পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২২ বিভূতি-রচনাবলী শাড়ি দিতে গিয়ে চোখের জলের মধ্যে পরস্পরের ছাড়াছাড়ি হ’ল। রেণুকা বললে, এ শাড়ি আমার পরা হবে না ভাই, মাথায় করে রেখে দেবো— —তাই করিস মুখপড়ী। —কেন আমার জন্যে খরচ করলে ! ক'টাকা দাম নিয়েছে ? —তোর সে খোঁজে দরকার কি ? দিলাম, নে। মিটে গেল। জানিস আমি রাজকন্যে, আমাদের হাত ঝাড়লে পৰ্ব"ত ? কো চোখের জল ফেলতে ফেলতে বললে—তুমি আমায় ভুলে গেলে আমি মরে যাবো ভাই । . শরৎ মুখে ভেংচি কেটে বললে, মরে ভুত হবি পোড়ারমুখী ! ভূত না তো, পেত্নী হবি ৷ রালে আমায় যেন ভয় দেখাতে যেয়ো না । শরতের মুখে হাসি অথচ চোখে জল । আবার কলকাতা শহর ।• • • গোপেশ্বর চাটুতেজ বললেন, এখানে বন্দাবন মল্লিকের লেনে আমাদের গায়ের একজন লোক থাকে বাসা করে, আপিসে চাকরি করে । চলো সেখান গিয়ে উঠি দুজনে । থ:জতে খুজতে বাসা মিললো। বাড়ির কত্তা জাতিতে মোদক, সবগ্রামের প্রবীণ ব্রাহ্মণ প্রতিবেশীর উপস্হিতিতে সে যেন হাতে সবগ পেয়ে গেল। মাথায় রাখে কি কোথায় রাখে, ভেবে যেন পায় না। বললে—মৗ-ঠাকরণ কে ? —আমার ভাইঝি, গড়শিবপুরে বাড়ি ওদের । তুমি চেনো না । মস্ত লোক ওর বাবা । —তা চাটুজে মশাই, সব যোগাড় আছে ঘরে । দিদি-ঠাকরণ রান্নাবান্না করন, ওরা সব যুগিয়ে দেবে এখন। আমার আবার আপিয়ের বেলা হয়ে গেল—দশটায় হাজির হতেই হবে । আমি তেল মাখি—কিছ মনে করবেন না । বাড়ির গৃহিণী শরৎকে যথেষ্ট যত্ন করলেন । তাকে কিছুই করতে দিলেন না। বাটনা বাটা, কুটনো কোটা সবই তিনি আর তাঁর বড় মেয়ে দুজনে মিলে করে শরৎকে রান্না চড়িয়ে দিতে ডাক দিলেন । শরতের জন্যে মিছরী ভিজের শরবৎ, দই সন্দেশ আনিয়ে তার স্নানের পর তাকে জল খেতে দিলেন । আহারাদির পর শরতের বড় ইচ্ছে হ’ল একবার কালীঘাটে গিয়ে সে গৌরী-মার সঙ্গে দেখা করে। বন্ধ গোপেশ্বর চাটুজে শনে বললেন, চলো না মা, আমারও ওই সঙ্গে দেবদশনটা হয়ে যাক । - বিকেলের দিকে ওরা কালীঘাটে গেল । বাড়ির গহিণী তাঁর বড় মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ওদের সঙ্গিনী হলেন । মন্দিরের প্রাঙ্গণে বিস্তত নাটমন্দিরে দু-তিনটি নতন সন্ন্যাসী আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। গৌরী-মা তাঁর পরোনো জায়গাটিতেই ধনি জালিয়ে বসে আছেন। শরৎকে দেখে তিনি প্রায় চমকে উঠলেন। বললেন, সরোজিনীরা কি কলকাতায় এসেছে ? শরৎ তাঁর পায়ের ধলো নিয়ে প্রণাম করে সব খালে বললে । গৌরী-মা বললেন, তোমার জ্যাঠামশাই ? কই দেখি— বন্ধ চাটুজ্জে মহাশয় এসে গৌরী-মার কাছে বসলেন, কিন্ত প্রণাম করলেন না, বোধ হয় সন্ন্যাসিনী তাঁর চেয়ে বয়সে ছোট ব'লে। বললেন—মা, আমি আপনার কথা শরতের মুখে সব শুনেছি। আপনি আশীবাদ করন আমি ওকে যেন ওর বাবার কাছে নিয়ে যেতে পারি। আপনার আশীবাদ ছিল ব'লে বোধ হয় আমার সঙ্গে ওর দেখা হয়েছিল কাশীতে ।