পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধালাবদল లిసిసి কিন্তু ক্ৰমে এ কথাটা তাহার মনের মধ্যে উকি মারিতে লাগিল। হয়তো নিস্তদ্ধ দর্পরে বিলের পাশের পথ দিয়া গরুর গাড়িতে আরামে সে ভিন গাঁয়ে রোগী দেখিতে চলিয়াছে । মাঠের ধারে ধারে ঘনঘন পাখীর ডাকে কিংবা বিলের গভীর জলে বাগদীছেলের ডোঙা চড়িয়া মাছ ধরিবার দশ্যে—সে দেখিত সে হঠাৎ অন্যমনস্ক হইয়া কাশীতে যাপিত বাল্যজীবনের কথা ভাবিতেছে—রামরাম সাহ হালুইকরের দোকানে লছমী বলিয়া সেই মেয়েটি থাকিত— এতকাল পরেও তার সে গলার সমিণ্ট সরে যেন প্রাণে লাগিয়া আছে-একবার সে, রামজীবন বাবরে বড় ছেলে বাদল, তাঁর ভাগ্নে নর-তিনজনে জঙ্গম বাড়ির বারোয়ারী আসরে সিদ্ধি খাইয়া কি কান্ডটাই করিয়াছিল ।••• নেপালে একবার কণে’ল খড়গ সমসের জঙ্গ রাণা বাহাদরের কন্যার বিবাহেতে নিমম্মিত হইয়া গিয়াছিল। গিয়া দেখিল খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্হা নাই—একটা মোড়কের মধ্যে মসলা ও সুপারি আর একটা মোড়কে পাঁচটি টাকা। সতীশ কৰ্ণেল বাহাদরের দেওয়ানকে বলিল—টাকা কিসের ? নিমন্ত্রিত হয়ে এসে টাকা নেওয়া আমরা অপমানজনক মনে করি। দেওয়ান বলিল—এখানে এই নিয়ম । না নিলে কণে’ল চটতে পারেন । o সতীশ রাগ করিয়া বলিল-চটে আমার কি করবেন তিনি ? চাকরি নেবেন ? নিন— আমি এখনি ইস্তফা দিতে রাজী আছি, টাকা কখনই নিতে পারবো না । 受 গোলমাল শনিয়া রাণা বাহাদর নিজে আসিয়া ব্যাপারটা অন্যভাবে মিটাইয়া দিলেন । চাকুরি যাওয়া তো দরের কথা, সেই মাসেই সতাঁশের দশ টাকা বেতন বধি হইয়াছিল।... গত পনেরো বৎসর ধরিয়া সতীশ তো অনবরত সকলের কাছেই কাশী আর নেপালের গল্প করিয়া আসিতেছে। তাহার সমবয়সী লোকদের কাছে, দেশের বন্ধুদের কাছে, রোগী ও রোগীদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে—কিন্তু সে শধ্যে বাহাদরি লইবার জন্য, সে কত দেশ বেড়াইয়া কত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিয়াছে, কত বড়মানুষী করিয়াছে, কত বড় বড় লোকের সমাজে মিশিয়াছে—তাহা সাড়ম্বরে জাহির করিবার জন্য । এবার কিন্তু এ সব জীবনের সমতি একটা অস্পষ্ট বেদনার মত তাহার মনে আসিয়া উদয় হইতে লাগিল—কি যেন একটা জিনিস চিরকালের জন্য হারাইয়া গিয়াছে, আর কোনো দিন তাহার সাক্ষাৎ মিলিবে না, সতীশের এই এত বড় পসারের বিনিময়েও না, সঞ্চিত অথের বিনিময়েও না, কোনো কিছুতেই না । এ গ্রামের জীবনও ক্ৰমে নিরানন্দ হইয়া উঠিতে লাগিল । সতীশ গ্রামে আসিয়া ও গ্রামে যে কয়টি সখের সখী, দুঃখের দুঃখী প্রবীণ আত্মীয়-সহানীয় লোক পাইয়াছিল, এ পাড়ার অবিকা রায়, শ্যামাকান্ত গাঙ্গলী—ও পাড়ার বন্ধ গোঁসাই মশায়—এরা একে একে মারা গেলেন । আষাঢ় মাসের শেষে যাদরাম সাকরার রোগশয্যা-পাবে সতীশের ডাক পড়িল । যাদরামের বয়স হইয়াছিল প্রায় পাঁচাত্তর বৎসরের কাছাকাছি, গত দশ বৎসর অথাভাব ও দারিদ্যের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া যাদরামের স্বাস্হ্য একেবারে ভাঙিয়া পড়িয়াছিল। সতীশ বঝিল এই বয়সে, তার উপর ডবল নিউমোনিয়া রোগ, যাদরামও বিছানা ছাড়িয়া আর উঠিবে না। যাদরাম নিজেও সেটা খুব ভাল করিয়াই বঝিয়াছিল—ক্ষীণ কণ্ঠে বলিল, মখ ষ্যে মশায়, ওষধ আর কি দেবেন, পায়ের ধলো দিন। একটা কথা বলি, নাতিটার উপায় করতে পারলাম না, দু’দটো ছেলে মারা গেল—ওইটুকু বংশের মধ্যে শিবরান্ত্রির সলতে, ওকে আপনার চরণে দিয়ে গেলাম। কপাউডারীতে ভত্তি করে নেবেন আপনার ডাক্তার