পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যালাবদল 8১১ বিনোদ এক পয়সা সাহায্য কত্তে পারবে না। ভ্ৰাতৃদ্বিতীয়াতে বিনোদের বোঁ ওর কাছে টাকা চেয়ে পাঠিয়েছিল সে দুটো টাকা বাড়িতে মনিঅডার করে দ্যায়। —সোজা লিখে দিলাম দ’টাকার বেশী হবে না—এতে ভাইদ্বতীয়েই করো— বিনোদের বন্ধটি বল্লে—আর বোনদতীয়েই করো—হি-হি—কি বলো ? বিনোদ দীপাটি দাঁত বার করে হেসে বল্লে—হা, হা—তাই বলি, বিয়ে কলেই হয় না। তুলো দেখতে নরম, ধনতে লবেজান—বিয়ে করে এই বাজারে সংসারটি চালানো—সে বড় ঠ্যালা।••• 酸 রাত অনেক বেশী—বোধ হয় এগারোটা । হালিশহর জন্ট মিলের আলোর সারি নিবে গিয়েচে । প্রকাণ্ড একটা অশরীরী পাখী যেন জ্যোতিমীয় পাখা মেলে গঙ্গার ওপর উড়ে বেড়াচ্ছে, এক একবার সেটা যেন জলের কাছাকাছি আসচে, স্নিগ্ধ জ্যোতির বিশাল প্রতিবিম্ব ফুটে উঠচে গঙ্গার বকে—আবার যখন দরে চলে যাচ্ছে, তখন অলপ সময়ের জন্য সে জায়গাটা অন্ধকার-আবার আলো ফুটে উঠল, আবার অন্ধকার । এতক্ষণ ভদ্রলোকটি চিতার শিয়রের একটু দরে চুপ করে বসে ছিলেন । হঠাৎ তিনি আমার পাশে উঠে এলেন । বল্লেন-থোকা বোধ হয় এতক্ষণ ঘুমিয়ে পড়েচে—কি বলেন ? —হ’্যা এতক্ষণ নিশ্চয়ই । খানিকটা চুপ করে থেকে বল্লেন—কাল সকালে নৈহাটিতে দুধ পাওয়া যাবে না মশাই ? —অভাব কি ? সেজন্যে ভাববেন না । সে যোগাড় হয়ে যাবে। একটু চুপ করে থেকে আমি জিজ্ঞেস করলাম—আপনারা কোথায় যেতেন ? পশ্চিমে কোথাও বুঝি ? ভদ্রলোক বল্লেন—পশ্চিমে বেশী দরে নয়—আমি যাচ্ছিলাম আসানসোলে । সেখানে চাকরি করি। অনেক দিন চাকরি খুজে বেড়িয়ে বেড়িয়ে শেষে ওইটি জটিয়েছিলাম । তা চাকরিও করাঁচ আজ এক বছর । এতদিন রেলবাবদের মেসে খেতাম, আশ্বিন মাসে মেসে খেয়ে খেয়ে ডিসপেপসিয়া গোছের দাঁড়ালো। এত ঝাল দ্যায় মশাই, অত ঝাল খাওয়া আমার অভ্যাস নেই । আমার সন্ত্রী বল্লে—ষা পাও, একটা বাসা করো, আমাদের দুজনের খবে চলে যাবে। তোমারও কণ্ট থাকবে না, আমারও এখানে তোমায় বিদেশে ফেলে থাকতে ভাল লাগে না । তাই এবার বাসা করে বড়দিনের ছয়টিতে একে আনতে যাই শ্বশুরবাড়িতে— সেখানেই বিয়ের পর আজ চার পাঁচ বছর রেখেছিলাম। দেশে আমার বাড়ি-ঘর সবই আছে, কিন্ত সেখানে মশাই শরিকৗ গোলমাল। সেখানে ওকে রাখার অনেক অসুবিধে—বার-দই নিয়ে গিয়েছিলাম, তাতেই জানি । " আমি বল্লম—ও'র কি কোনো অসুখ ছিল—হঠাৎ এমন— —অসখের কথা তো কিছুই জানি নে । তবে মাঝে মাঝে বকে ধড়ফড় করতো বলতে শনেচি “অসুখটা আমার বাড়িতে যখন আনি আর-বছর, তখন বড় বেড়েছিল। আমার সে সময় নেই চাকরি, হাতে নেই পয়সা, আর এদিকে বাড়িতে আমার জাঠতুতো ভাইয়ের স্ত্রী— তাঁর যৎপরোনাস্তি দ্ব্যবহার । এই সবে সংসারে শান্তি তো ছিল না একদণ্ড -ও আবার ছিল একটু ভালমানষে মতো—ওর ওপরই যত ঝক্কি । খানিকটা আপন মনেই যেন বলতে লাগলেন—কালও বিকেলে কত কথা বলেচে । বাসার কথা আমায় কত জিজ্ঞেস কলে । বলছিল, সেখানে পাতকুয়ো না পক্সের । আমি বল্লাম— দুই-ই আছে। তবে পুকুরে রেলের কুলী চাপরাসীরা নায় আর কাপড় কাচে—তার চেয়ে তুমি বাসার পাতকুয়ার জলেই নেও । খাবার জন্যে রেলের বাবদের কোয়াটারে টিউবওয়েল আছে—মিকটেই—সেখান থেকে জল আনাবো । বাসায় পোপে গাছ আছে শুনে কত খুশি !