পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ტტყ বিভূতি-রচনাবলী শরৎ বাড়ির দাওয়ায় উকি মেরে দেখে বললে—কে ? ও বটুক-দা, ভাল আছেন ? আসনে । বটুককে শরৎ কোনো কালেই ভাল চোখে দেখতো না । সেই বটুক, যে এক সময় শরতের প্রতি অনেক অসম্মানজনক ব্যবহার করেছিল, রাজলক্ষীর সঙ্গে যে বটুকের সম্বন্ধে সে যুগে কলকাতায় যাবার পষেব* শরৎ আলোচনা করেছিল একবার । বটুক একটু ইতস্ততঃ করে বললে, শনলাম তোমরা এসেছ—কাকা এসেছেন, তাই একবার দেখা করতে— শরৎ আগেকার মত নেই—জীবনের অভিজ্ঞতা তাকে অনেক সাহসী ও সহিষ্ণু করে দিয়েছে"। আগেকার দিন হলে শরৎ বটুকের সঙ্গে বেশীক্ষণ কথাও বলতো না এ নিশ্চয়ই । আজ শরৎ দাওয়ায় একখানা পিড়ি পেতে বটুককে বসতে বললে । বটুক একটু আশ্চয' হয়ে গেল, শরতের কাছ থেকে এ আদর সে আশা করে নি এখানে । কিছুক্ষণ ইতস্ততঃ করে অবশেষে বসলো। শরৎ তাকে চা করে খাওয়ালে । বললে, দুটি মড়ি খাবে বটুকদা ? আর তো কিছু নেই ঘরে । তুমি এলে এতদিন পরে— —থাক, থাক, সে জন্যে কিছ নয় ! আমি দেখতে এলাম, বলি দেখা হয় নি কত দিন । আচ্ছা শুনলাম নাকি কত দেশ-বিদেশে বেড়িয়ে এলে ? —তা বেড়ালাম বৈকি। রাজগীর, কাশী । —কাকা নিয়ে গিয়েছিলেন বুঝি ? —জ্যাঠামশায়ের সঙ্গে গিয়েছিলাম—ঐ যিনি আমাদের এখানে আছেন— —তা বেশ, বেশ । এই সময় দরে রাজলক্ষয়ীকে আসতে দেখে বটুক তাড়াতাড়ি উঠে বিদায় নিলে । শরৎ বললে—আর একদিন এসো, বাবার সঙ্গে তো দেখা হ’ল না। বাবা থাকতে এসো একদিন— রাজলক্ষী চেয়ে বললে—ও এখানে কি জন্যে এসেছিল ! বটুকদা তো লোক ভাল না— —কি মতলব নিয়ে এসেছিল কি করে বলব বল ? এলো—বসতে দিলাম, চা করে मिळाश —না না শরৎদি, জানো তো—ওসব লোকের সঙ্গে কোনো মেলামেশা না করাই ভালো । তুমি তো জানো না ওর কাণ্ড । তোমরা চলে যাওয়ার পর ও গয়ে যে-সব কান্ড করেছে, সে শনলে তুমি কানে আঙল দেবে। অতি বদ লোক । কি মতলব নিয়ে এসেছিল কে জানে । * —তা তো বুঝলাম, কিন্তু আমার বাড়ি এলো, আমি কি বলে না বসাই ? তা তো হয় না। আমায় আমার কাজ করতেই হবে । —সেই যে প্রভাস কামার তোমাদের মোটরে কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিল, সে লোকটাও ভাল না, পরে শুনলাম। বটুকদা প্রভাসের খুব বন্ধ ছিল আগে—তবে এখন অনেক দিন আর তাকে এ গাঁয়ে দেখি নি। তোমরা চলে গেলে একবার এসেছিল যেন। শরতের মুখ হঠাৎ বিবণ হয়ে গেল, সে তাড়াতাড়ি অন্য কথা পাড়লে একথা চাপা দিয়ে। বললে—চল । দীঘির পাড় থেকে গোটাকতক ধাঁধলে পেড়ে আনি—কিছু তরকারি নেই, বাবাকে বলা না বলা দই সমান— রাজলক্ষী বললে, আর কোথাও যেও না শরৎদি, দটি বোনে এই গাঁয়ে কাটিয়ে দিই জীবনটা । আমারও যা হবে, সে বেশ দেখতেই পাচ্ছি । তুমি থাকলে বেশ লাগে। —খারাপ কি বল না ? আমি কত জায়গায় গেলাম, কিন্তু তোকে ছেড়ে—কালো পায়রার দীঘি ছেড়ে— —যা বলেছ শরৎদি । তুমি এসেছ আমি আর কোথাও যেতে চাই নে, সবগেও না।