব্রাহ্মণ—তোমার কোন দেশে ঘর, কি বংশ তার নেই ঠিকানা—আমায় কত হীরেমোতির গহনা দিতে হবে জানো ? আমার বাবাকে এক গাদা টাকা দিতে হবে জানো ?--"বাবা দোকান করবেন। —এই কথা ! কত টাকা দিতে হবে তোমার বাবাকে ? কিসের দোকান করবেন তিনি ? —দাও দ্য হাজার পাঁচ হাজার। চাল-ডাল-ধি-তেলের প্রকাণ্ড মদিখানার দোকান— ছিবাস কাকার দোকানের চেয়ে অনেক, অনেক বড়—বাবার কণ্ট যে দরে করবে, সে আমায় নিয়ে যাবে— কেদার এসে ডাক দিলেন—ও মা, ওঁঠ—ও শরৎ—উঠে পড়ো— অচিল বিছিয়ে কখন শরৎ উননের সামনে রান্নার পি’ড়ির পাশে শীয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বাবার ডাকে সে ধড়মড় করে উঠে পড়ল । —নাঃ, তুই কোন দিন পড়ে মরবি দেখছি, আচ্ছা, রাঁধতে রাঁধতে অমন করে উননের সামনে শোয় ? যদি অচিলখানা উড়ে পড়তো আগ,নে ? ঘাম ধরলে তোর আর জ্ঞানকান্ড থাকে না— শরৎ একটু অপ্রতিভ হয়ে পড়েছিল, ঘমেজড়িত কণ্ঠে বললে, কি হয়েছে ?”আঁচল উড়ে পড়তো তো বেশ ভালই হ’ত । তোমার হাত থেকে উদ্ধার পেয়ে সবগগে চলে যেতাম— বাবাঃ–রাত্তিরে একটু ঘামবোরও যো নেই—বেশ যাও— কথা শেষ করেই শরৎ আবার তখনি মেঝের ওপর শয়ে পড়ল । কেদার জানেন, মেয়ের ঘমের ঘোর এখনও কাটে নি—এই রকমই হয় প্রায় প্রতিদিন, তিনি দেখে এসেছেন। ভারী ঘুমকাতুরে মেয়ে । f cm o一ss