পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/৪৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Tk উমি্মখের 88& অনুভূতি নিয়ে ফিরলাম। ঘোষপাড়ার দোলে এলমে অনেকদিন পরে । আজ সকালে বনগী থেকে নটার ট্রেনে বার হয়ে রানাঘাটে সাড়ে দশটায় শাস্তিপরে লোকাল ধরলাম, দোলের মেলায় আসতে হোল বেলা সাড়ে বারোটা । ছোট মাসীমা খেয়েদেয়ে ওপরে শয়ে ঘুমিয়েছিলেন, আমি আসতে চা করে দিলেন। দর্পরের রোদে বাঁশবাগান আমার বড় ভাল লাগে—আর এই সব বাঁশরনের সঙ্গে আমার আশৈশব সন্বন্ধ। বিকালে একটু ঘুমিয়ে উঠে মেলায় গিয়ে একটি বড় সাংঘাতিক ঘটনা চোখের ওপর ঘটতে দেখলাম। একজন গন্ডা জনৈক যাত্রীর পকেট কেটেছিল, পাশেই ছিল একজন হিন্দুস্হানী ভলাণ্টিয়ার, সে যেমন ধরতে গিয়েচে, আর গণডাটি ওকে মেরে দিয়েচে ছরি। আমি যখন গেলাম, তখন আহত লোকটাকে ওদের তাঁবুতে এনে শুইয়েচে, খব লোকের ভিড়। একটু পরেই সে মারা গেল । ওদিকে সেই গডোটিকেও পলিশে ধরে ধরে ফেলেচে—তাকেও লোকে মেরে আধ-মরা করেছে । মেলাসন্ধ লোক সম্প্রস্ত—সবাই বলচে, এমন কাণ্ড কেউ কখনও এমন সহানে ঘটতে দেখে নি ! আমি আরও খানিকটা এদিক ওদিক ঘরে ফিরে চলে এলমে । রায়বাড়ির পাশের একটা ঘন বনের মধ্যের পথ দিয়ে ঢুকে একটা শুকনো পুকুরের পাড়ে ঘাসের ওপর গিয়ে বসলাম । ফিরে যখন আসচি তখন একটা শিমল গাছের বাঁকা ডালপালার পেছনে পণচন্দ্র উঠচে—স্থানটি আফ্রিকা হতে পারতো, কি নিজজন, আর কি ভীষণ জঙ্গল—বাংলাদেশের গ্রামে এমন জঙ্গল আছে, না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে ? কি মহিমময় দশ্য সেই উদীয়মান পণচন্দের, সেই ঘন জঙ্গলের মধ্যে, অাঁকাবাঁকা শিমল গাছের ফাঁকে । আজ আমার ঘোষপাড়ার দোলে বেড়াতে আসা সাথ’ক হোল মনে হচ্চে শধ্যে এই দশ্যটা দেখবার সংযোগ পেলাম বলে । সেদিনের সেই খয়রামারির মাঠে শুকনো ডালের ওপর বসে থাকা ঘেটুবনের মধ্যে, আর আজকার কামারপুকুরের পাড়ের জঙ্গলে এই পাণচন্দ্রের উদয়—এবারের দোলের ছয়টির মধ্যে এই দটো ঘটনা জীবনের অনেক মল্যবান অভিজ্ঞতার মধ্যে আসন পেতে পারে । তারপর মাসীমা ছাদে বসে চা করে দিলেন, লুচি ভাজলেন, আমি কাছে বসে গলপ করলাম। অনেকদিন আগের কথা তুললেন, আমি, গৌরী, মণি ও মাসীমা ছাদে বসে কত তাস খেলতুম । আমি তো ভুলেই গেছলাম, এতদিন পরে আবার সেকথা মনে এল । সপ্রভার কথা জিজ্ঞেস করলেন। এর মধ্যে একদিন কাঞ্চজন পাকে একটা গাছে হেলান দিয়ে বসে জনৈক জাপানী চোরের আত্মকাহিনী পড়ছিলাম। বইখানাতে আছে, সে নিজে ভয়ানক বদমাইশ থেকে যীশুখন্টের বাণীর প্রভাবে কেমন করে হঠাৎ ভাল লোক হয়ে পড়ল । আমার ডাইনে এক গাছে ফুটেচে চেরী ফুল, সামনে লাটসাহেবের বাড়ির কম্পাউণ্ডে সারি সারি দেওদার গাছে নতুন কাঁচ পাতা গজিয়েচে—সেদিন ভুলে গেলাম যে কলকাতায় বসে আছি—ট্রাম, বাস আসচে যাচ্ছে, সে যেন আমার চোখেই লাগে না—আমি যেন বহন্দরে হিমালয়ের কোন অরণ্যে বসে আছি —সে গভীর হিমারণ্যের নিস্তব্ধতা শধে ভঙ্গ করচে তুষার নদীমুক্ত স্রোতধারা আর দেওদারের শাখা-প্রশাখার মধ্যে বায়রে স্বনন । তারপরেই একদিন গেলাম রাজপরে ৷ সন্ধ্যার সময় গিয়ে মাঠের ধারে বসলাম, মাথার ওপরে এক আধটা নক্ষত্র উঠেচে, হনুহ দক্ষিণ হাওয়া বইচে, সামনে একটা বটগাছ, দরবিসপী" দিকচক্রবাল সন্ধ্যার অন্ধকারে অস্পষ্ট দেখাচ্চে। আমার মনে কেমন একটা আনন্দ হোল–গত শনিবারে শালি* টেম্পলের ছবি দেখে যেমন আনন্দ পেয়েছিলাম, এ যেন তার চেয়েও বেশী—যদিও শালি'কে আমার খুবই ভাল লাগে এবং ঐ ছোট্ট মেয়েটির ছবি