পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা ર૭૧ — রেখে দে । হয়তো গঙ্গাচচান করে আসবে । যখন বারোটা বেজে গেল, তখন ঝি এসে বললে, বাব, রান্নাটা আপনিই চড়িয়ে দিন না . কেন ? আমার বোধ হয় দিদিমণি এবেলা আর এলেন না । না খেয়ে কতক্ষণ বসে থাকবেন ! কিন্তু কেদার বড় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন । আজ একটা ব্যাপার তাঁর কাছে আশ্বয’্য ঠেকেছিল, সেটা এই, শরৎ ষত আমোদের মধ্যেই থাকুক কেন না, বাবাকে ভুলে- তাঁর জন্যে রান্নার কথা ভুলে—সে কোথাও থাকবে না। জীবনে সে কখনও তা করে নি। যতই কালীঘাটেই যাক আর গঙ্গানানই করকে বাবার খাওয়া হবে না দ্বপোরে, এ চিন্তা তাকে বৈকুণ্ঠের দ্বোর থেকেও ফিরিয়ে আনবে। অথচ এ কি রকম হ'ল । মহা মুশকিলে পড়ে গেলেন কেদার। প্রভাসের বাড়ির ঠিকানা জানেন না তিনি যে খোঁজ নেবেন । এমন তো হতে পারে কোনো অসংখ করেছে শরতের । কিন্তু প্রভাসও খবর দিতে এল না একবার, এই বা কেমন কথা ! ঝি এসে দাঁড়াল, আবার ভাত চড়াবার কথাটা বলতে । একটু ইতস্ততঃ করে বলল, বাবা, একটা কথা বলবো কিছ মনে কোরো নি, দিদিমণি যেনার সঙ্গে গিয়েছেন, তিনি কি রকম দাদা ! اولیه ঝিয়ের কথার সর ও বলবার ধরন কেদারের মনের মধ্যে হঠাৎ যেন একটা ধারালো অস্ত্রের বিষম ও নিষ্ঠুর খোঁচা দিয়ে তাঁর সরল মনকে জাগিয়ে তুলবার চেষ্টা করলে। তিনি পাংশ মুখে ঝিয়ের দিকে চেয়ে বললেন, কেন মেয়ে ? কেন বলো তো ? —না বাব, তাই বলছি। বলি, যেনার সঙ্গে তিনি গিয়েছেন, তিনি নোক ভালো তো ? শহর-বাজার জায়গা, এখানে মানুষ সব বদমাইশ কিনা, দিদিমণি সোমত্ত মেয়ে তাই বলছি । তবে আপনি বলছিলে দাদার সঙ্গে গিয়েছে, তবে আর ভয় কি। তা বাব, ভাতটা চড়িয়ে— কেদার রান্না চড়াবেন কি, ঝির কথা শুনে তাঁর কেমন একটা ভয়ে সমস্ত শরীর ঝিমঝিম করে উঠল, হাতে পায়ে যেন বল নেই। এসব কথা তাঁর মনেও আসে নি। ঝি নিতান্ত অন্যায় কথা তো বলে নি । প্রভাসকে তিনি কতটুকু জানেন ? তাঁর সঙ্গে মেয়েকে যেতে দেওয়া হয়তো তাঁর উচিত হয় নি । হঠাৎ মনে পড়ল, পাশের বাগানে গিয়ে চাটুজ্জে মশাইকে সব জানিয়ে এ বিপদে তাঁর পরামশ নেওয়া দরকার—বিশাল কলকাতা শহরের মধ্যে তিনি আর কাউকে জানেন না, চেনেন না। ঝিকে বসিয়ে রেখে বাড়িতে, তিনি চাটুজে মশায়ের বাগানবাড়িতে গেলেন। চাটুঞ্জে মশায়কে সামনের চাতালেই চাকরে তেল মাখাচ্ছিল, কেদারকে এমন অসময়ে আসতে দেখে তিনি একটু বিন্মিত হয়ে কাপড় গুছিয়ে পরে উঠে বসলেন । হাত তুলে নমস্কার করে বললেন, আসন কেদারবাব, ওরে বাবকে টুলটা এগিয়ে দে– কেদার বললেন, বড় বিপদে পড়ে এসেছি চাটুজে মশায়—আপনি ছাড়া আমি তো আর কাউকে জানি নে চিনিও নে—কার কাছেই বা যাবো— চাটুঞ্জে মশায় সোজা হয়ে বসে বিস্ময়ের সরে বললেন, কি বলন দিকি ? কি হয়েছে ? কেদার ব্যাপার সব খালে বললেন । চাটুজে মশাই শুনে একটু চুপ করে ভাবলেন । তার পর বললেন, আপনি ঠিকানা জানেন না ? —আজ্ঞে না— —প্রভাস কি ?