পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা ૨૪s পবিত্রতা অনুভব করতে চাইছিল—যে ঘরে সে আজ দুদিন কাটিয়ে এসেছে তার সমস্ত গ্লানি, অপবিত্রতা, পাপ—এই দেবায়তনের ধপধনার সৌরভে, শংখঘণ্টার ধর্মনিতে, সমবেত ভক্তমণ্ডলীর প্রাণের নিবিড় আগ্রহে যেন ধয়ে যায়, মুছে যায়, শস্ত্রে হয়ে ওঠে, নিম'ল হয়ে ওঠে । কালীঘাটের মন্দিরের সেবকদের লোভ যেখানে উগ্র, প্রজাথীদের অর্থ শোষণ করবার হীন আকাংক্ষা সব ছাপিয়ে যেখানে প্রবল হয়ে উঠেছে—পজার মধ্যে ব্যবসা এসে ঢুকেছে, বৈষয়িকতা এসে ঢুকেছে--সে সব দিক পল্লীবাসিনী শরতের জানা নেই। তার মগধ মনের ভক্তি ওর চোখে যে অঞ্জন মাখিয়েছে, তার সাহায্যে প্রাচীন ভারতের সংস্কারপত বাহান্ন পীঠের এক মহাপীঠস্থান জাগ্রত হয়ে উঠেছে ওর মনে, বন্ধদেবের সেই অমর বাণী ‘মনই জগৎকে সন্টি করে’—শরতের মনে মহারদের চক্লছিন্ন দক্ষকন্যা সতীর দেহাংশ সতী নারীর তেজ ও পাতিব্রত্যের প্রতীক স্বরুপ এখানকার মাটিতে আশ্রয় নিয়েছে । এই মাটি তার মনে তেজ ও বল দিক ৷ সন্ন্যাসিনীর সামনে বসে সারারাত কাটিয়ে দিলে সে। কিছ: কিছু কথাও হ’ল সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে । সামান্য কিছু ফলমল কিনে ক্ষন্নিবত্তি করলে । সন্ন্যাসিনী বললে, বাড়ি কোথায় তোমার ? —গড়শিবপুরে । ---এখানে কোথায় থাকো ? -- কোথাও না মা । মন্দিরেই আছি এখন ৷ আশ্রয় নেই কোথাও । — তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি বড়ঘরের মেয়ে । কে আছে তোমার ? কি করে এখানে এলে মা ? একটা কথা জিজ্ঞেস করি কিছু মনে কোরো না-কারো সঙ্গে –মানে কেউ ভুলিয়ে নিয়ে এসেছিল ? কিন্তু একথা জিজ্ঞাসা করার সঙ্গে সঙ্গেই শরতের সরল, তেজোদ”ত মুখের সকমার রেখার দিকে, তার ডাগর, কালো, নিপাপ চোখ দুটির দিকে চেয়ে সন্ন্যাসিনী এ প্রশ্ন করার জন্যে নিজেই লভিজত হয়ে পড়ল । শরৎ মুখ নিচু করে বললে, না, মা । ও সব নয়। তবে সব তো বোঝেন, মেয়েমানুষের অনেক শল্য- বিশেষ করে মা, যে সকলকে বিশ্বাস করে তার শত্র এখন দেখছি চারিদিকেই । ভূলিয়েই এনেছিল বটে মা তবে আমি ভুলে আসি নি। বাবলেন মা ।


তোমার বয়েস কত মা ?

- সাতাশ বছর । –কিন্তু তোমার রােপ এই বয়েসে যা আছে, তা কুড়ি বছরের যাবতীরও থাকে না— তোমার বড় বিপদ এই কলকাতা শহরে। আমার এখানে থাকো—কোথাও গেলে তোমার বিপদ ঘটতে দেরি হবে না মা । * শরতের চোখ ছাপিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। এই তো মা সতী রাণী তাকে আশ্রয় দিয়েছেন। ঠাকুর-দেবতার মাহাত্মা কলিকালে তবে নাকি নেই ? বাবা তো নাস্তিক, সন্দেআহ্নিকটা পৰ্য্যস্ত করবেন না। সে কত বকুনির পর জোর করে আসন পেতে বাবাকে আহ্নিকে বসাত । বাবার কথা মনে পড়তে শরতের চোখের জল আর থামে না । বাবা কি আর সন্দেআহ্নিক করছেন ? উত্তর দেউলে এই সন্ধ্যায় বাদড়নখীর জঙ্গল ঠেলে কে সন্দে-পিদিম দিচ্ছে আজকাল ? কেউ না । বহদের থেকে সে দেখতে পায়, ভগ্ন দেবীমত্তি'র পায়ের চিহ্ন বনে-জঙ্গলে নিন্দেশহীন কালো নিশীথ রাত্রে এখনও অমনি পড়ে যাচ্ছে, ভয়ে শিউরে উঠে কুটীরের ঘরে অগ’লবন্ধ করবার জন্যে সে আর সেখানে নেই। রাজলক্ষী ? সে কি আছে—সে আর সেখানে আসে না । কেনই বা আসবে ? वि. ब्र. ७-ss