পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫిసిఆ বিভূতি-রচনাবলী রেলে যেতে যেতে একটা চমৎকার জায়গা সে দেখেছে - মনের মধ্যে গে’থে গেল জায়গাটা । কাজরা পাহাড়ের একটা কি সবাহৎ গাছের ছায়ায় অনেকটা যেন পাথরের সান বাঁধানো রোয়াক, চারিধারে শুধু পাহাড়, নিকটেই একটা ঝনfা ঝিরঝর করে পাহাড় থেকে বয়ে নেমে এসেছে । কি শাস্তি পাহাড়ের ওপর সান বাঁধানো রোয়াকের মত পাথরটাতে । কি ছায়া । ট্রেনের এককোণে সে বসে বসে ভাবে বাবাকে নিয়ে সে ওইখানে একটা ছোট ঘর বাঁধবে। মাঝে মাঝে গড়শিবপুর থেকে বাবা আর সে ওখানে এসে বাস করবে দু-মাস, তিনমাস । জ্যোৎস্না রাতে এদিকের সেই যে পাথরখানা, বাবা ওটার ওপর বসে বেহালা বাজাবেন, তাঁর সেই প্রিয় গানটি গাইবেন— ‘তারা কোন অপরাধে, এ দীঘ মেয়াদে, সংসার গারদে থাকিব বল”— ভাবতে বেশ লাগে ৷ যদিও সে জানে, এসব ভাবনা আকাশকুসুম, কোথায় বা বাবা, কোথায় কে ? এত দীর দর সব জায়গা আছে তা হলে ? গড়শিবপর থেকে, কলকাতা থেকে ? সত্যি পৃথিবীটা কত বড়–না মিন ? মিন হেসে খিল খিল করে গড়িয়ে পড়ে বলল-দিদি, তুমি বড় ছেলেমানষে। কিচ্ছ জানো না । —মুখ্য যে তোর দিদি-তোরা আজকাল কত পড়িস বোন, কত জানিস: —দিদি, তোমাদের বাড়ির যে বড় গড়টা আর সেই ভাঙা কি কি পাথরের মাত্তি সেই বলেছিলে ? —বারাহী দেবীর মাত্তি । —সেই অন্ধকারে চলে বেড়ায় জঙ্গলের মধ্যে—না ? —হ’্যা ভাই মিন । —সামনে যে পড়ে তাকে মেরে ফেলেন বুঝ ? —এই রকম সবাই বলে । গড়ের জঙ্গলে সেই তিথিতে কেউ যায় না প্রাণের ভয়ে । —সব দিন বুঝি নয় ? —তিথির দিনে । —আচ্ছা দিদি-কখনো এরকম হতে দেখেছ তুমি ? তোমাদেরই তো গড়— শরৎ গড়শিবপরের জঙ্গল থেকে বহন দরে থেকেও যেন ভয়ে শিউরে উঠে বললে—না দিদি, আমি কিছু দেখি নি চোখে ৷ তবে পায়ের দাগ দেখেছে অনেকে—আমিও দেখেছি —কিসের পায়ের দাগ ? —-বারাহী দেবীর পাথরের পায়ের ছাপ— —সত্যি ? —সত্যি ভাই মিন । তোর গা ছয়ে বলছি— শরৎ যাবতী হলে কি হবে, ছেলেপলে হয় নি, একা নিজন গ্রাম্য সংসারে চিরদিন কাটিয়েছে, বালিকা-বভাব তার যায় নি। যায় নি বলেই সে বালিকাদের সঙ্গে নিজেকে যত মিশ খাওয়াতে পারে, বড়দের দলে তেমন পারে না । মিনার সঙ্গে তাই তার মিলছিল ভালই—যেমন গাঁয়ে থাকতে মিলেছিল রাজলক্ষীর সঙ্গে । বখতিয়ারপর থেকে ওরা গেল রাজগীর । কত্তার শরীর ভাল নয়,গিনীর বাতের ধাত— রাজগৗরের উষ্ণ-কুন্ডে স্নান করে বাত ভাল করতে চান । মিন ও শরৎ বাসা থেকে বেরিয়ে রাজগৗরের বৌদ্ধ মঠ পার হয়ে বাজার ও উষ্ণ-কুণ্ডকে ডাইনে রেখে বেণীবন ও বৈভার