পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

રહo বিভূতি-রচনাবলী করতে পারলেন না, কেমন যেন বাধ-বাধ ঠেকতে লাগল—সতীশ কলার দোকানে বসে গাইলে যেমনটি হয় তেমনটি কোনোখানেই হয় না । চাটুজে মশাই কিস্ত তাই শনেই খাব খুশী হয়ে উঠে বললেন, বাঃ বাঃ, বেশ চমৎকার গলাটি আপনার । এসব গান আজকাল বড় একটা শোনাই যায় না—সব থিয়েটারি গান শনে শনে কান পচে গেল, মশাই। বসন, একটু চায়ের ব্যবস্থা করে আসি– কেদার ভদ্রলোককে নিরস্ত করে বললেন, চা খেয়ে বেরিয়েছি, আমি দ্বার চা খাইনে সন্দের পর, রাতে ঘুম হয় না, বয়েস হয়েছে তো—এবার আপনি বরং একটা— চাটুজ্জে মশায়ও দেখা গেল বিনয়ের অবতার। তিনি গান গাইলেন না, কারণ তিনি বললেন, একে তিনি গান গান না, কারণ গানের গলা নেই তাঁর—যাও বা একটু আধটু হ: হ: করতেন, কেদারের মত গণেী লোকের সামনে তাঁর গলা দিয়ে কিছুই বেরবে না । অবশেষে অনেক অনুরোধের পর চাটুতেজ মশায় একটা রামপ্রসাদী গেয়ে শোনালেন—কেদারের মনে হ’ল তাঁদের গ্রামের যাত্ৰাদলের তিনকড়ি কামার এর চেয়ে অনেক ভাল গায় । এ সময় শরৎ বাড়ির মধ্য থেকে বেরিয়ে এসে বললে, চলো ধাবা, রাত হয়ে গেল । চাটুজে মশায় বললেন, এটি কে ? মেয়ে বুঝি ? তা মা যে আমার জগন্ধাত্রী প্রতিমার মত ঘর আলো করা মা দেখছি। বিয়ে দেন নি এখনও ? —বিয়ে দিয়েছিলাম চাটুজ্জে মশাই—কিন্তু বরাত ভাল নয়, বিয়ের দু-বছর পরেই হাতের শাখা ঘুচে গেল । চলো মা, উঠি আজ চাটুতেজ মশাই, নমস্কার । বড় আনন্দ হ’ল—মাঝে মাঝে আসবো কিন্তু । —আসবেন বৈকি, রোজ আসবেন আর এখানে চা খাবেন । মাকেও নিয়ে আসবেন । মায়ের কথা শুনে মনে বড় দুঃখ হ’ল—উনি আমার এখানে একটু মিটিমথি করবেন একদিন । নমস্কার । পথে আসতে আসতে শরৎ বললে, গিন্নী বেশ লোক বাবা । আমায় কত আদর করলে, জল খাওয়ানোর জন্যে কত পীড়াপীড়ি—আমি খেলাম না, পরের বাড়ি খেতে লজ্জা করে— চিনি নে শুনি নে। আমায় আবার যেতে বলেছে। —আমারও ভাল হ’ল, কত্তা গান-বাজনা ভালবাসে,শখ আছে—এখানে সন্দেটা কাটানো যাবে ওরা নিজেদের বাগান-বাড়িতে ঢুকেই দেখলে বাড়ির সামনে প্রভাসের মোটর দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার পর বাড়ি পে'ছেই প্রভাসের সঙ্গে দেখা হ’ল । সে বাড়ির সামনে গোল বারান্দায় বসে ছিল, বোধ হয় এদের প্রত্যাবৰ্ত্তনের অপেক্ষায় । কাছে এসে বললে, কোথায় গিয়েছিলেন কাকাবাব ? আমি অনেকক্ষণ এসে বসে আছি । কিন্তু আজ যে বন্ড দেরি করে ফেললেন–সিনেমা যাবার সময় চলে গেল । সাড়ে ন’টার সময় যাবেন ? প্রায় বারোটায় ভাঙবে l o শরৎ বললে, না প্রভাসদা, অত রাত্রে ফিরলে বাবার শরীর খারাপ হবে। থাক না আজ, আর একদিন হবে এখন— কেদার বললেন, তাই হবে এখন প্রভাস, আজ বন্ড দেরি হয়ে যাবে। তুমি তো আজ ও-বেলা এলে না—এ-বেলাও আমরা সন্দে পয্যন্ত দেখে তবে বেরিয়েছি। কাল বরং যাওয়া যাবে এখন ৷ বসো চা থাও । —না কাকাবাব, আজ আর বসবো না। কাল তৈরি থাকবেন, আসবো বেলা পাঁচটার মধ্যে । কোনো অসুবিধে হচ্ছে না ? —না না অসুবিধে কিসের ? তুমি সেজন্য কিছু ভেবো না।