পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যালাবদল 80్స এস সোনামণি আহা ! মাণিক আমার— খোকা ব্যাপারটা কিছুই বাবতে পারে নি, বরং এত লোক তাকে কোলে নিয়ে নাচানাচি করাতে সে খাব খুশি । একটু পরে আমরা কজনে মতদেহ বহন করে শাশানের দিকে রওনা হলাম। আমি, পাউরটির ভেন্ডার, টিকিট বাব ও পাউরটির ভেন্ডারের একজন বন্ধ । টিকিট বাবর এক ভাইপো আমাদের সম্মিলিত গরম কোট ও আলোয়ানের প:টুলি হাতে ঝুলিয়ে পিছনে পিছনে . আসছিল। সকলের পিছনে ভদ্রলোকটি ; তাঁকে আমরা অবশ্য শব বহন কতে দিই নি । ভদ্রলোকের জিনিসপত্র মন্তদেহের সঙ্গে ছোঁয়াছুয়ি হয়েচে, কারর বাসায় জায়গা দেবে না, সেগুলি স্টেশনে ক্লোকরমে জমা দেওয়া হোল । নৈহাটির বাজার যেখানে প্রায় শেষ হয়েচে, সেখানটায় এসে ভদ্রলোক বল্লেন—একটা ভুল হয়ে গিয়েছে, দাঁড়ান আমি সিদর কিনে আনি, ওর কপালে দিয়ে দিতে হবে। শৰ্মশানঘাট নৈহাটি স্টেশন থেকে প্রায় তিন পোয়া পথ দরে । বাজার ছাড়িয়ে দক্ষিণে মাঠের মাঝখান দিয়ে পথ, সমুখে জ্যোৎস্নারাত, সন্ধ্যার পরে মেঘশন্য আকাশে ফুটফুটে চাঁদের আলো ফুটেচে, বনকনে হাড়কপিানো শীত, মাঝে মাঝে গেীষ রাত্রির ঠান্ডা হাওয়া বাধাশন্য প্রান্তরে আমাদের শিরার উপশিরার রক্ত জমিয়ে দিচ্চে, তার ওপরে মুশকিল— আমন ধানের জমির ওপর দিয়ে পথ—ধান কাটা হয়ে গিয়েচে, শীতের ঘায়ে ধানের গোড়াগলো পায়ে যেন কুশাকুরের মত বিধিছিল । হঠাৎ পিছন থেকে ভদ্রলোক মেয়েমান,ষের মত আকুল সরে কোঁদে উঠলেন । আমরা অবাক হয়ে ফিরে চাইলম । টিকিটবাব বল্লেন—ওকি মশাই ওকি, অত ইয়ে হোলে চলবে কেন—ছিঃ—আসনে এগিয়ে আসনে । পরষমানুষকে অমন অসহায় ভাবে কখনো কাঁদতে শুনি নি, তখন বয়েস ছিল অলপ, লোকটির কান্না শনে যেন আমার চোখও অগ্রসেজল হয়ে উঠল । তারপর তিনি চুপ করলেন, আমরা সবাই আবার চুপচাপ চলতে লাগলম । শাশানে যখন পৌছানো গেল, রাত তথন সাড়ে সাতটা হবে । মতদেহ চিতায় উঠানো হোল। সেই সময় সব প্রথম লক্ষ্য কলমি বধটির দৃপায়ে আলতা—কোথাও বেরতে হলে গ্রামের মেয়েরা পায়ে আলতা পরে থাকে জানতাম, মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেল, মেয়েটি কি ভেবেছিল আজ কোন যাত্রার জন্যে তাকে দপুরে আলতা পরতে হয়েছিল ? কপালে খানিকটা সিদর—ভদ্রলোকটি নিজেই দিয়েছিলেন—বধটিকে সাবপ্রথম এই ভাল কয়ে দেখে মনে হল সত্যই সুন্দরী । টানা টানা জোড়া ভুর, পাণ্ডুর বণের গৌর মুখ, অনিচ্ছদ্য দেহকান্তি । মৃত্যুতেও যেন মনে হয় নি, মুখের চেহারা দেখে মনে হয় যেন ঘুমিয়ে পড়েচে । মনে হচ্ছে গোলমালে এখনি ঘুম ভেঙে উঠে পড়বে বুঝি । জলন্ত চিতার একটু দরে সেই পাউরটি ভেন্ডার ও তার বন্ধ ৷ পাউরটি ভেন্ডার আমার দিকে চেয়ে দাঁত বার করে হেসে বল্লে—যাক, আজ শীতের রাতটা কাটবে ভালো— কি বলেন ? লাল চক্কোত্তির পরোটার দোকানে ভাজতে দিয়ে এসেছি । আমাদের শশী আচাযিাকে বসিয়ে রেখে এসেচি, রাত বারোটার মধ্যে এখানকার কাজ শেষ হয়ে যাবে—গরম গরম বেশ তার বন্ধ বল্লে—মাংস কতটা ? কুলবে তো ? —বাঃ, জোনাজাৎ দেড়পোয়া হিসেব করে দিয়ে এসেচি—মোট তিন সের—কজন আছি আমরা, তুমি, আমি, যতীনবাব, যতীনবাবরে ভাইপো লাল, শশী আচাযিা, ( আমার দিকে আঙ্গল দিয়ে ) এই বাঘ