পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৩৮ বিভূতি-রচনাবলী র"াধনী বামনী নও যে দেশ সন্ধ লোকের রোধে বেড়াবে ? আচ্ছা, আমরা এখন আসি কাকাবাবন, বিকেলে ছ'টার সময় আবার আসবো । মলঙ্গা লেনে আমাদের যে বাড়ি আছে সেখানে নিয়ে যাবো ওবেলা । ওরা গাড়ি নিয়ে চলে গেলে কেদার আর একবার তামাক সাজতে বসলেন । শরৎ চারিদিকে বেড়িয়ে এসে বললে, বাঃ চমৎকার জায়গা। ওদিকে একটা বাঁধা ঘাটওয়ালা পুকুর ; দেখবে এসো না বাবা ! তোমার কেবল তামাক খাওয়া আর তামাক খাওয়া ! এই তো একবার খেলে বারাসাত না কি জায়গায় ! কেদার অগত্যা উঠে মেয়ের পিছ পিছ গিয়ে পর্কুের দেখে এলেন । বাঁধা ঘাট অনেক দিনের পরোনো—কতকাল এ ঘাট যেন কেউ ব্যবহার করে নি। পর্কুেরের ওপারেও বাগান, কিন্তু ওদিকটাতে আগাছার জঙ্গল বড় বেশি। শরৎ বললে, বাবা, খিদে পেয়েছে ? 一矶3一 —ঠিক পেয়েছে বাবা । উড়িয়ে দিলে শুনবে না। ভাঁড়ারে জিনিসপত্র সব আছে দেখে এসেছি–হালয়ো আর ল.চি করে আনি । কেদার চুপ করে তামাক টানতে লাগলেন, মেয়ের কাজে বাধা দেবার বিশেষ কোনো লক্ষণ প্রকাশ করলেন না অবিশ্যি । শরৎ কিন্তু অলপ একটু পরে রান্নাঘর থেকে ফিরে এসে বললে—বাবা, মুশকিল বেধেছে— —কি রে ? —এখানে তো দেখছি পাথরে কয়লা জালানো উনন । কাঠের উনন নেই । কয়লা কি করে জালতে হয় জানি নে যে বাবা ? ঝি না এলে হবেই না দেখছি । শরৎ ছেলেমানষের মত আনন্দে বাগানের সব জায়গায় বেড়িয়ে ফুল তুলে ডাল ভেঙে এ গাছতলায় লোহার বেষ্টিতে বসে ও গাছতলায় লোহার বেচিতে বসে বসে উৎপাত করে বেড়াতে লাগল। বেশ সম্বর ছায়াভরা বাগান । কত রকমের ফুল—অধিকাংশই সে চেনে না, নামও জানে না । কেদার মেয়ের পীড়াপীড়িতে এক জায়গায় গিয়ে লোহার বেঞ্চিতে খানিকটা বসে কলের পতুলের মত দু-একবার মাথা দলিয়ে বলতে লাগলেন—বাঃ, বেশ-— বাঃ— বেলা যখন বেশ পড়ে এসেছে, তখন প্রভাস মোটর নিয়ে এসে বললে—আসন কাকাবাব, চলো শরৎ—কাকাবাবকে কিছু খাইয়েছ ? শরৎ হেসে বললে, তা হয় নি। ঝি তো মোটেই আসে নি। —তুমি তো বললে তুমিই করবে ? জিনিসপত্র তো আছে । —কয়লার উন,নে জাল দিতে জানি নে, কয়লা ধরাতে জানি নে। তাতেই তো হল না। প্রভাস চিন্তিতমখে বলল, তাই তো । এ তো বড় মুশকিল হল ! কেদার বললেন, কিছ মুশকিল নয় হে প্রভাস । চলো তুমি, ফিরে এসে বরং জলযোগ করা যাবে— প্রভাস বললে, যদি নিকটের ভাল দোকান থেকে কিছল মিষ্টি কিনে আনি, তা আপনার চলবে না কাকাবাব ? শরৎ হেসে বললে, বাবা ও-সব খাবেন না প্রভাসদা, তা ছাড়া আমি তো খেতেও দেবো না। কলকাতা শহরে শুনেছি বড় অসুখ-বিসুখ, যেখান সেখান থেকে খাবার খাওয়া ও’র সইবে না । অগত্যা সকলে মোটরে উঠে বসলেন, গাড়ি ছাড়লো ।