কেদার রাজা ર૧૭ রাস্তার ধারেই অনেকগুলো চায়ের দোকান। আজ শরৎ নেই সঙ্গে—যে তাঁকে দোকানের চা খেতে বাধা দেবে, যে তাঁকে ইহকালের অনাচার থেকে সস্তপণে বাঁচিয়ে রেখে তাঁর । পরকালের মুক্তির পথ খোলসা করবার জন্যে সচেণ্ট ছিল চিরদিন—আজ সে নিম"মভাবে সমস্ত অনাচারের স্বাধীনতা দিয়ে তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছে—সতরাং অনাচার তিনি করবেনই । যা হয় হবে, পরকাল তিনি মানেন না। আরও জোর করে, ইচ্ছে করে তিনি যা খুশি অনাচার করবেন। কে দেখবার আছে তাঁর ? রাস্তার ধারের দোকান থেকে এক পেয়ালা চা খেয়ে কেদার আবার হনহন করে রাস্তা হটিতে লাগলেন --সারা রাত ধরে পথ চলে সকালের দিকে দত্তপক্সের থেকে কিছর দরে একটা গ্রামে এসে পথের ধারেই বসে পড়লেন। আর তিনি ক্ষুধা ও পথশ্ৰম-ক্লান্ত দেহটাকে টেনে নিয়ে যেতে পারছেন না । জনৈক গ্রাম্য লোক সকলে গাড় হাতে মাঠ থেকে ফিরে আসছিল, তাঁকে এ অবস্থায় দেখে বললে—কোথা থেকে আসা হচ্ছে ? —আজ্ঞে বারাসাত থেকে । কেদার একটু মিথ্যে কথার আমদানি করলেন, লোককে সন্ধান দেওয়ার দরকার কি, তিনি কোথা থেকে আসছেন ? লোকটি আবার বললে, তা এখানে বসে এমন ভাবে ? —একটু বসে আছি, এইবার উঠি । --আপনারা ? —ব্রাহ্মণ । so —আজ্ঞে, প্রাতঃপ্রণাম । আমার নাম হরিহর ঘোষ, কায়স্থ – আপনি যদি কিছ না মনে করেন, একটা কথা বলি ! আমার বাড়ি এবেলা দয়া করে পায়ের ধলো দিয়ে দুটি সেবা করে যান । আমরাও প্রসাদ পাবো এখন। চলন উঠুন। কেদার কিছুতেই প্রথমটা রাজী হন নি -কিন্তু তাঁর চেহারা দেখে লোকটার কেমন দয়া ও সহানুভুতির উদ্রেক হয়েছিল, সে পীড়াপীড়ি করে তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেল । কেদার দেখলেন লোকটি সম্পন্ন অবস্থার গ্রাম্য গহস্থ, বাইরে বড় চণ্ডীমণ্ডপ, অনেকগুলো ধানের মরাই, বাড়ির সামনে একটা পানভিরা ডোবা । সেই ছোট পানাভরা ডোবার আবার একটা ঘাট বাঁধানো দেখে দুঃখের মধ্যেও কেদার ভাবলেন---এদের দেশে এর নাম পক্লের, এর আবার বাঁধা ঘাট । এদের নিয়ে গিয়ে গড়ের কালো পায়রার দীঘিটা একবার দেখিয়ে দিতে 空哥一 ভাল লাগল জায়গাটা তব্যও । কেদার সারাদিন রইলেন, সন্ধ্যার সময় বিদায় নিতে চাইলে গহ্বামী আপত্তি করে বললে -- তা হবে না ঠাকুরমশায় । সামনে অন্ধকার রাত, আপনাকে কি ছেড়ে দিতে পারি এখন ? থাকুন না এখানে দুদিন । ইতিমধ্যে কেদার নিজের একটা মিথ্যা পরিচয় দিয়েছিলেন । তিনি গরীব ব্রাহ্মণ । গোবরডাঙার জমিদার বাড়িতে কিছর সাহায্য প্রাথনা করতে চলেছেন । লোকটা তাই বললে, দুদিন থাকুন, দেখি যদি আমাদের এখান থেকে আপনাকে কিছল সাহায্য করতে পারি। আমি দুপরেবেলা দু-একজনকে আপনার কথা বলেছি—সকলেই কিছ কিছ দিতে রাজী হয়েছে । কেদার বিপদে পড়লেন। তিনি গড়শিবপুরের রাজবংশের লোক, কারো কাছে হাত পেতে কখনো কিছ নিতে পারবেন না ওভাবে—যতই অভাব থাকুক। নিজেকে গরীব ব্রাহ্মণ বলে তিনি যে মহা মুশকিলে পড়ে গেলেন । वि. झ. ७-s४
পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৭৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।