পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা ২৬৫ স্বায়গা হ’ল, প্রায় ত্রিশজন লোক নিমম্মিত, আহারের ব্যবস্থাও চমৎকার। যেমন আয়োজন, তেমনি রান্না । কেদার এক সময়ে খেতে পারতেন ভালই, আজকাল বয়স হয়ে আসছে, তেমন আর পারেন না – তবুও এখনও যা খান, তা একজন ওই বয়সের কলকাতার ভদ্রলোকের বিস্ময় ও ঈষার বিষয় । বাড়ির কত্তা চাটুজে মশায় কেদারের পাতের কাছে দাঁড়িয়ে তদারক করে তাঁকে খাওয়ালেন । আহারাদির পরে বিদায় চাইলে বললেন, আবার আসবেন কেদারবাব, পাশেই আছি—আমরা তো প্রতিবেশী । আপনার বাজনার হাত ভারি মিঠে, আমার গ্রী বলছিলেন —উনি কে ? আমি বললাম, আমাদের পাশের বাগানেই থাকেন—এসেছেন বেড়াতে । আহা, আজ যদি আপনার মেয়েটিকে আনতেন—বড় ভাল হ’ত, আমার সন্ত্রী বলছিলেন— —আজ্ঞে হ্যাঁ—তা তো বটেই। তার এক দাদা এসে তাকে নিয়ে গেল বেড়াতে কিনা ? মানে গ্রাম-সম্পকের দাদা হলেও খােব আপনা-আপনি মত। কলকাতায় তাদের বাড়ি আছে—সেখানেই নিয়ে গেল । মটোর গাড়ি নিয়ে এসেছিল । তা আর একদিন নিয়ে আসবো— —আনবেন বৈকি, মাকে আনবেন বৈকি,--বলা রইল, নিশ্চয় আনবেন—আচ্ছা নমস্কার, কেদারবাবল কেদারের সঙ্গে চাটুজে মশায় একজন লোক দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কেদার তা - নিতে চান নি। তিনি গানের আসরের শেষ দিকে একটু ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন, মেয়ে এসে একা থাকবে বাগানবাড়িতে। গাঁয়ে গড়বাড়ির বনের মধ্যে মেয়েকে ফেলে রেখে যেতেন প্রায় প্রতি রায়েই, সে কথা ভেবে এখন তাঁর কন্ট হ’ল । তবুও সে নিজের গ্রাম, পৰব"পরিষের ভিটে, সেখানকার কথা বতশত্র । গেট দিয়ে ঢোকবার সময় কেদার দেখলেন, কোনো ঘরে আলো জবলছে না। শরৎ তা হলে হয়তো সারাদিন ঘরে ফিরে এসে ক্লান্ত অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়েছে । আহা, কত আর ওর বয়স, কাল তো এতটুকু দেখলেন ওকে-দেখকে শনাক, আমোদ করকে না ! বাড়ির রোয়াকে উঠে ডাকলেন, ও শরৎ-মা শরৎ উঠে দোরটা খোলো, আলোটা জবালো— সাড়া পাওয়া গেল না । কেদার ভাবলেন—বেশ ঘনমিয়ে পড়েছে দেখছি --বন্ড ঘাম-কাতুরে, গড়শিবপুরে একএকদিন এমন ঘামিয়ে পড়তো- ছেলেমানষে তো হাজার হোক –হঃ– পুনরায় ডাক দিলেন-ও মা শরৎ, ওঠে, আলো জালো – ডাকাডাকিতে ঝি উঠে আলো জেলে রান্নাঘরের বারান্দা থেকে এসে বললে, কে— বাবা ? কই দিদিমণি তো আসেন নি এখনও— কেদার বিস্ময়ের সরে বললেন, আসে নি ? বাড়ি আসে নি ? তুই ঘামিয়ে পড়েছিলি, জানিস নে হয়তো—দ্যাখ-সে হয়তো আর ডাকে নি-চল ঘরে, আলো জাল ঝি বললে, চাবি দেওয়া রয়েছে যে বাবা, এই আমার কাছে চাবি। দোর খুলবে, আমার কাছ থেকে চাবি নেবে, তবে তো ঢকবে ঘরে । কি যে বলো বাব ! তাই তো, কেদার সে কথাটা ভেবে দেখেন নি। চাবি রয়েছে যখন ঝিয়ের কাছে, তখন শরৎ দোর খলবে কি করে । ঝি বললে, আমি সন্দ্রে থেকে বসে ছিন এই রোয়াকে, এই আসে, এই আসে—বলি মেয়েমানুষ একা থাকবে ? এসব জায়গা আবার ভাল না। বাগানবাড়ি, লোকজনের গতাগাঁম্য নেই—রাত্তির কাল। আমি শয়ে থাকবোখন দিদিমণির ঘরে—রান্নাঘরে আটা