পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లీటు বিভূতি-রচনাবলী গাড়ি ছাড়লো । সন্ধ্যায় পাতলা অন্ধকারে পাপিং এঞ্জিনের শেড, কেবিনঘর, ধামাকৗণ” কুলীলাইন, সট সট করে দ-পাশ কেটে বেরিয়ে চলেচে, সামনে সিগন্যালের সবুজ বাতি, তারপর দু-পাশে আখের ক্ষেত, মাঠ, বাবলা বন । শান্তিরামের গলার সরে শনে বুঝলাম, সে গল্প বলার মেজাজে আছে, ভাল ক'রে আলোয়ান গায়ে দিয়ে বসলাম, উৎসক মুখে ওর দিকে চেয়ে রইলাম । শাস্তিরাম বললে—অবনীকে এর আগে কখনো দেখ নি ? নিশ্চয় দেখেছ ছেলেবেলায়, ও আমাদের নীচের ক্লাসে পড়তো আর বেশ ভাল ফুটবল খেলতো—মনে নেই ? ওর বাবা কোটে' নকলনবিশী করতেন, সংসারের অভাব-অনটন টানাটানি বেড়েই চলেছিল । সেই অবস্হায় অবনীর বিয়ে দিয়ে বেী ঘরে আনলেন । বললেন—কবে মরে যাব, ছেলের বৌয়ের মুখ দেখে যাই । বাঁচলেনও না বেশীদিন, এক পাল পৃষ্যি আর একরাশ দেনা ছেলের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে সংসার থেকে বিদায় নিলেন । তারপর কি কটটাই গিয়েচে ওদের । অবনী পাস করতে পারলে না, চাকরিও কিছু জটলো না, হরিণখালির বিলের এক অংশ ওদের ছিল অনেক কাল আগে থেকে—শোলা হ’ত সেখানে, সেই বিলের শোলা ইজারা দিয়ে যে কটা টাকা পেত, তাই ছিল ভরসা। ওদের গায়ে চৌধুরীপাড়ায় নিধিরাম চৌধুরী বলে একজন লোক ছিল । গাঁয়ে তাকে সবাই ডাকতো নিস চৌধুরী । নিস চৌধুরীর কোন কুলে কেউ ছিল না, বিয়ে করেছিল দ-দ্বার, ছেলেপলেও হয়েছিল কিন্তু টেকে নি । ওর বাবা সেকালে নিমকির দারোগা ছিল, বেশ দ-পয়সা কামিয়ে বিষয়-সপত্তি করে গিয়েছিল । তা শালিয়ানা প্রায় হাজার বারো-শ টাকা আয়ের জমা, আম-কাঁটালের বাগান, বাড়িতে তিনটে গোলা, এক একটা গোলায় দেড়পাট দ-পাট করে ধান ধরে, দটো পুকুর, তেজারতি কারবার। নিস চৌধুরী ইদানীং তেজারতি কারবার গটিয়ে ফেলে জেলার লোন অফিসে নগদ টাকাটা রেখে দিত। সেই নিস চৌধুরীর বয়স হ’ল, ক্লমে শরীর অপটু হয়ে পড়তে লাগল, সংসারে মুখে জলটি দেবার একজন লোক নেই । আবার পাড়াগাঁয়ের ব্যাপার জান তো ? পয়সা নিয়ে বাড়িতে কাউকে খেতে দেওয়া—এ রেওয়াজ নেই। তাতে সমাজে নিন্দে হয়, সে কেউ করবে না। নিস চৌধুরী এখন একবার অসুখে পড়ে দিনকতক বড় কণ্ট পেলে—এ-সব দিকের পাড়াগাঁয়ের জান তো ভায়া, না পাওয়া যায় রাধনী বামন, না পাওয়া যায়চাকর, পয়সা দিলেও মেলানো যায় না। দিন দশ-বারো ভুগবার পর উঠে একটু সহে হয়ে একদিন নিস চৌধুরী অবনীকে বাড়িতে ডাকালে । বললে—বাবা অবনী, আমার কেউ নেই, এখন তোমরা পাঁচজন ভরসা। তা তোমার বাবা আমায় ছোট ভাইয়ের মত দেখতেন, তোমাদের পাড়ায় তখন যাতায়াতও ছিল খাব । তারপর এখন শরীরও হয়ে পড়েচে অপটু, তোমাদের যে গিয়ে খোঁজখবর করবো, তাও আর পারি নে। তা আমি বলচি কি, আমার যা আছে সব লেখাপড়া ক'রে দিচ্চি তোমাদের, নাও—নিয়ে আমাকে তোমাদের সংসারে জায়গা দেও ! তুমি আমার দীন-দার ছেলে, আমার নিজের ছেলেরই মত। তোমাকে আর বেশী কি বলবো বাবা ? অবনী আশ্চয' হয়ে গেল। নিস চৌধুরীর নগদ টাকা কত আছে কেউ অবিশ্যি জানে না, কিস্ত বিষয়-সম্পত্তির আয়, ধান—এসব যা আছে, এ গাঁয়ে এক রায়েদের ছাড়া আর কার্য নেই। সমস্ত সম্পত্তি লিখে দিতে চায় নিস চৌধুরী তার নামে | অবনীর মুখ দিয়ে তো কথা বেরলো না খানিকক্ষণ। তারপর বললে—আচ্ছা কাকা, বাড়িতে একবার পরামশ* ক'রে এসে কাল বলব । নিস চৌধুরী বললে—বেশ বাবা, কিন্তু এ-সব কথা এখন যেন গোপন থাকে। পরদিন গিয়ে অবনী জানালে এ প্রস্তাবে তাদের কোন আপত্তি নেই। নিস চৌধুরী বললে—বেীমা