পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা 98రి —হ’্যা, না–কথা—তা একটু ছিল—তা— বটুকের অবস্থা দেখে শরতের হাসি পেল। মনে মনে বললে, কি বলবি বল না—বলে চলে যা—কান্ড দ্যাথো একবার ! মুখে বললে, কি বটুকদা ? কি কথা ? বটুক খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে ইতস্ততঃ করে তার পর মরাঁয়ার সরে বললে, প্রভাস এসেছিল কাল কলকাতা থেকে । বলে সে শরতের মুখের দিকে চেয়ে চুপ করে রইল । শরতের মথে বিবণ হয়ে গেল এক মহমত্তে"। তার সমস্ত শরীর কেমন ঝিম-ঝিম করে উঠল। কিন্ত তখনি সামলে নিয়ে বললে, তা আমায় এ কথা কেন ? আমি কি করবো ? বটুক মাথা চুলকে বললে, না—তা—এমন কিছ নয়, এমন কিছ নয়। প্রভাসের সঙ্গে গিরীনবাব বলে এক ভদ্রলোক ছিল। এই গিয়ে তারা বলছিল— এই পয্যন্ত বলে বটুক একবার চারিদিকে চেয়ে দেখলে । শরৎ দাওয়ার খাটি ধরে দাঁড়িয়ে নিজেকে যেন টলে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে বললে, কি दळछिळ ? —বলছিল যে— —বলো না কি বলছিল ? —মানে, ওরা—তোমার সঙ্গে একবার লুকিয়ে দেখা করতে চায়। নইলে গাঁয়ে সব কথা নাকি প্রকাশ করে দেবে। —হ:—তোমাকে তারা চর করে পাঠিয়েছে বুঝি ? শরতের অস্বাভাবিক কণ্ঠস্বরে বটুক ভয় খেয়ে গেল । সরে নরম করে বললে—আমার ওপরে অনৰ্থক রাগ করছো তুমি । আমায় তারা বললে, তোমাকে কথাটা বলতে-কেউ টের পাবে না, গড়ের জঙ্গলের ওদিকে হোক কি রাণীদীঘির পাড়ে হোক –কি তারা বলবে তোমায় । আমায় বললে, বলে এসো। তারা কলকাতায় চলে গিয়েছে, আবার আসবে। নয় তো কলকাতায় কি হয়েছিল না হয়েছিল, সব গাঁয়ে প্রকাশ করে দিয়ে যাবে— শরৎ চুপ করে রইল কিছুক্ষণ । কোনো কথা নেই তার মুখে । তার মাত্তি দেখে বটুকের ভয় হ’ল। সে কি একটা বলতে যাচ্ছিল, এমন সময় শরৎ স্হির গলায় বললে, বটুকদা, তোমার বন্ধদের বোলো আমি লুকিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা কোনোদিন করবো না। তাদের সাহস থাকে বাবা আর জ্যাঠামশায়ের সামনে এসে যেন দেখা করে। আমরা গরীব আছি তাই কি ? আমাদেরও মান আছে। না হয় তারা বড়লোকই আছে । বটুক বললে, না—এর মধ্যে আর গরীব বড়লোকের কথা কি ? —আর একটা কথা বটুকদা ! তুমি না গায়ের ছেলে ? তোমার উচিত কলকাতার সেই সব বখাটে বদমাইশদের তরফ থেকে আমায় এ-সব কথা বলা ? আমি না তোমার ছোট বোনের মত ? তোমায় না দাদা বলে ডাকি ? তুমি এসেছ চর সেজে ? বটুক আমতা আমতা করে বললে, আমি কি করবো, আমি কি করবো—তোমার ভালোর জন্যেই— শরৎ পাব’বং স্থির কণ্ঠেই বললে, আমার বাড়ি তুমি এসেছ—আমার বলতে বাধে, তবুও আমি বলছি—আমার এখানে তুমি আর এসো না—আমার ভালো তোমায় করতে হবে না । বটুক ততক্ষণ ভগ্ন দেউড়ির পথে অবশ্য হয়েছে।