পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা ২৯৭ পৰবতের ছায়ায় ছায়ায় সোন ভাণ্ডার গুহা পয্যন্ত বেরিয়ে আসে সরস্বতী নদীর ধারের পথ বেয়ে। ওদের ডাইনেই থাকে সেই গপ্রকুট পৰ্বত ও সেই সাপবিত্র বেণবেন, বন্ধদেব যেখানে শিষ্য আনন্দকে উপদেশ দিয়েছিলেন । হাজার বছর ধরে পাবত্য সরস্বতী নদীর বাতাসে বন্ধদেবের পদচিহ্ন-পত করাড ওবেণীবন ধ্বনিত হয়, হাজার হাজার বছরের জ্যোৎনালোকে বৈভার পর্বতের শিখরদেশ উভাসিত হয়-ছেলেমানষে মিন ও অশিক্ষিতা গ্রাম্য মেয়ে শরৎ লোকেতার কিছুই খবর রাখে না। তবুও মিন তার স্কুলপাঠ্য ইতিহাসের জ্ঞানকে আশ্রয় করে বলল – এই যে রাজগৗর দেখছো দিদি, এর নাম রাজগহ । মগধের রাজধানী ছিল রাজগৃহ — জরাসন্ধের নাম জানো তো দিদি ? এখানে জরাসধের রাজধানী ছিল— মগধের খবর রাখে না শরৎ, কিন্তু কাশীরাম দাসের মহাভারত ও গ্রাম্য যাত্রার কল্যাণে জরাসন্ধের নাম তার অপরিচিত নয়। শরতের চোখ বিস্ময়ে বড় বড় হয় । জরাসন্ধের রাজ্যে এসে গিয়েছে তারা-পরাণের সেই জরাসন্ধ ? কতদরে এসে পড়েছে আজ “কত দর বিদেশে ? এখানে প্রতিদিন ওরা উষ্ণ কুডে স্নান করে, গিনীকে ধরে এনে রোজ স্নান করাতে হয়, শরৎ অত্যন্ত যত্বে নিয়ে আসে,অত্যন্ত যত্বে নিয়ে যায়। গিন্নী শরতের ওপর খুব সস্তন্ট —সেবাপরায়ণা শরৎ প্রাণ দিয়ে আশ্রয়দারীর সেবা করে । সে সেবার মধ্যে এতটুকু ফাঁকি নেই । o রাজগৗর থাকতেই গিনীর এক জা কোন জায়গা থেকে ছেলেপলে নিয়ে ওদের ওখানে হাওয়া বদলাতে এলেন । ইনি নাকি বেশ বড়লোকের মেয়ে, স্বামী পশ্চিমের কোন শহরে ইনজিনিয়ার, মোটা পয়সা রোজগার করে। সঙ্গে দটি ছেলেমেয়ে, একজন আয়া এসেছে । সবাঙ্গে সোনার গহনা-গামোরে মাটিতে পা পড়ে না । দোহারা গড়ন, রং খর্ব ফস"াও নয়, খুব কালোও নয়। দাম্ভিক মথেশ্ৰী । প্রথম দিন থেকেই মিনার কাকীমা শরতের ওপর ভাল ব্যবহার করত না। যে দিন গাড়ি থেকে নামল-সেই দিনই বিকেলে মিন ও শরৎ রাজগীরের বাজার ছাড়িয়ে সরস্বতী নদীর ধারে বেড়িয়ে সন্ধ্যার কিছ আগে ফিরল। মিনার কাকী অমনি শরৎকে বলে উঠল, ছেলে দটোকে একটু কোথায় ধরবে, না কোথা থেকে এখন বেড়িয়ে ফিরলো—বামনী, ও বামনী, খোকাদের কাপড় ছাড়িয়ে গা-হাত ধাইয়ে দাও— তার পর থেকে প্রত্যেক সময় সে শরৎকে ডাকে ‘বামনী’ বলে । শরৎ নিজের হাতেই দবেলার রান্নার ভার নিয়েছিল। বাড়ির পাচিকাকে যে চোখে দেখা উচিত, মিনার কাল সেই চোখেই দেখতো ওকে । একদিন মিনকে ডেকে বলল, হ্যারে, বামনীকে নিয়ে রোজ রোজ যাস কোথায় ? —কে ? দিদি ? দিদির সঙ্গে বেড়াতে যাই— —দ্যাখ, তোকে বলে দিই মিন । চাকর-বাকরের সঙ্গে বেশী মেশামেশি করা ভাল নয় । সেবার তো দেখি নি, ওকে কোথা থেকে আনলি ? —মা কলকাতা থেকে এনেছে এবার । —ক'টাকা মাইনে ঠিক হয়েছে জানিস ? —আমি জানি নে কাকীমা। তবে আমার মার যিনি গর-মা, কালীঘাটে থাকেন, তিনিই দিয়েছেন । —যাকগে, ওদের সঙ্গে এত মেশামেশি ভাল নয় বাপ । ওদের নাই দিলেই মাথায় চড়ে বসবে, চাকর-বাকরকে কখনো নাই দিতে নেই। আমনি একদিন বলে বসবে দ-টাকা মাইনে প্রবাড়িয়ে দাও—ওসব করিস নে ।