পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిపిరి বিভূতি-রচনাবলী গোপেশ্বর চাটুজে বললেন, তার পর মা, তোমার কথা বলো। কার সঙ্গে এসেছো কাশীতে ? ও মেয়েটি বুঝি চোখে দেখতে পায় না ? ও কেউ হয় তোমাদের ? শরতের কোন দ্বিধা হ’ল না এই পিতৃসম স্নেহশীল বন্ধের কাছে সব কথা খালে বলতে । অনেক দিন পরে সে এমন একজন মানুষ পেয়েছে, যার কাছে বকের বোঝা নামিয়ে হালকা হওয়া যায়। কথা শেষ করে সে আকুল কান্নায় ভেঙে পড়ল । বন্ধ গোপেশ্বর চাটুজ্জে সব শনে কাঠের মত বসে রইলেন । --এসব কি শুনছেন তিনি ? এও কি সম্ভব ? শেষে আপন মনেই যেন বললেন, তোমার বাবা রাজামশায় তা হলে দেশেই—না ? —তা জানি নে জ্যাঠামশায়, বাবা কোথায় তা ভেবেছিও কতবার—তবে মনে হয় দেশেই আছেন তিনি—যদি এতদিন বেচে থাকেন— কান্নার বেগে আবার ওর কণ্ঠস্বর রন্ধ হয়ে গেল । —আচ্ছা,থাক মা,কে"দো না। আমিও বলছি শোনো—গোপেশ্বর চাটুজে যদি অভিনন্দ ঠাকুরের বংশধর হয়, তবে এই কাশীর গঙ্গাতীরে বসে দিব্যি করছি তোমাকে তোমার বাবার কাছে নিয়ে যাবোই। তুমি তৈরি হও মা—কালই রওনা হয়ে যাবো বাপে-ঝিয়ে—তুমি কোন বাড়ি থাকো—চল দেখে যাই । তুমি কি মেয়ে, আমার তা জানতে বাকী নেই। নরাধম পাষণ্ড ছাড়া তোমার চরিত্রে কেউ সন্দেহ করতে পারে না । আমার রোগ থেকে সেবা করে তুমি বাঁচিয়ে তুলেছিলে—তা আমি ভুলি নি—আমার আর জন্মের মা-জননী তুমি ৷ তোমায় এ অবস্হায় এখানে ফেলে গেলে আমার নরকেও মহান হবে না যে । এগারো বন্ধ গোপেশ্বর চাটুজেকে সঙ্গে নিয়ে শরৎ ফিরল নিজের বাসায় । বন্ধ বললেন, এই বাড়ি ? বেশ । কাল তুমি তৈরি হয়ে থেকো। তোমার এই বড়ো ছেলের সঙ্গে কাল যেতে হবে তোমায় । পয়সাকড়ি না থাকে, সেজন্যে কিছদ ভেবো না— ছেলের সে ক্ষমতা আছে মা-জননী । রেণুকা এতক্ষণ কিছল বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে গিয়েছিল, শরৎকে চুপি চুপি বললে, উনি কে ভাই ? * —আমার জ্যাঠামশাই— —তোমাকে দেশে নিয়ে যাবেন ? –তাই তো বলছেন । —হঠাৎ কালই চলে যাবে কেন, এ মাসটা থেকে যাও না কাশীতে। বলো তোমার জ্যাঠামশাইকে। খোকার সঙ্গে একবার দেখাও করতে হবে তো ? অামাকে এত শীগগির ফেলে দিয়েই বা যাবে কোথায় ? শরৎ বন্ধকে জানাল। কালই যাওয়া মুশকিল হবে তার । যেখানে কাজ করছে, যারা এতদিন আশ্রয় দিয়ে রেখেছিল, তারা একটা লোক দেখে নিলে সে যাবার জন্যে তৈরী হবে । বন্ধ গোপেশ্বর চাটুজে তাতে রাজী হলেন। পাঁচ দিনের সময় নিয়ে শরৎ রোজ রান্নাবান্নার পরে রেণুকাকে সঙ্গে নিয়ে খোকনদের বাড়ি যায়। কাশী থেকে কোন অনিদ্দেশ্য ভবিষ্যতের পথে সে যাত্রা শরদ করবে তা সে জানে না—কিস্ত খোকনকে ফেলে যেতে তার সব চেয়ে কষ্ট হবে তা সে এ ক'দিনে হাড়ে হাড়ে বুঝছে । খোকনের মা ওর যাবার কথা