পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

રવo বিভূতি-রচনাবলী উপায় আছে পলিসে খবর দেওয়া । আপনার সঙ্গে সেই পরামর্শ করতেই আসা। আপনিও চলন আমাদের সঙ্গে, জোড়াসাঁকো থানায় গিয়ে পলিসের কাছে এজাহার করে দেওয়া যাক – গিরীন চিন্তিত মুখে বললে, তাতেই বা কি হবে ? সেই ভাবছি। ছেলেমানষে নয়, বয়েস হয়েছে ছাবিশ-সাতাশ, বিধবা—সে মেয়ে যা খুশি করতে পারে। পলিস হস্তুক্ষেপ করতে চাইবে না। তার ওপরে ওদের মানী বংশ, পলিসে কেস করতে গেলেই এ নিয়ে খবরের কাগজে একটা লেখালেখি হবে, ওদের ছবি বেরবে। একটা কেলেংকারীর কথা— ভাল কথা তো নয় ? চারিদিকে ছি ছি পড়ে যাবে। এ সবই ভাবছি কি না । তা উনি যে-রকম বলেন সে-রকম করতে হবে । চলন না হয় এখনি তবে পলিসে যাই— পলিসে খবর দিলেই এখনি প্রথম তো ওর মেয়েকে বেধে চালান দেবে—যদি অবিশ্যি পলিসে এ কেস নেয়। তাঁকেই আসামী করবে – গিরীন ধীরে ধীরে যে চিত্ৰপট কেদারের সামনে খুলে ধরলে, নিরীহ কেদার তাতে শিউরে উঠলেন । তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন, না না-পলিসে যাওয়ার দরকার নেই। গিরীন বললে, না কেন ? আমার মনে হয় পলিসে একবার যাওয়া উচিত। আমাদের মোটরে আসন জোড়াসাঁকো থানায় । আপনি গিয়ে এজাহার করুন। আদালতে আপনাকে সব খলে বলতে হবে এর পর । হয় কেস হোক । আপনার মেয়ে যখন এ পথে গিয়ে পড়েছেন, তখন তাঁরও একটু শিক্ষা হয়ে যাক না ! তিনটি বছর জেল ঠুকে দেবে এখন । ও অরণকেও ছাড়বে না - আপনার মেয়েকেও ছাড়বে না । যা হয় হবে, আপনি আসন আমাদের সঙ্গে জোড়াসাঁকো থানায় । চলন-কি বলো প্রভাস ? প্রভাস বললে, হ্যাঁ, তা যেতে হবে বৈকি। যা থাকে কপালে। শরৎ দিকে আসামী হয়ে ডকে দাঁড়াতে হবে বলে আর কি করা, চলন আপনি । আমার গ্রামের লোক আপনি । আমি এর একটা বিহিত না করে – গিরীন বললে, না, বিহিত করাই উচিত । খারাপ পথে যখন পা দিয়েছে, তখন ওদের শাস্তি হয়ে যাওয়াই উচিত। জেল হলেই বা আপনি করবেন কি ? আসন, উঠুন গাড়িতে, আপনার আহারাদি হয়েছে ? কেদার যেন অকুলে কুল পেয়ে বললেন, না এখনও হয় নি। ভাত চড়াতে যাচ্ছিলাম — —কি সাধনাশ ! খাওয়া হয় নি এখনও ? আপনি রান্না খাওয়া করে নিন—আমরা ততক্ষণ একটু অন্য কাজ সেরে আসি । কেদার ব্যস্তভাবে বললেন, তোমরা যেন আমায় না বলে থানায় যেও না বাবাজি । গিরীন বললে, আপনি না থাকলে তো পলিসে এজাহার করাই হবে না। আমরা কে ? আপনিই তো ফরিয়াদী—আপনার মেয়ে। আমরা বাইরের লোক-আমাদের কথা নেবেই না পলিস । আপনাকে না নিয়ে গেলে তো কাজই হবে না। আপনি খাওয়া-দাওয়া, করুন, আমরা বেলা চারটের মধ্যে আসব। প্রভাস ও গিরীন মোটর নিয়ে চলে গেলে কেদার খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবলেন । ঠিকমত ভাববার শক্তিও তখন তাঁর নেই-মাথার মধ্যে কেমন যেন সব গোলমাল হয়ে গিয়েছে । জীবনে কখনো এ-ধরনের ভাবনা ভাবেন নি তিনি –নিবিরোধী নিরীহ মানুষ কেদার—শখের যাত্রাদ্বলে গানের তালিম দিয়ে আর গ্রাম্য মদির দোকানে বসে হাসিগল্প করেই চিরদিন কাটিয়ে এসেছেন। এমন জটিল ঘটনাজালের মধ্যে কখনো পড়েন নি, এমন ধরনের চিস্তায় তাঁর মস্তিম্ভক অভ্যস্ত নয় । একটা কথাই শুধ বার বার তাঁর মাথায় খেলতে লাগল-পলিসে গেলে তাঁকে মেয়ের বিরথে এজাহার করতে হবে, তাতে তাঁর মেয়ের জেল হয়ে যেতে পারে।