পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ర్ఫిషి বিভূতি-রচনাবলী বকাসীদের বড় বউ খবর পেয়ে এসে শরতের সঙ্গে অনেকক্ষণ গলপ করলে । সে বললে, কি ভাল লেগেছে ভাই তোমাকে, তুমি এসেছ শনে ছটে এলাম—একটা কথা বলবে ? —কি, বলনে ? —তোমার বাপের বাড়ি কোথায় ভাই ? -গড়শিবপর, যশোর জেলায়। —থবশুরবাড়ি ? —বাপের বাড়ির কাছেই— —বাবা মা আছেন ? শরৎ চুপ করে রইল। দ্য চোখ বেয়ে টস-টস করে জল গড়িয়ে পড়ল বাবার কথা মনে পড়াতে । সে তাড়াতাড়ি চোখের জল অচিল দিয়ে মুছে নিয়ে বললে, ওসব কথা জিজ্ঞেস করবেন না দিদি— বকাসীদের বউ বধিমতী, এ বিষয়ে আর কিছ জিজ্ঞেস করলেন না তখন। কিছুক্ষণ অন্য কথার পরে শরৎ যখন ওদের কাছে বিদায় নিয়ে চলে আসছে, তখন ওকে আড়ালে ডেকে বললে, আমি তোমাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করতে চাই নে ভাই—কিন্তু আমার দ্বারা যদি তোমার কোন উপকার হয়, জানিও—তা যে করে হয় করবো । তোমাকে যে কি চোখে দেখেছি ! শরৎ অশ্লভারনত চোখে বললে, আমার ভাল কেউ করতে পারবে না দিদি। যদি এখন বাবা বিশ্বনাথ তাঁর চরণে স্হান দেন, তবে সর জবালা জড়িয়ে যায় । —তুমি সাধারণ ঘরের মেয়ে নও কিন্ত— —খব সাধারণ ঘরের মেয়ে দিদি । ভালবাসেন তাই অন্যরকম ভাবেন । আচ্ছা এখন আসি । —আবার এসো খুব শীগগির— শরৎ ও পটলের বোঁ পথ দিয়ে চলে আসতে সেদিনকার সেই পালগীর সঙ্গে দেখা । সে রাস্তার ধারে একখানা ছে’ড়া কাপড় পেতে বসেছে জাঁকিয়ে—আর যে পথ দিয়ে যাচ্ছে, তাকেই বলছে—একটা পয়সা দিয়ে যাও না ? *g শরৎ বললে, আহা, সেদিন ওর কিছু খাওয়া হয় নি, পয়সা আছে কাছে ভাই ? পটলের বউ বললে, পাঁচটা পয়সা আছে— —ওকে কিছু খাবার কিনে দিই—এসো। নিকটবৰ্ত্তী একটা দোকান থেকে ওরা কিছদ খাবার কিনে নিয়ে ঠোঙাটা পাগলীর সামনে রেখে দিয়ে বললে, এই নাও খাও— পাগলী ওদের মখের দিকে চেয়ে কোন কথা না বলে খাবারগুলো গোগ্রাসে খেয়ে বললে—আরও দাও— শরৎ বললে, আজ আর নেই—কাল এখানে বসে থেকো বিকেলে এমনি সময় । কাল দেবো । পটলের বেী বললে, ভাই, আমাদের বাড়ি থেকে দটো রোধে নিয়ে এসে দেবো কাল ? —বেশ এনো। আমি একটু তরকারী এনে দেবো। আমার যে ভাই কোন কিছ. করবার ষো নেই—তা হলে আমার ইচ্ছে করে ওকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে ভালো ক'রে পেট ভরে খাওয়াই। দুঃখ-কন্টের মৰ্ম্ম নিজে না বঝেলে অপরের দুঃখ বোঝা যায় না। বাঙালীর মেয়ে কত দুঃখে পড়ে আজ ওর এ দশা—তা এক ভগবান ছাড়া আর কেউ বলতে পারে না ।