পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২৬ বিভূতি-রচনাবলী কেদার অন্যতপ্ত কণ্ঠে বললেন, তা কিছ মনে করিস নে তুই মা । আমার কেমন ভয় হয়ে গেল—আমায় ভয় দেখালে পলিস ডেকে দেবে, তোমায় ধরিয়ে দেবে সে আরও কত কিছল । - আমার সব মনেও নেই মা । যাক, যা হয়ে গিয়েছে, তুমি কিছ মনে করো না । চলো চলো আজই গড়শিবপুরে রওনা হই । দেড় বছর বাড়ি যাই নি । 畿 গড়শিবপুরের রাজবাড়ি এই দেড় বছরে অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছে । চালের খড় গত বষ"ায় অনেক জায়গায় ধসে পড়েছে । বাঁশের আড়া ও বাতা উইয়ে থেয়ে ফুেলেছে। বাড়ির উঠোনে একহাঁটু বনজঙ্গল—আজ গোপেশ্বর চাটুজে ও কেদার অনবরত কেটে পরিকার করেও এখনও সাবেক উঠোন বের করতে পারেন নি। নিড়ানি ধরে সামনের উঠোনের লম্বা লম্বা মাথো ঘাস উপড়ে তুলতে তুলতে কেদার বললেন, ও মা শরৎ, আমাদের একটু তামাক দিতে পারো ? গোপেশ্বর চাটুজে উঠোনের ওপাশে কুকশিমা গাছের জঙ্গল দা দিয়ে কেটে জড়ো করতে করতে বলে উঠলেন—ও কি রাজামশায়, না না, মেয়েমানুষদের দিয়ে তামাক সাজানো— ওরা ঘরের লক্ষী—না ছিঃ—তামাক আমি সেজে আনছি গিয়ে— ততক্ষণ শরৎ তামাক ধরিয়ে কলকেতে ফু' পাড়ছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের ছায়া ঈষৎ দীঘ’তর হয়েছে । বাতাসে সদ্য কাটা বনজঙ্গলের কটুতিক্ত গন্ধ । ভাঙা গড়বাড়ির দেউড়ির কানি সে বন্য পাখীর কাকলী ৷ কাশীতে যখন ছিল তখন ভাবে নি আবার সে দেশে ফিরতে পারবে কখনো, আবার সে এমনিতর বৈকালে বাবাকে নিড়ান হাতে উঠোনের ঘাস পরিকার করতে দেখবে, বাবার তামাক আবার সাজবার সুযোগ পাবে সে । • তামাক দিয়ে শরৎ বললে, বাবা, হিম হয়ে বসে থেকে না—এবেলা একটা তরকারী নেই যে কুটি, ব্যবস্হা আগে কবো । কেদার কিছুমাত্র ব্যস্ত না হয়ে বললেন, কেন পুকুরপাড়ে ঝিঙে দেখে এলাম তো তখন । কালোপায়রা দীঘির পাড়ে বাঁধানো ঘাটের পাশের ঝোপের মাথায় বন্য ঝিঙেও ধ;ধলের চাতা বেড়ে উঠেছে, কেদারের কথার লক্ষ্য হল সেই বনো ধধলের গাছ । —শধে ঝিঙে বাবা ? —তাই নিয়ে এসে ভাতে দে—কি বল হে দাদা ? হবে না ? গোপেশ্বর চাটুজে বনজঙ্গল কাটতে কাটতে একটা ঝালের চারা দায়ের মুখে উপড়ে ফেলেছিলেন, সেটিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবার জন্যে কিছুক্ষণ থেকে প্রাণপণ চেণ্টা করছিলেন। অন্যমনস্ক ভাবে ঘাড় নেড়ে বললেন—খবে, খবে। রাজভোগ ভেসে যাবে। কেদার বললেন—তবে তাই করো মা শরৎ । তাই নিয়ে এসো। শরৎ কালোপায়রা দীঘির ধারে জঙ্গলে এল ঝিঙে খ:জতে । আজই দপেরেবেলা ওরা গরর গাড়ি করে এসে পৌছেছে এখানে । বাপ ও জ্যাঠামশায় সেই থেকে বনজঙ্গল পরিৎকার নিয়েই ব্যস্ত আছেন। সে নিজে ঘর দোর পরিৎকার করছিল— এই মাত্র একটু অবসর মিলেছে চোখ মেলে চারিদিকে চাইবার। কালোপায়রা দীঘির টলটলে জলে রাঙা কুমুদ ফুল ফুটেছে গড়বাড়ির ভগ্নস্তপের দিকটাতে । এই তো বাঁধাঘাট । ঘাটের ধাপে শেওলা জমেছে, কুকশিমার জঙ্গল বেড়েছে খাব-কতকাল বাসন মাজে নি ঘাটটাতে বসে। কাল সকালে আসতে হবে আবার । ছাতিম বনের ছায়ার দিকে চেয়ে সে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে । ছাতিম বনের ওপরে ওই দেউলের গন্বজোকৃতি চড়োটা বনের আড়াল থেকে মাথা বার করে দাঁড়িয়ে আছে। ছায়া ওপার থেকে এপারে এসে পৌঁছেছে, চাতালের যে কোণে বসে শরৎ বাসন মাজত, এপারের