পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা రిO মিনার কাকীমা মনে মনে হিসেব করে দেখলে শরৎ পাঁচ মাস হ’ল এখানে রাঁধনীর কাজ করছে, এ পয্যন্ত তাকে মাইনে বলে কিছয় দেওয়া হয় নি, সেও চায় নি। আজ এতদিন পরে মোটে পাঁচ আনা চাওয়াতে সে সত্যিই আশ্চয়া হ’ল । অচিল থেকে চাবি নিয়ে বাক্স খুলে বললে, ভাঙানো তো নেই দেখছি, টাকা রয়েছে । ও বেলা নিও— শরৎ ঠিক করেছিল আজ দাপরের পরে কাজকর্ম সেরে সে খোকার কাছে যাবে। মাখ ফুটে সে বললে, টাকা ভাঙিয়ে আনলে হয় না ? আমার বিকেলে দরকার ছিল । -- —কি দরকার ? —ও আছে একটা দরকার— —বলোই না— —একজনের জন্যে একটা জিনিস কিনবো । —কে ? শরৎ ইতস্ততঃ করে বললে রেণুকা জানে—পটলের বউ— মিনার কাকীমা মুখ টিপে হেসে বললে, আপত্তি থাকে বলবার দরকার নেই, থাক গে। নিও এখন— শরৎ রেণুকাকে নিয়ে বিশ্বনাথের গলিতে ঘোড়া কিনতে গেল । এক জায়গায় লোকের ভিড় ও কান্নার শব্দ শনে ও রেণুকাকে দড়ি করিয়ে রেখে দেখতে গেল । একটি আঠারোউনিশ বছরের বাঙালীর মেয়ে হাউ হাউ করে কাঁদছে, আর তাকে ঘিরে কতকগুলো হিন্দুস্থানী মেয়েপরে্ষ খেপাচ্ছে ও হাসাহাসি করছে। মেয়েটি বলছে, আমার গামছা ফেরত দে-ও মুখপোড়া, যম তোমাদের নেয় না, মণিকণিকা ভুলে আছে তোদের ? শালারা, পাজি ছাঁচোরা—গামছা দে– শরৎকে দেখে ভিড় সসম্ভ্ৰমে একটু ফাঁক হয়ে গেল । কে একজন হেসে বললে, পাগলী, মাইজী—আপলোক হঠ যাইয়ে— মেয়েটি বললে, তোর বাবা মা গিয়ে পাগল হোক হারামজাদারা—মণিকণিকায় নিয়ে যা ঠ্যাং-এ দাঁড় বোধে, পড়তে কাঠ না জটক-দে আমার গামছা—দে— যে ওকে পাগলী বলেছিল সে তার পণ্যশ্লোক পিতামাতার উদ্দেশে গালাগালি সহ্য করতে না পেরে চোখ রাঙিয়ে বললে, এইয়ো—ম সামহোলকে বাত বোলো—নেই তো মন মে ইটা ঘষা দেগা— মেয়েটির পরনে চমৎকার ফুলন পাড় মিলের শাড়ি, বৰ্ত্তমানে অতি মলিন—খবে এক মাথা চুল তেল ও সংস্কার অভাবে রক্ষ ও অগোছালো অবস্হায় মুখের সামনে, চোখের সামনে, কানের পাশে পড়েছে, হাতে কাঁচের চুড়ি, গায়ের রং ফস", মুখশ্ৰী একসময়ে ভাল ছিল, বৰ্ত্তমানে রাগে, হিংসায়, গালাগালির নেশায় সব প্রকার কোমলতা-বজ্জিত, চোখের চাউনি কঠিন, কিন্ত তার মধ্যেই যেন ঈষৎ দিশাহারা ও অসহায় । শরতের বকের মধ্যে কেমন করে উঠল। রাজলক্ষী ? গড়শিবপরের সেই রাজলক্ষী ? এর চেয়ে সে হয়তো দু-তিন বছরের ছোট—কিস্ত সেই পল্লীবালা রাজলক্ষীই যেন । বাঙালীর মেয়ে হিন্দহোনীদের হাতে এভাবে নিয’্যাতিতা হচ্ছে, সে দাঁড়িয়ে দেখতে পারবে এই বিশ্বনাথের মন্দিরের পবিত্র প্রবেশপথে ? শরৎ সোজাসুজি গিয়ে মেয়েটির হাত ধরে বললে, তুমি বেরিয়ে এসো ভাই—আমার সঙ্গে== মেয়েটি আগের মত কাঁদতে কাঁদতে বললে, আমার গামছা নিয়েছে ওরা কেড়ে—আমি