পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যালাবদল 8Oq কাঁপিয়ে দাৰ্জিলিং মেল বেরিরে গেল এবং সে শব্দ থামতে না থামতে ডাউন প্ল্যাটফমে' একখানা প্যাসেঞ্জার ট্রেন সশব্দে এসে দাঁড়ালো । একটু পরে দেখি যে প্ল্যাটফর্মে" একটা গোলযোগ উঠেচে । অনেক লোক ওভারব্রিজের ওপর দিয়ে ডাউন প্ল্যাটফমে’র দিকে ছুটে যাচ্ছে—সবাই যেন কি বলচে—ট্রেনটা ছাড়তেও খানিকটা দেরি হোল । তারপরে ট্ৰেনখানা ছেড়ে দিলে দেখলাম প্লাটফর্মের এক জায়গায় অনেক লোকের ভিড়, গোল হয়ে ঘিরে দাঁড়িয়ে সবাই কি যেন দেখচে । ভিড় ঠেলে ঢুকতে না পেরে একজনকে জিজ্ঞেস কত্তে সে যা বল্লে তার মাম”এই যে মশিদাবাদের ওদিক থেকে একটি ভদ্রলোক সপরিবারে এইখানে গাড়ি বদলাবার জন্যে নেমেছিলেন পশ্চিমের লাইনে ষাবার জন্যে, তাঁর স্ত্রী প্ল্যাটফর্মে" নেমেই হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে অজ্ঞান নয়, তিনি মারাই গেছেন। লোকের ভিড় পলিস এসে সরিয়ে দিল । তারপর একটা অতি করণ দশ্য চোখে পড়ল। গোটা দুই স্টীলের তোরঙ্গ, একটা ঝুড়ি, গোটা চারেক ছোট বড় প:টুলি—একটা মানকচু ও এক নাগরী খেজুরের গড় এদিক-ওদিকে অগোছালো ভাবে ছড়ানো—গহপহালীর এই দ্রব্যাদির মধ্যে একটি পাড়াগাঁয়ের রোয়ের মৃতদেহ, রং ফস"া, বয়স কুড়ি-বাইশের বেশী নয়। বেীটির মাথার কাছে একটি মধ্যবয়সী ভদ্রলোক, গায়ে কালো বকেখোলা কোট—কাঁধে একখানা জমকালোপাড় ও কলকাদার সস্তা আলোয়ান, পায়ে ডাবি জয়তো পাড়াগাঁয়ের অন্ধশিক্ষিত ভদ্রলোকের পোশাক । তাঁর কোলে একটি বছর আড়াই বয়সের ছোট ছেলে— মায়ের মত ফসর্ণ, চুলগুলি কোঁকড়া কোঁকড়া, হাতে কি একটা নিয়ে নাড়াচাড়া করচে ও একত্র করায় বিস্ময়ের দটিতে সমাগত লোকের ভিড়ের দিকে চাইচে । মায়ের মতদেহের চেয়েও তার কাছে বেশী কৌতুহলের বিষয় হয়েচে চারিধারে এই গোলমাল ও আদষ্টপাব' লোকের ভিড় । একটু পরে সাহেব স্টেশন মাস্টার ও তাঁর সঙ্গে একজন ভদ্রলোক এলেন। বাবতে দেরি হোল না যে ভদ্রলোকটি ডাঞ্জার, তিনি বৌটির নাড়ী দেখলেন, চোখ দেখলেন, স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে কি কথা হোল তাঁর, স্বামীটির সঙ্গেও কি যেন বললেন তারপর তাঁরা চলে গেলেন । মৃত্যুই তা হোলে ঠিক !” কৌতুহলী জনতা আরও খানিকক্ষণ তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে রইল—মতা পল্লী-বধ, তার শোকগুধ স্বামী, অবোধ ক্ষ-দ্র পুত্র ও তাদের ঘর-গহসহালীর সাধের দ্রব্যাদি । তারপর একে একে যে যার কাজে চলে গেল—আরও"নতুন দল এল—তারাও খানিকটা থেকে নিজেদের মধ্যে কি বলাবাল কত্বে কত্তে ফিরে গেল । এবার এল রেলওয়ে পলিশের লোক, তারা খানিকক্ষণ ধরে ভদলোকটিকে কি সব প্রশ্ন কলে, নোটবুকে কি টুকে নিলে—তারপর তারাও চলে গেল —কেবল একজন কনস্টেবল একটু দরে দাঁড়িয়ে রৈল। এ সবে কাটল প্রায় এক ঘণ্টা । তখন সrেধ্য প্রায় হয়-হয় । স্টেশনের আলো জৰালিয়েছে, আপ ডাউন দুদিকের সিগন্যালে লাল সবুজ বাতির সারি জলেচে ; কিন্তু তখনও অন্ধকার হয়নি, সিগন্যালের পাখা তখনও পণ্ট দেখা যাচ্ছিল, আপ লাইনের হোম স্টাটার নামানো —বোধ হয় কোনো ট্রেন আসচে । যা হবার তা তো হয়ে গিয়েচে, এখন সৎকারের ব্যবস্হা ! এ ধরনের প্রশ্ন কেউ ভদ্রলোকটিকেও কলে না—তিনিও কাউকে কলেন না । এদিকে ভিড় ক্রমেই পাতলা হয়ে এল —অনেকেই আপ ট্রেনের যাত্রী—কলকাতার দিকে দখোনা সিগন্যাল নামানো দেখে তারা ওভারব্লিজ দিয়ে উঠি-পড়ি অধসহায় ছুটলো আপ প্ল্যাটফমে’র দিকে । এটা যে থন ট্রেন