পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9్పl} বিভূতি-রচনাবলী —জোর করে খাওয়াবে না কেউ, তুমি চলো। - মেয়েদের মধ্যে সবাই বড়ো-হাবড়া, এক আধ জন অল্পবয়সী মেয়েও আছে—কিন্তু তারা এসেছে বড়ীদের সঙ্গে, কেউ নাতনী, কেউ মেয়ে সেজে । বড়ীরা বড় ঝগড়াটে, পাতা আর জলের ঘটি নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বাধিয়েছে। শরৎ বললে, মা বসন, আমি জল দিচ্ছি আপনাদের— একজন জিজ্ঞেস করলে—তুমি কি জেতের মেয়ে গা ? ...বোমনের মেয়ে, মা । —কাশীতে এলে সবাই বামনে হয়। কোথায় থাকো তুমি ? —বাঙালীটোলায় থাকি মা—কিছু ভাববেন না আপনি । ছত্রের পরিবেশনকারিণী একটি মধ্যবয়স্কা মেয়ে শরতকে বললে, তোমরা বসছো না বাছা ? —আমি খাবো না মা । সে অবাক হয়ে বললে, তবে এখানে কেন এসেছ ? —দেখতে । রেণুকা বললে, উনি বড়লোকের মেয়ে, ছত্তর খুলবেন কাশীতে । তাই দেখতে এসেছেন কি রকম খাওয়া-দাওয়া হয়। এক মহমত্তে যে-সব বড়ী খেতে বসেছে এবং যারা পরিবেশন ও দেখাশুনো করছে, সকলেরই ধরন বদলে গেল । যে বড়ী শরতের জাতি-বণের প্রশ্ন তুলেছিল, সে-ই সকলের আগে একগাল হেসে বললে, সে চেহারা দেখেই আমি ধরেছি মা, চেহারা দেখেই ধরেছি। আগন কি ছাই চাপা থাকে ? তা দ্যাথো রাণীমা, একটা দরখাস্ত দিয়ে রাখি। আমার এই নাতনী, অল্পবয়সে কপাল পড়েছে, কেউ নেই আমাদের । আপনার ছত্তর খুললে এর দটো বন্দোবস্ত যেন সেখানে হয় । ভগবান আপনার ভাল করবেন। কুচবেহার কালীবাড়িতেও আমাদের নাম-লেখানো আছে মাসে পনেরো দিন । বাকী পনেরো দিন আমবেড়েয় আর এই ছত্তরে— আর চার-পাঁচজন নিজেদের দুরবস্হা সবিস্তারে এবং নানা অলঙ্কার দিয়ে বর্ণনা করছে, এমন সময় পায়েস এসে হাজির হ’ল । একটা ছোট পিতলের গামলার এক গামলা পায়েস, , খেতে বসেছে প্রায় জন ত্রিশ-বরিশ, বেশি করে কাউকে দেওয়া সম্ভব নয়—অথচ প্রত্যেকেই নিলজিভাবে অনুযোগ করতে লাগল তার পাতে পায়েস কেন অতটুকু দেওয়া হ’ল, রোজই তে পায়েস কম পায়, তাকে আজ একটু বেশী করে দেওয়া হোক । কেউ কেউ ঝগড়াও আরম্ভ করলে পরিবেশনকারিণীর সঙ্গে । শরৎ রেণুকাকে নিয়ে বাইরে চলে এল । বললে, কেন ওরকম বললি ? ছিঃ—ওরা সবাই গরীব, ওদের লোভ দেখাতে নেই। তার পর অন্যমনস্কভাবে বললে, ইচ্ছে করে ওদের খুব করে পায়েস খাওয়াই । আহা, খেতে পায় না, ওদের দোষ নেই—ছত্তরে বন্দোবস্ত ঠিকই আছে, একটু পায়েস দেয়, একটু ঘি দেয়—তবে ছিটেফোঁটা। রেণুকা বললে, বাবা, বড়ীগুলো একটু পায়েসের জন্যে কি রকম আরম্ভ করে দিয়েছে বল তো ? খাচ্ছিস পরের দয়ায়—আবার ঝগড়া । ভিক্ষের চাল কাঁড়া-অাঁকাড়া ! —আহা ভাই—কত দুঃখে যে ওরা এমন হয়েছে তা তুমি আমি কি জানি ? মানষে কি সহজে লৎজা-শরম খোয়ায় ? ওদের বড় দুঃখ । সত্যি ভাই, আমার ইচ্ছে করছে আজ যদি আমার ক্ষমতা থাকতো, বাবার নামে ছত্তর দিতাম। আর তাতে নিজের হাতে বড় কড়ায়