পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধালাবদল ర్సిడీ কলিকাতা শহর দেখিল । পৈতৃক বাসস্হান যে গ্রামে ছিল, সেখানেও একবার গেল । বাংলাদেশে আসিয়া সতীশের মনে হইল যে, মায়ের মুখ সে ভাল মনে করিতে পারে না, ধোঁয়া ধোঁয়া অস্পষ্ট সামান্য একটু মনে পড়ে, যেন মেঘলা দিনের দিবানিদ্রার স্বপ্ন—সে মায়ের স্নেহ সারা দেশটাতে ছড়াইয়া পড়িয়া যেন সাগ্রহে তাহার প্রত্যাবত্তনের প্রতীক্ষায় পথ চাহিয়া বসিয়া আছে। গ্রামে আসিলে গ্রামের তো কেহ তাহাকে চিনিতেই পারে না, কারণ সে গিয়াছিল নিতান্ত ছেলেবেলাতে দশ-বারো বছর বয়সে । পৈতৃক ভিটা খুজিয়া বাহির. করিতে বেগ পাইতে হইল, কারণ এমন দাভেদ্য বন-জঙ্গলে ঢাকিয়া পড়িয়াছে যে বাহির হইতে চিনিয়া লওয়াই কষ্টকর । গ্রামের সকলেই আসিয়া ধরিয়া বসিল যে, তাহাকে দেশে ঘরবাড়ি করিতে হইবে—এখানে বাস করিতে হইবে । ইহার মধ্যে প্রতিবেশীর পত্রের উপর নিছক নিঃসবাথ ভালবাসা ছিল না, তাহা বলাই বাহুল্য। দেশে মোটে ডাক্তার নাই, সতীশের মত একজন নামজাদা ডাক্তার গ্রামে বসিয়া প্র্যাকটিস করিলে গ্রামের লোকের সুবিধা বড় কম নহে–চক্ষলৎজার খাতিরে অন্ততঃ গ্রামের লোকের কাছে সে তো আর ভিজিট লইতে পারিবে না ? সেবার সতীশ ভিটার মায়া কাটাইয়া ফিরিয়া গেল বটে, কিন্তু দেশের মায়া তাহাকে পাইয়া বসিয়াছিল—পরের বৎসরই সে পনরায় শীতকালে ছয়টি লইয়া গ্রামে ফিরিয়া পৈতৃক ভিটার বনজঙ্গল কাটাইয়া সেখানে টিনের ঘর তুলিয়া ফেলিল । ছয়টি ফুরাইলে আবার কম হানে ফিরিল সেবারও । কিস্ত দেশের মায়া একবার পাইয়া বসিলে তাকে কি ছাড়ানো সহজ ? চন্দ্ৰগিরি, উদয়গিরির দগম গিরিসংকট পার হইয়াও নদীয়া জেলার ক্ষুদ্র গ্রামের ডাক নেপালে গিয়া পে'ছিয়াছিল। পর বৎসর সতীশ চাকুরিতে ইস্তফা দিয়া স্ত্রী-পুত্র সহ দেশে আসিয়া বসিল ও গ্রামে প্র্যাকটিস শার করিল। সে আজ বত্রিশ বছর পর্বের কথা । তখন অলিতে-গলিতে এমত-বি পাশ ডাক্তার হয় নাই, আজকালকারের মত পাশ-করা ডাক্তার খাজিয়া মেলানো দুঘাট ছিল । নিকটবতী নরহরিপরের বাজারে তখন যাদরাম স্যাকরা ছিল দেশের মধ্যে বড় ডাক্তার। যাদরাম বাদে একজন মুসলমান হোমিওপ্যাথ, একজন কবিরাজও ছিল । ইহারা গেল প্রবীণের দলে । তরণের মধ্যে কানাইলাল রায় কলিকাতা হইতে কিসের একখানা সাটিফিকেট আনিয়া ডাক্তার সাজিয়া বসিয়াছিল। সতীশ আসিয়াই প্র্যাকটিস জমাইয়া ফেলিল। সে উপরোক্ত হাতুড়ে দলের অনুকরণে নরহরিপরের বাজারে ডাক্তারখানা খলিয়া আধহাত লম্বা হরফে নিজের নামের সাইনবোড" ঝুলাইল না, বা রোগীর বাড়ি আসিয়া হানীয় অন্যান্য ডাক্তারদের নিন্দাবাদ করাও অভ্যাস করিল না । গ্রামের বাড়ির একখানা ঘরে ঔষধ রাখিত, আলাদা ডিসপেনসারিও ছিল না —রোগীরা আসিয়া বসিত সতীশের বাড়ির সামনে বটতলায়,—তাহাদের বসিবার সহানের পষ"স্ত কোনো বাবস্হা ছিল না। কিন্তু এসব সত্বেও সতাঁশের বাড়ির সামনের বটতলায় রোগীর ভিড় দিন দিন বাড়িয়া চলিল। দিনরাতে নানাহারের সময় নাই, সাত-আট ক্লোশ দরের গ্রাম হইতেও রোগী দেখিবার ডাক আসিতেছে, গরর গাড়িতে রোগী দেখিয়া বেড়াইতেবেড়াইতে সতীশ হাঁপাইয়া পড়িল। প্রতিদিন সকালে নিজের বাড়িতে গড়ে তিন-চারটা সাজিক্যাল কেস লাগিয়াই আছে ৷ ব্যাপার দেখিয়া যাদরাম একদিন কানাই ডাক্তারকে ডাকিয়া বলিল, “এত রাগী এদেশে