পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৯২ - বিভূতি-রচনাবলী শরং বলল, মিথ্যে কথা । বাবা কখনো আসেন নি। হ্যাঁ প্রভাসদা সত্যি ? বাবা এসেছেন সত্যি বলনে— প্রভাস বলল, মিথ্যে বলে লাভ ? এসো দেখবে চলো। গাড়ি আনি । —গাড়ি আনতে হবে না প্রভাসদা। বাবা কখনো আসেন নি । এলে আপনাদের সঙ্গে এখানে আসতেন । —আমাদের কথা বিশ্বাস হ’ল না ? যাবে কি না তাই বলো । কলকাতা শহরের রাস্তা—একটি তরণী মেয়েকে ঘিরে তিন-চারজন লোককে কথা কাটাকাটি করতে দেখে দু-একজন লোক জমতে শরে করল। একজন ছোকরা এগিয়ে এসে বলল, কি হয়েছে মশাই ? গিরীন কুণ্ড ঈষৎ সলজ সরে বলল, ও আমাদের ঘরোয়া ব্যাপার মশাই। আপনারা যান । আর একজন বলল, ইনি কে ? কি বলছেন ? আপনারা নিয়ে যেতে চাইছেন কোথায় ? প্রভাস বলল, উনি আমাদের লোক— গিরীন বলল, মশাই আপনারা ভন্দর লোক, চলে যান। আমাদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে—সে-সব কথা শুনে আপনাদের লাভ কি ? আমাদের মেয়েমানুষ ঝগড়া হয়ে রাগ করে চলে এসেছে, তাই নিয়ে যেতে এসেছি । কে ঐকজন বাইরে থেকে বলে উঠল—ওহে চলে এসো না-ওসবের মধ্যে থাকবার দরকার নেই, ও বুঝতে পেরেছি। এসব জায়গায় ওরকম কত কাল্ড নিত্যি ঘটছে।– শরৎ অবাক, স্তম্ভিত । এমন সহজ ভাবে এমন নিলfeজ মিথ্যা কথা কেউ যে বলতে পারে তা তার ধারণার বাইরে । সে এর প্রতিবাদ করতেও পারলে না, প্রকাশ্য রাজপথে অপরিচিত পর্ষ বেটিতা অবস্থায় কথা-কাটাকাটি করা, চীৎকার করে ঝগড়া করা তার ঘটে লেখা নেই, তার স্বভাবজ শোভনতা-বোধ মুখে ষেন হাত চাপা দেয় । সে মরে যাবে তবুও পথে দাঁড়িয়ে ইতরের মত ঝগড়া করতে পারবে না । লোকজন চলে যেতে শুরু করলে । শরৎ এগিয়ে যেতে চাইল, গিরীন কুণ্ড এসে পথ আগলে দাঁড়িয়ে বলল, নাও চলো—খব ঢলান ঢলালে রাস্তায় দড়িয়ে, এতগুলো ভন্দরলোক জটিয়ে ফেললে চারিদিকে -এখন ফিরে চলো আমাদের সঙ্গে-রাগ অভিমান করে কি পালিয়ে এলে চলে চাঁদ ? w গিরীন যেন রাস্তার লোককে শুনিয়ে শুনিয়ে এ কথাগুলো চে'চিয়েই বলল । শরতের হঠাৎ বড় রাগ হ’ল, গিরীনের মিথ্যা কথায়, ধমত্তামি ও শেষের কথার ইতর সম্বোধনে । o সে বলল, আবার ঐ কথা মুখে ? আপনার সাধ্য নেই এখান থেকে আমায় নিয়ে যান। আমি এখানে চলে এলাম—এখানেও আপনারা এলেন ? পথ ছেড়ে দিন বলছি— শরৎ তখনই মনে ভেবে দেখলে এই দল যদি তার সঙ্গে যায় বা যে মহিলাটির আশ্রয় সে পেয়েছে তারা যদি এখন এখানে এসে পড়ে, তবে এদের সাজানো মিথ্যে কথায় তাদের মনে সন্দেহ জাগবে এবং তারা তাকে কুচরিত্রা ভেবে তখনই পরিত্যাগ করে চলে যাবে। তা হলে সে একেবারে অসহায়—এই সব শনলে গৌরী-মা কি তাকে জায়গা দেবেন আর 2 যাক, যদি কেউ আশ্রয় না দেয়, গঙ্গা তো কেউ কেড়ে নেবে না ? গিরীন আবার বলল, দাঁড়াও এখানে গাড়ি ডাকি –মিছে রাগ করে কি হবে বলো । সর নিচু ও নরম করে বলল, চলো-কেন মিথ্যে পথে পথে ঘুরে কন্ট পাও । এখানে আছ কোথায় বলো তো ? খুব সুখে থাকবে । আমাদের সব ঠিক হয়ে গিয়েছে। প্রভাস