পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৩৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిసిషి বিভূতি-রচনাবলী পাইতেছে । কাপড়-জামা মেয়েরা সাবান দিয়া কাচিয়া দিয়াছে, বন্দিনাথের চেহারারও যথেষ্ট পরিবত্তন ঘটিয়াছে। মাথার চুল দশ আনা ছ’ আনা ছাঁটা, বেশ টেরী কাটা, পথের মোড়ে সাঁকোর উপর বসিয়া বিড়ি খাইতেছিল, আমায় দেখিয়া তাড়াতাড়ি ফেলিয়া দিল । দাদার ছোট মেয়ে পাঁচীর জন্য একখানা সাবান আনিয়াছিলাম, দপরের পরে সেখানা ব্যাগ হইতে বাহির করিয়া তাহাকে দিতেছি, বন্দিনাথ ব্যগ্রভাবে হাত বাড়াইয়া বলিল—ও সাবান কি করবে দাদা, দিন-দিন না ?-- আমি একটু অবাক হইয়া গেলাম । যোল-সতেরো বছরের ছেলে, নিতান্ত খোকাটি নয়—সাত-আট বছরের মেয়ে, সম্পকে তার ছোট ভাইঝি হয়—তার জিনিস কাড়িয়া লইতে যায়, আর বিশেষ করিয়া আমার হাত হইতে ! পাঁচীকে বলিলাম—পাঁচী, এ সাবানখানা তোর কাকাকে দে—তোর জন্যে এখানকার বাজার থেকে আর একখানা আনিয়ে দেবো’খন । কেমন তো ? পাঁচি আমার কথার প্রতিবাদ করিল না । নীরবে কাদো কাদো মুখে ঘাড় নাড়িয়া সম্পমতি জানাইল । সাবানখানা বন্দিনাথ লোভ-লোলুপ ব্যগ্রতার সহিত আমার হাত হইতে একরপ লফিয়াই লইল । মনটা আমার কেমন অপ্রসন্ন হইয়া গেল । দু'দিন পরে দেখিলাম বন্দিনাথ বাড়ির ছেলে-মেয়েদের সকলকে শাসন করিতে শর করিয়াছে। কাহাকেও বলিতেছে হাড় ভাঙিয়া গড়া করিব, কাহাকেও বলিতেছে, পিঠে জলবিছটি দিব ইত্যাদি। হয়তো কেউ খাবারের জন্য বাড়িতে বিরক্ত করিতেছে, কেহ বা বলিতেছে সে আজ কিছুতেই চুল ছটিবে না, কেহ বা তেতো ওষুধ খাইতে চাহিতেছে না, , কিংবা হয়তো নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বাধাইয়াছে—এই সব তাহাদের অপরাধ। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের কেহ বকুনি, মার-ধর করে—এ আমি একেবারেই পচ্ছন্দ করি না । বন্দিনাথকে ডাকিয়া বলিয়াছিলাম—ওদের কথায় তোর থাকবার দরকার কি রে বোদে 2••• ওরা যা খুশি করকে না, তুই ওরকম করে বকিস নে ওদের । মাঝে আর একবার রাণাঘাটে গেলাম । বদিনাথকে বাড়িতে না দেখিতে পাইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম—বন্দিনাথ কোথায় দেখচিনে যে ? শুনিলাম সে বাড়িতে প্রায় থাকে না, দ'বেলা খাওয়ার সময় হাজির হয় মাত্র, স্টেশনের কাছে—কোন পউিরটির দোকানে তার আন্ডা—সেখানে দিন-রাত বসিয়া ইয়াকি দেয়। বাড়ির ছেলেমেয়েরা তাহার নামে নানা অভিযোগ উত্থাপিত করিল। দাদার মেয়ে বলিল —আমার সে সাবানখানা বন্দিনাথ কাকা কেড়ে নিয়েচে, বল্লে—যদি না দিস তোকে মেরে চিংড়ি মাছ বানাবো । g সন্ধ্যার সময়ে মোহিত ডাক্তারের ডিসপেনসারিতে বসিয়া চা খাইতেছি—বন্দিনাথ আসিয়া বলিল—চার আনা পয়সা দিন, বৌদি বলে দিলেন বাজার থেকে আল নিয়ে যেতে হবে । বন্দিনাথের উপর মনটা তত প্রসন্ন ছিল না, কিন্ত পয়সা দিতে গিয়া মনে মনে ভাবিলাম—যাই হোক, দ:"মিই করকে আর যাই কর্ক, বাসার একটু-আধটু সাহায্য তো ওকে দিয়ে হচ্ছে "বয়েস কম, দন্টুমি একটু-আধটু করেই থাকে । দু'তিন দিন পরে বৌদি আবার কতকগলি নতন অভিযোগ বন্দিনাথের বিরদ্ধে যখন আনিলেন—তখন ওই কথাই আমি বলিলাম। বৌদি বলিলেন—কবে কোন কাজ করে ও : কে বলেছে তোমায় ঠাকুর-পো ? শুধ খাওয়া আর পাউরটির দোকানে না কোথায় বসে ইয়াকি" দেওয়া, এছাড়া আর কি কাজ ওর ? বলিলাম—কেন, হাট-বাজার তো প্রায়ই করে। এই তো সেদিনও তুমিই ওকে বাজার কত্তে দিয়েছিলে, আল না কি-এর আগেও তো অনেকবার—