পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

888 বিভূতি-রচনাবলী ফুলের গন্ধও মাঝে মাঝে পাচ্চি । বসিরহাটে নামলম বিকেলবেলা, প্রসাদের সঙ্গে বাঁধানো জেটির ঘাটে গিয়ে বসে রাঙা রোদ মাখানো ইছামতীর ওপারের দশ্যটি দেখলাম। এই সহানটিতে দাঁড়িয়ে একদিন গৌরী বলেছিল—“গাড়িতে কেমন কলের গান হচ্ছিল, শনছিলাম মজা করে । সে কথাটি বললাম প্রসাদকে। রাত্রে অনেকক্ষণ পয্যন্ত দিদির সঙ্গে গল্প করলাম। পরদিন সকালে অথাৎ শনিবার কবি ভুজঙ্গভূষণ রায় চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। বয়স চৌষট্টি-পয়ষট্টি বছর হয়েচে, কিন্ত মাথায় একটা চুলও পাকে নি, আমায় দখানা বই দিলেন, চা খাওয়ালেন। গীতার কাব্যানবাদ করচেন পড়ে শোনালেন, বেশ লোক ॥ " এই দিন বিকেলের ট্রেনে ফিরলমে কলকাতায়, ওপথে গাছপালার সৌন্দয্য তেমন নয়, একটি মেয়ে ট্রেনে কেমন গান করে শোনালে । সন্ধ্যার সময় নীরোদবাবর বাড়িতে সাহিত্য সেবক সমিতির অধিবেশনে যেতে যেতে নিউজনি অকল্যান্ড স্কোয়ারে বসে কি অপবে* আনন্দ পেলাম, দু-একটা নক্ষত্রের দিকে চেয়ে । এ আমার অতি সপরিচিত পুরাতন আনন্দ । ছেলেবেলা থেকে পেয়ে আসচি, এতে অবিশ্যি আশ্চয্যের কথা কিছু নেই। অনেকে আমার এ আনন্দটা বোঝে না, কিন্ত তাতে কিই বা যায় আসে—আনন্দের উপলব্ধিটুকু তো আর মিথ্যে নয়। a বাইরে কোথাও ভ্রমণের একটা পিপাসা আবার জেগে উঠেচে । ভাবচি আফ্রিকা যাব, শম্ভু আজ এসেছিল, সে বললে, তার কে একজন আত্মীয় ম্যাকিনন ম্যাকেঞ্জির আপিসে কাজ করে, তারই সাহায্যে যদি কিছদ হয় দেখবে ও চেষ্টা করে। আজ সারাদিন স্কুলেও ওই কথাই ভেবেচি, বেশীদর কোথাও যেতে চাই নে ৷ ~কিস্ত জগতের খানিকটা অন্ততঃ দেখতে চাই । সেদিন P. E. N. Club-এ যে মধ্যাহ ভোজ হোল বোটানিক্যাল গাডেনে—সেখানে অমিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ হোল । মেয়েটি খুব বৃদ্ধিমতী, অক্সফোড" থেকে এম-এ পাস করে এসেচে । পরের বহম্পতিবারে ইদের ছটিতে বাড়ি এলাম। আসার উদ্দেশ্য এই ফাগানে বাংলার বনে, মাঠে অজস্র ঘে"টুফুল ফোটে—অনেকদিন ঘেটুফুলের মেলা দেখিনি, তাই দেখব । তাই আজ সকালে এঞ্জিনিয়ার ও সাবডেপুটীবাবর সঙ্গে মোটরে বেড়াতে গেলাম চৌবেড়ে । সেখানে ওদের ইউনিয়ন বোডের এক কাজ ছিল, মিটিয়ে সবাই মিলে যাওয়া হোল দীনবন্ধ মিত্রের বাড়ি । ভাঙা সেকেলে পরোনো কোঠা, বট অশ্বখের গাছ গজিয়েচে—তাঁর জন্মস্হান দেখলাম—দীনবন্ধ মিত্রের এক জ্ঞাতি ভাইপো বাড়ির পিছনে একটা সজনে তলা দেখিয়ে বললেন—ঐ গাছতলায় তখনকার আমলে অতুিড় ঘর ছিল—ওইখানে দীনবন্ধু কাকা জন্মেছিলেন। আমি ও মনোরঞ্জনবাব সাকেলি অফিসার স্হানটির্তে প্রণাম করলাম। তারপর ঘে"টুফুলের বন দেখতে দেখতে মাঠে মাঠে অনেকগুলো চাষাদের গ্রাম ঘরে বেড়ানো গেল— চৌবেড়ে, নহাটা, সনেকপর, দমদমা, মামদপুর ইত্যাদি । বেলা একটার সময় এলাম কালীপদ চক্লবত্তীর বাড়ি । সেখানে কালীপদ খুব খাতির করলে । ওখান থেকে বার হয়ে আমি নামলমে চালকী। সেখানে খাওয়া দাওয়া করলাম। চালকীর পিছনের মাঠে কি ঘেটুবনের শোভা । দিদিদের বাড়ি বসে ঘটার বিয়ের বড়মানষি গল্প শুনলাম। সন্ধ্যার কিছ আগে বনগাঁয়ে গিয়ে খয়রামারির মাঠে ঘেটুফুলের বনের মধ্যে একটা শুকনো গাছের গাড়ির ওপর কতক্ষণ বসে রইলাম । দরে গাছের ফাঁকে চাঁদ উঠেচে-মাথার ওপর দু-চারটা তারা। মনের কি অপদেব আনন্দ । কাছে ছিল একখানা বই—বেদান্ত দশনের ব্যাখ্যা। সেখানে ঐ রকম স্থানে ফুটন্ত ঘেটুফুলের বনের মধ্যে বসে পড়ে যেন একটা মসল