পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ծգեյ বিভূতি-রচনাবলী ছাড়া শহরে আসতে ইচ্ছেও হোত না । বছর দুই কাটলো আরও, ইতিমধ্যেই সে বিবাহ করেচে, সঙ্গীক ওখানেই থাকে। আজ তিন দিন হোল সে কলকাতায় এসেচে প্রায় পাঁচ ছ'বছর পরে । o কাজকম সেরে কেমন একটা ইচ্ছে হোল, ভাবলে—দেখি তো সেই সাহেবের বাড়িতে আমার সেই গাছটা আছে কি না ? বাড়িটা চিনে নিতে কষ্ট হোল না কিন্তু অবাক হয়ে গেল—বাড়ির সে শ্ৰী আর নেই। বাড়িটাতে বোধ হয় মানুষ বাস করে নি বছর দই—কি তার বেশী। উঠোনে বন হয়ে গিয়েচে । পৈঠাগুলো ভাঙা, বাতাবী নেব গাছে মাকড়সার জাল, বারান্দার রেলিংগলো খসে পড়েচে । তার সেই এরিকা পামটা আছে, কিন্ত কি চেহারাই হয়েচে । আরও বড় হয়েচে বটে কিন্তু সে তেজ নেই, শ্রী নেই, নীচের ডালগুলো শুকিয়ে পাখা হয়ে আছে, ধলো আর মাকড়সার জালে ভত্তি । যায় যায় অবস্হা । টবও বদলানো হয় নি আর । হিমাংশ বল্লে—ভাই সত্যি সত্যি তোমায় বলুচি, গাছটা যেন আমায় চিনতে পারলে । আমার মনে হলো ও যেন বলচে আমায় এখান থেকে নিয়ে যাও, আমি তোমার কাছে গেলে হয় তো এখনও বাঁচবো ! ছেড়ে যেও না এবার । আমায় বাঁচাও । রাত্রে হিমাংশর ভালো ঘুম হোল না । আবার সাকুলার রোডে গেল, সন্ধান নিয়ে জানলে সাহেব মারা গিয়েচে । বাড়ী মেম আছে ইলিয়ট রোডে, পয়সার অভাবে বাড়ি সারাতে পারে না, তাই ভাড়াও হচ্চে না । এই বাজারে ভাঙা বাড়ি কেনার খন্দেরও নেই । মেমকে টাকা দিয়ে গাছটা ও কিনে নিলে । এখনও সাকুলার রোডের বাড়িটাতেই আছে, কাল-ও গালডিতে ফিরে যাবে, গাছটাকে নিয়ে যাচ্চে সঙ্গে করে। বিদায় নেবার সময় হিমাংশ বল্লে—বৈঠকখানা বাজারে এসেছিলাম কেন জানো ? আমার সাধ হয়েচে ওর বিয়ে দেবো । তাই একটা ছোটখাটো, অলপ বয়সের, দেখতে ভালো পাম, খুজছিলাম। হি—হি—পাগল নয় হে পাগল নয়, ভালবাসার জিনিস হোত তো বুঝতে । সার্থকতা সকাল বেলা। রংপগঞ্জের ভাঙ্গা কালীবাড়ির সামনে বাঁধানো বটতলায় নিয়মিত আভা বসেচে। এখানে প্রথমেই বলা উচিত, রুপগঞ্জ কোনো ব্যরসার জায়গা নয়,—কোনো কালে ছিল যে, এমন কোনো প্রমাণও নেই। রুপগঞ্জ নিতান্তই সাধারণ ছোট পাড়াগাঁ—দদেশ ঘর ব্রাহ্মণের বাস । এ ছাড়া কামার, কুমোর, জেলে ইত্যাদি অন্য জাত আছে। গঞ্জ থাকা তো দরের কথা, গ্রামে একখানা মাত্র মদীখানার দোকান। কিন্ত লোকে বারোমাস ধার নিয়ে নিয়ে দোকানের অবস্হা এমন করে তুলেছে যে, দোকানের মালিক দোকান তুলে দিতে পারলে হপি ছেড়ে বাঁচে–অথচ সে বেশ জানে এবং তার খরিদাররাও জানে যে দোকান একবার উঠে গেলে বাকীবকেয়া আদায় হবার আর কোনো আশাই থাকবে না। রংপগঞ্জে সবাই গরীব, পরস্পরকে ঠকিয়ে কোনো রকমে তারা দিন কাটিয়ে চলেচে । কালীবাড়ির বটতলায় বসে এই সব কথাই হচ্ছিল—রোজই হয়, আজ ত্ৰিশবছর ধরে হয়ে আসচে। এর আগে কি হয়েচে না হয়েচে তার হিসেব নেই, কেননা সে-সব লোক এখন বেচে নেই। এ-গ্রামে খুব বড়ো লোক বড় একটা দেখা যায় না—বিশেষ করে ভদ্রলোকের মধ্যে। তার আগেই তাদের রূপগঞ্জের কালীবাড়ির আড্ডার মায়া কাটাতে হয়, পৈতৃক