পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O&S বিভূতি-রচনাবলী গিয়েছিল—কিস্ত সেখানে যে সে মারা গিয়েছে, এ খবর আমি কাউকে বলি নি । বিশেষ ক'রে গহিণী তাকে খুব ভালবাসতেন বলেই সংবাদটা আর বাসায় জানাই নি । আমাদের টিউবওয়েলের মিস্ত্রী শিউশরণের শালীর ছেলে সে—সে-ই খবরটা মাসখানেক আগে আমায় দেয় । মনর অসুখ তখনও পয্যন্ত খুব খারাপ ছিল না, ডাক্তারেরা বলছেন, ভয়ের কোন কারণ নেই। আমার কিন্ত মনে হ’ল ও বাঁচবে না । ও পেয়ালাটার ইতিহাস এ বাসায় আর কেউ জানে না, অসখের সময় যে ওতে করে কিছ খেয়েছে সে আর ফেরে নি। জানত কেবল কাকার বড় মেয়ে, সে আছে শ্বশুরবাড়ি । পেয়ালাটা একটু পরেই আবার চুপি চুপি ফেলে দিলাম—হাত দিয়ে তোলবার সময় তার পশোঁ আমার সারা দেহ শিউরে উঠল—পেয়ালাটা যেন জীবন্ত, মনে হ’ল যেন একটা করে, জীবন্ত বিষধর সাপের বাচ্চার গায়ে হাত দিয়েচি, যার পশে মৃত্যু-“যার নিঃশ্বাসে মৃত্যু--- পরদিন দােপর থেকে মনর অসুখ বাঁকা পথ ধরল, ন’ দিনের দিন মারা গেল । আমি জানতুম ও মারা যাবে । মনর মৃত্যুর পর পেয়ালাটা আবার কুড়িয়ে এনে ব্যাগের মধ্যে পরে কাজে বেরবার সময় নিয়ে গেলাম। সাত-আট ক্লোশ দরে একটা নিৎজন বিলের ধারে ফেলে দিয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম । শোকের প্রথম ঝাপটা কেটে গিয়ে মাস দুই পরে বাসা একটু ঠাণ্ডা হয়েচে তখন । কথায় কুথায় স্ত্রীর কাছে একদিন এমনি পেয়ালাটার কথা বলি। তিনি আমার গল্প শুনে যেন কেমন হয়ে গেলেন, কেমন এক অদ্ভুত দণ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রইলেন, মুখ দিয়ে তাঁর কথা বেরল না । আমি বললাম—বোধ হয় অত খেয়াল ক'রে তুমি কখনো দ্যাখো নি, তাই ধরতে পার নি—আমি কিন্ত বরাবর— আমার সন্ত্রী বিবণ মুখে বললেন—বলব একটা কথা ? আমার আজ মনে পড়ল—একটু চুপ করে থেকে বললেন— —খোকা যখন মারা যায় আর বছর আষাঢ় মাসে, সেই কলাই-করা পেয়ালাটাতে তাকে ডাবের জল খাওয়াতুম। আমি নিজের হাতে কতবার খাইয়েচি। তুমি তো তখন বাইরে বাইরে ঘরেতে, তুমি জানো না । আমার কোন উত্তর খানিকক্ষণ না পেয়ে বললেন, জানতে তুমি এ কথাটা ? —না, জানতুম না অবিশ্যি । কিন্ত অন্যমনস্ক হয়ে আর একটা কথা মনে তোলাপাড়া করছিলাম—পেয়ালাটা আমাদের ছেড়েচে তো ? ওটাকে কেন তখন ভেঙে চুরমার করে নষ্ট করে দিই নি ? আবার কোনো উপায়ে এসে এ বাড়িতে ঢুকবে না তো ? উইলের খেয়াল দেশ থেকে রবিবারে ফিরছিলাম কলকাতায় । সন্ধ্যার আর বেশী দেরি নেই, একটু আগে থেকেই প্লাটফমে আলো জেলেচে, শীতও খুব বেশী। এদিকে এমন একটা কামরায় উঠে বসেচি, যেখানে দ্বিতীয় ব্যক্তি নেই যার সঙ্গে একটু গল্পগজব করি। আবার যার তার সঙ্গে গল্প করেও আনন্দ হয় না। আমার দ্বরের কোনো লোকের সঙ্গে গল্প করে কোনো সখ