পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

808 বিভূতি-রচনাবলী কেহই লক্ষ্য করে নাই, হঠাৎ আন্না উঠানের দিকে ভীত চোখে চাহিয়া বলিল—জ্যাঠাইমা কোথায় বেরিয়ে যাচ্ছে যে !" —ধর, ধর, মা, ধর্য-নিয়ে আয় । নাঃ, জালালে বাপ । 尊 আন্না দৌড়িয়া উঠিয়া গিয়া শীণদেহ, রক্ষকেশ, বকুনি-রত জ্যাঠাইমার হাতখানা খপ করিয়া ধরিয়া ফেলিয়া বলিল—এসো জ্যাঠাইমা, কোথায় যাচ্ছ, এসো--- —একেবারে ঘরের মধ্যে নিয়ে যা, মা । নাঃ, আমার হয়েচে যতো বিপদ ; তা ইয়ে আন্না কলায়ের ডাল রাঁধবো এখন মা, আজ দুপুরে আমার এখানে দুটো খাস এখন । পরের বছর হইতে বিনয়ের পসার একেবারেই কমিয়া গেল। দশ-বারো বছর আগের ব্যাপার আর ছিল না, এখন এক মহকুমা-টাউনের উপর তিনজন এম-বি। পানদোষ ও উচ্ছsখলতার জন্য ভদ্র-গহসেহর বাড়িতে তাহাকে কেহ আজকাল ডাকে না, তা ছাড়া রোগীরা আসিয়াও ডাক্তারের দেখা পায় না । তাহার পর দেখা দিল পথিবী-ব্যাপী মন্দা । পাটের বাজার একেবারে পড়িয়া গেল । রোগ হইলেও আর লোকে ডাণ্ডার দেখাইতে পারে না । বিনয় মহা অথ-কন্টের মধ্যে পড়িল । সে লোক খারাপ নয়, হাতে পয়সা থাকিলে যতক্ষণ খরচ করিতে না পারে, ততক্ষণ তাহার মনে শান্তি হয় না, উদার দিলদরিয়া মেজাজের মানুষ । বাবাকে সে ইচ্ছা করিয়া যে অবহেলা করে তা নয়, বাবা এত ঘনিষ্ঠ, এত সুপরিচিত ষে, তাহার সম্বন্ধে সে কোনো খেয়ালই করে না । সতীশ মুখ ফুটিয়া কখনো ছেলেকে জানায়ও নাই তাহার অসচ্ছলতার কথা, পাছে ছেলেকে বিব্রত হইতে হয় । এই অবস্হায় একদিন বিনয় পিতার সহিত দেখা করিতে আসিল । সতীশ অপ্রত্যাশিত ভাবে ছেলেকে দেখিয়া মহাব্যস্ত হইয়া উঠিল । সারা বাড়ির মধ্যে একখানা চেয়ার কি টুল পয্যন্ত নাই, ছেলেকে বসিতে দেয় কিসে যে ! বিনয় বলিল—থাক বাবা, থাক, আমি এই যে বেশ বসেছি । সতীশ ব্যস্তসরে বলিল'উঃ, ঘেমে একেবারে- দড়িাও একটু চা করে আনি । ভাড়াটে মোটরে এলে কেন ? তোমার গাড়ি কোথায় ? —গাড়ি আছে, ইঞ্জিন খারাপ হয়ে গেছে, মেরামতের জন্য একমুঠো টাকা দরকার, হাতে পয়সা কোথায় ? কাজেই গাড়ি গ্যারেজে পড়ে। —পটল কোথায় ? —কলকাতাতেই আছে । ওর পড়াশনার যে, কি করি ? মেসে তো একগাদা টাকা খরচ, তিনমাসের মেসের দেনা বাকী। কলেজের মাইনেও দু'মাস পাঠাতে পারি নি। পিতা-পত্রে অনেকক্ষণ পরামর্শ হইল। তিন জায়গার খরচ বিনয় তো আর পারে না। দেশের বাড়ি, টাউনের বাসা এবং দিব্যেন্দর মেস ও কলেজের খরচ । কি এখন করা যায় ? বিশেষ কিছরই মীমাংসা হইল না। উঠিবার সময় বিনয় কুষ্ঠিত ভাবে বাবাকে দটি টাকা দিতে গেল। ছেলের শক ও চিন্তাকুল মুখ দেখিয়া বন্ধ টাকা দটি প্রাণ ধরিয়া লইতে পারিল না । বলিল—রেখে দাও এখন, সোমবার দস্তিঘাটা থেকে ডাক এসেছিল ; কিছ পেয়েচি, তোমার মোটরের ভাড়াও তো লাগবে আবার ? গ্রামের একটি ছেলে রেলে কাজ করিত, ছয়টি লইয়া দেশে আসিয়া প্রায়ই সন্ধ্যাবেলা সতীশের কাছে গলপ করিতে আসিত । একদিন সতীশ বলিল—দ্যাখো উমাপদ, ভাবাঁচ কি জানো ? তোমার জ্যাঠাইমাকে ওর বাপের বাড়িতে রেখে আমি কাশী চলে যাই । একজন লোকের কাশীতে বেশ চলবে। নইলে এদিকে সবই তো শনলে—বিনয় বড় মশকিলে