එළුV বিভূতি-রচনাবলী —সে একটা অন্ধ মেয়ে। বিয়ে হয়েছে অবিশ্যি । গরীব গেরস্ত, এ চিঠি তার বরের হাতে লেখা, সে তো আর লিখতে— —কাশীতে থাকে ? কি করে ওর বর ? —চাকরি করে কোথায় যেন— —দেখতে কেমন ? —কে দেখতে কেমন ? মেয়েটা না তার বর ?
- —orদই-ই
—রেণকো দেখতে মন্দ নয়, বর তার চেয়েও ভাল—ছোকরা বয়েস, লোক ভালই ওরা। দ্যাখ না চিঠি পড়ে। —অন্ধ মেয়েরও বিয়ে আটকে থাকে না, যদি কপাল ভাল হয়— —হ’্যা রে হ্যা । তোর আর বকামি করতে হবে না—পড় চিঠি— রেণুকা অনেক দুঃখ করে চিঠি লিখেছে । শরৎ চলে গিয়ে পয্যন্ত সে একা পড়েচে, আর কে তার ওপর দয়া করবে, কে তার হাত ধরে বেড়াতে নিয়ে যাবে ? ও'র মোটে সময় হয় না । তার মন আকুল হয়েচে শরৎকে দেখবার জন্য, রাজকন্যা কবে এসে কাশীতে কেদার ছত্ৰ' খুলছে ? এলে যে রেণুকা বাঁচে—ইত্যাদি । চিঠি পড়ে শরৎ অন্যমনক হয়ে গেল। অসহায়া অভাগী রেণুকা । ছোট বোনটির মত কত যত্নে শরৎ তাকে নিয়ে বেড়াতো–কাশীর দশাশ্বমেধ ঘাট, জলে ভাসমান নৌকো ও বজরার ভিড়, বিশ্বেশ্বরের মন্দিরে সাধ্য আরতির ঘণ্টা ও নানা বাদ্যধনি "রেণুকার করণ মুখখানি। এখানে বসে সব স্বপ্নের মত মনে হয় । খোকা–খোকনমণি । রেণুকা “খোকনের কথা কিছু লেখে নি কেন ? কিন্ত পরক্ষণেই তার মনে হ’ল রেণুকাকে কে বক্সীদের বাড়ি নিয়ে যাবে হাত ধরে অত দরে ? তাই লিখতে পারে নি । রাজলক্ষী কৌতুহলের সঙ্গে নানা প্রশ্ন করতে লাগল কাশী ও সেখানকার মানুষ-জন সম্বন্ধে, বহির্জগৎ সম্বন্ধে । শরৎ বিরাট অন্নসত্রগুলোর গল্প করল, রাজরাজেশ্বরী, আমবেড়ে, কুচবিহারের কালীবাড়ি । হেসে বললে, জানিস এক বড়ী তৈলঙ্গিদের ছত্তরকে বলতো তু"ডুমডুদের ছত্তর । —তৈলঙ্গি কারা ? —সে আমিও জানি নে—তবে তাদের দেখেছি বটে। রাজলক্ষী দীঘনিঃশ্বাস ফেলে। বাইরের জগৎ মস্ত একটা স্বপ্ন। জীবনে কিছই দেখা হ'ল না, একেবারে ব্যথা গেল জীবনটা । শরৎদির ওপর হিংসে না হয়ে পারে ? চৌদ ۹عم কেদার ও গোপেশ্বর দুজনে মিলে খেটে বাড়ির উঠানটা অনেকটা পরিকার করে তুলেছেন, কেদার তত নন, বলতে গেলে গোপেশ্বরই খেটেছেন বেশী। শরৎকাল পড়েছে, পাজার দেরি নেই, গোপেশ্বর একদিন উঠানের এক ধার খড়ে কতকগুলো কচুর চারা পতছেন, কেদার মহাব্যস্ত হয়ে এসে বললেন, দাদা, এসো—ওসব ফেলে রাখো— —কি রাজামশায় ? —আরে একটা নতুন রাগিণীর সন্ধান পেয়েছি একজনের কাছে । মুখঙ্গে-বাড়িতে জামাই এসেছে—ভাল গায়ক । দেওগান্ধার ওর কাছে আদায় করতে হবে । থাকবে এখন কিছুদিন এখানে, চলো দুজনে যাই—