পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা $8ని দিকে গেল—যাবার সময় বলে গেল, বোসো বাবা, ভাল করে চা করে আনি—প্রভাসদা, অর্ণবাব যাবেন না চা না খেয়ে । রাত সাড়ে ন’টার মধ্যে ক্ষিপ্রহস্তে রান্না-বাড়া সাঙ্গ করে শরৎ বাবাকে খাওয়ার ঠাঁই করে • দিলে। প্রভাস ও অরণ তার অনেক আগে চা পান করে বিদায় নিয়েছে। শরৎ মাথা দলিয়ে বললে, ভাত কিন্ত নয় বাবা-লচি— —যা হয় দাও মা ৷ লুচি কেন ? —লচির বন্দোবস্ত দেখি করে রেখেছে। ঘি, আটা-চা’ল আনে নি— —বেশ ভালই হ’ল—তুই খেতে পাবি এখন— —বোসো, গরম গরম আনি— পরম তৃপ্তির সহিত প্রায় বিশ-বাইশখানা লুচি অনগ’ল খেয়ে যাওয়ার পরে কেদারেরমনে পড়ল, আর বেশি খাওয়া ঠিক হবে না—মেয়ের লাচিতে টান পড়বে। * শরৎ আবার যখন দিতে এল, বললে, নাঃ, আর না, থাক । —কেন দিই না এই দ,খানা গরম গরম— —তোমার জন্যে আছে তো ? 創 —ওমা, সে কি ? প্রায় আধুসেরের ওপর আটা—এক পোয়া আটার লুচি আমি খেতে পারি না, তুমি পারো ? —খব পারি। ওকথা বলো না মা—এক সময়ে” —তোমার তো বাবা কেবল এক সময়ে আর এক সময়ে। এখন পারো না তো আর } —খব পারি— —পারলেও আর দেবো না । খেয়ে ওঠো—বিদেশ বিভু’ই জায়গা—দাঁড়াও দুইটা নিয়ে এসে দিই—দই আছে, মিটি আছে— আহারাদি সেরে পরিতৃপ্তির সহিত তামাক টানতে টানতে কেদার মেয়েকে বললেন, প্রভাস ছোকরা ভালো । বেশ যোগাড় আয়োজন করেছে খাওয়ার—কি বলিস মা ? —চমৎকার, আবার কি করবে ? —ফলগুলো কেটেছিস নাকি ? —না বাবা, কাল সকালে কাটবো । তোমায় দেবো । আজ তো ল.চি ছিল, তাই খেলাম । —বড় নিভজনি বাগানটা—না ? —গড়ের জঙ্গলের চেয়ে নিজান নয় তা বলে । ওই তো রাস্তা দিয়ে মোটর গাড়ি যাচ্ছে, আর গড়ের জঙ্গলে যে-সময়ে শেয়াল ডাকে, বাঘ বের হয় ! - .* –তা যা বলিস বাপ, সেখানে যতই জঙ্গল হোক, জন্মভূমি তো বটে। সেখানে ভয় হয় ? তুই সত্যি করে বল তো f —ভয় হলে কি থাকতে পারতাম বাবা ? ছেলেবেলা থেকে কাটালাম কি করে তবে ? —কিস্ত এখানে কেমন যেন ভয় করে মা । কলকাতা শহর বড় যেমন, তেমন গন্ডা বদমাইশের জায়গা । - সারাদিন মোটর ভ্রমণের ক্লাস্তির ফলে রাত যেন কোথা দিয়ে কেটে গেল। পরদিন সকালে শরৎ বাথরুমে ঢুকে স্নান সেরে নিয়ে বাবার জন্যে চা আর খাবার করতে বসল। অনেক দিন পরে সে বাবাকে ভাল করে খাওয়ানোর সচ্ছল উপকরণ হাতের কাছে পেয়ে তার সদ্ব্যবহার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ।