পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

éOty বিভূতি-রচনাবলী মুখোমুখি তক করা শরতের অভোস নেই। সে এমন একটি অভূত ধরনের নিশ্বিকার, স্বাধীন ভঙ্গীতে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল, একটা কথাও না বলে—যাতে মিনর কাকীমা নিজে যেন হঠাৎ ছোট হয়ে গেল এই অদ্ভুত মেয়েটির ধীর, গম্ভীর, দপিত ব্যক্তিত্ত্বের নিকট । মিনর কাকীমা কিস্ত দমবার মেয়ে নয়, শরতের সঙ্গে রান্নাঘর পয‘্যন্ত গিয়ে ঝাঁজালো এবং অপমানজনক সরে বললে, কথার উত্তর দিলে না যে বড় ? আমার কথা কানে যায় না নাকি ? শরৎ রান্নাঘরের কাজ করতে করতে শান্তভাবে বললে, শনলাম তো যা বললেন— -শনলে তো বুঝলাম। সেই রকম কাজ করতে হবে। আর একটা কথা বলি । তোমার বেয়াদবি এখানে চলবে না জেনে রেখো । আমি কথা বললাম আর তুমি এমনি নাক ঘুরিয়ে চলে গেলে, ও-সব মেজাজ দেখিও অন্য জায়গায় । এখানে থাকতে হলে— ও কি, কোথায় চললে ? —আসছি, পাথরের বাটিটা নিয়ে আসি ওঘর থেকে— মিনার কাকীমার মুখে কে যেন এক চড় বসিয়ে দিলে । সে অবাক হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে রইল। এ কি অদ্ভুত মেয়ে, কথা বলে না, প্রতিবাদ করে না, রাগঝালও দেখায় না—অথচ কেমন শান্ত, নিবিকার, আত্মসহ ভাবে তুচ্ছ করে দিতে পারে মানুষকে । মিনার কাকীমা জীবনে কখনো এমন অপমানিতা বোধ করে নি নিজেকে । শরৎ ফিরে এলে তাই সে ঝাল ঝাড়বার জন্যে বললে, কাল থেকে দর্পরের পর বসে বসে ডালগুলো বেছে হড়িতে তুলবে । কোথাও বেরবে না । মিনার কাকা তাঁর সন্ত্রীর চীৎকার শনে ডেকে বললেন, আঃ, কিদবেলা চে'চামেচি করো রাঁধুনীর সঙ্গে ? অমন করলে বাড়িতে চাকরবাকর টিকতে পারে ? —কেন গো, রাধনীর উপর যে বন্ড দরদ দেখতে পাই— —আঃ, কি সব বাজে কথা বল ! শুনতে পাবে— —শনতে পেলে তো পেলে—তাতে ওর মান যাবে না। ওরা কি ধরনের মানুষ তা জানতে বাকি নেই—আজ এসেছে এখানে সাধ সেজে তীথ করতে । —লোককে অপ্রিয় কথাগুলো তুমি বড্ড কট কট করে বলো। ও ভাল না— মিনর কাকীমা ঝাজের সঙ্গে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললে, আমায় তোমার পাদ্রী সাহেবের মত মন্ম"জ্ঞান শিখিয়ে দিতে হবে না—থাক—ে মিনার কাকাটিকে শরৎ দরে থেকে দেখেছে। সামনে এ পষ‘্যন্ত একদিনও বার হয় নি। লোকটি বেশ নাদস্যে-নদস চেহারার লোক, মাথায় ঈষৎ টাক দেখা দিয়েছে, সাহেবের মত পোশাক পরে আপিসে বেরিয়ে যায়, বাড়িতে কখনো চে'চামেচি হকিডাক করে না, চাকরবাকরদের বলাবলি করতে শুনেছে যে লোকটা মদ খায়। মাতালকে শরৎ বড় ভয় করে, কাজেই ইচ্ছে করেই কখনো সে লোকটির ত্রিসীমানায় ঘে"ষে না । সেদিন আবার তার মন উতলা হয়ে উঠল খোকাকে দেখবার জন্যে । খোকাকে একটা ঘোড়া দেবে বলে এসেছিল, হাতে পয়সা নেই, এদের কাছে মুখ ফুটে চাইতে সে পারবে না, অথচ কি করা যায় ? কিন্ত শেষ পয্যন্ত খোকাকে খেলনা দেবার টানই বড় হ’ল । সে মিনার কাকীমাকে বললে —আমায় কিছু পয়সা দেবেন আজ ? মিনার কাকীমা একটু আশ্চয’ হ’ল । শরৎ এ পয্যন্ত কখনো কিছল চায় নি। বললে—ক’ত ? —এই–পাচ আনা—