পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Š© বিভূতি-রচনাবলী অপর কৌতুকের সরে বলিল—ঠিক হ'লে যা দেব, তা এখনি পেতে চাও? —যাও, আচ্ছা তো দন্দু ! একুবার সে রন্ধনরত বধর পিছনে আসিয়া চুপিচুপি দাঁড়াইল । দশ্যটা এত নতুন, এত অভিনব ঠেকিতেছিল তাহার কাছে ! এই সঠোম, সন্দেরী পরের মেয়েটি তাহার নিতান্ত আপনার জন—একমাত্র পথিবীতে আপনার জন । পরে সে সন্তপণে নিচু হইয়া পিঠের উপরে এলানো চুলের গিঠটা ধরিয়া অতকিতে এক টান দিতেই বধ পিছনে চাহিয়া কৃত্রিম কোপের সরে বলিল—উঃ ! আমার লাগে না বুঝি ?--ভারী দ" তো---রান্না থাকবে পড়ে ব’লে দিচ্ছি যদি আবার চুল ধরে টানবে— অপর ভাবে, মা ঠিক এই ধরণের কথা বলিত—এই ধরণেরই স্নেহ-প্রীতিঝরা চোখ। সে দেখিয়াছে, কি দিদি, কি রান-দি, কি লীলা, কি অপণা—সকলেরই মধ্যে মা যেন অল্পবিস্তর মিশাইয়া আছে—ঠিক সময়ে ঠিক অবস্হায় ইহারা একই ধরণের কথা বলে, চোখে-মুখে একই ধরণের স্নেহ ফুটিয়া ওঠে । একটি ভদ্রলোক অনেকক্ষণ হইতে প্লাটফমে পায়চারী করিতেছিলেন । ট্রেনে উঠিবার কিছল পাবে অপর তাঁহাকে চিনিতে পারিল, দেওয়ানপরের মাস্টার সেই সত্যেনবাব । অপর থাণ্ড'ক্লাসে পড়িবার সময়ই ইনি আইন পাশ করিয়া স্কুলের চাকুরি ছাড়িয়া চলিয়া গিয়াছিলেন, আর কখনও দেখা হয় নাই । পুরাতন ছাত্রকে দেখিয়া খুশী হইলেন, অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন, অন্যান্য ছাত্রদের মধ্যে কে কি করিতেছে শনিবার আগ্রহ দেখাইলেন । তিনি আজকাল পাটনা হাইকোটে ওকালতি করিতেছেন, চালচলন দেখিয়া অপর মনে হইল—বেশ দু’পয়সা উপাত্তজন করেন । তবুও বলিলেন, পরানো দিনই ছিল ভাল, দেওয়ানপুরের কথা মনে হইলে কট হয় । ট্রেন আসিলে তিনি সেকেণ্ড ক্লাসে উঠিলেন । অপণাকে সব ভাল করিয়া দেখাইবার জন্য শিয়ালদহ স্টেশনে নামিয়া অপর একখানা ফিটন গাড়ি ভাড়া করিয়া খানিকটা ঘরিল । অপু একটা জিনিস লক্ষ্য করিল, অপণা কখনও কিছু দেখে নাই বটে, কিন্তু কোনও বিষয়ে কোনও অশোভন ব্যগ্রতা দেখায় না । ধীর, সিহর, সংযত, বৃদ্ধিমতী—এই বয়সেই চরিত্রগত একটা কেমন সহজ গাভীয্য—যাহার পরিণতি সে দেখিয়াছে ইহারই মায়ের মধ্যে ; উছলিয়া-পড়া মাতৃত্বের সঙ্গে চরিত্রের সে কি দঢ় অটলতা ! মনসাপোতা পে"ছিতে সন্ধ্যা হইয়া গেল । অপর বাড়িঘরের বিশেষ কিছু ঠিক করে নাই, কাহাকেও সংবাদ দেয় নাই, কিছ না—অথচ হঠাৎ স্ত্রীকে আনিয়া হাজির করিয়াছে । বিবাহের পর মাত্র একবার এখানে দুদিনের জন্য আসিয়াছিল, বাড়িঘর অপরিস্কার, রাত্রিবাসের অনপেযন্ত, উঠানে ঢুকিয়া পেয়ারা গাছটার তলায় সন্ধ্যার অন্ধকারে বধ দাঁড়াইয়া রহিল, অপর গরর গাড়ি হইতে তোরঙ্গ ও কাঠের হাতবাক্সটা নামাইতে গেল। উঠানে পাশের জঙ্গলে নানা পতঙ্গ কুবর করিয়া ডাকিতেছে, ঝোপে-ঝাপে জোনাকির ঝাঁপ জনলিতেছে । কেহ কোথাও নাই, কেহ তরুণ দম্পতিকে সাদরে বরণ ও অভ্যর্থনা করিয়া ঘরে তুলিয়া লইতে ছটিয়া আসিল না, তাহারাই দুজনে টানাটানি করিয়া নিজেদের পেটরা-তোরঙ্গ মাত্র দেশলাইয়ের কাঠির আলোর সাহায্যে ঘরের দাওয়ায় তুলিতে লাগিল । সে আজ কাহাকেও ইচ্ছা করিয়াই খবর দেয় নাই, ভাবিয়াছিল মা যখন বরণ করে নিতে পারলেন না আমার বোঁকে, অত সাধ ছিল মার—তখন আর কাউকে বরণ করতে হবে না, ও অধিকার আর কাউকে বুঝি দেব ? g অপণা জানিত তাহার স্বামী দরিদ্ৰ—কিন্তু এ রকম দরিদ্র তাহা সে ভাবে নাই । তাহাদের পাড়ার নাপিত-বাড়ির মত নিচু, ছোট চালাঘর । দাওয়ার একধারে গর বাছরে